Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হজযাত্রী পরিবহনে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বিমানের ১০টি হজ ফ্লাইট বাতিল : এজেন্টরা সিট ব্যবহার করছে না

প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : বিমানের হজযাত্রী পরিবহনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হজ এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারীরা যথা সময়ে বিমানের সিট ব্যবহার না করায় গত ৪ আগস্ট থেকে এ যাবত বিমানের ১০টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এতে বিমান আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। হজযাত্রী পরিবহনের বিমানের ১০টি সøট বাতিল হওয়ায় হজ ফ্লাইটের শেষের দিকে হজযাত্রী পরিবহনের মারাত্মক সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন হাব নেতৃবৃন্দ। বিমান কর্তৃপক্ষ বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হজযাত্রীদের সিট বুকিং দিয়ে হজ টিকিট সংগ্রহের জন্য হজ এজেন্সিগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। অন্যথায় পরিবহন সংকটের দরুন হজযাত্রীগণ হজে যেতে না পারলে দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলোকে বহন করতে হবে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬৫ হাজার হজ ভিসা ইস্যু করেছেন। তার পরেও হজ এজেন্সিগুলো কেন বিমানের হজ টিকিট ক্রয় না করে এড়িয়ে চলছে তা’ বোধগম্য নয়। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার আজ দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের বিমানের হজ ফ্লাইটের (বিজি-৫০৪৭) একটি হজ টিকিটও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আজ ৩১৯ সিটের এ হজ ফ্লাইটটি বাতিল হয়ে থাকলে এ নিয়ে হজ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০-এ। বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রিয়াদ আল-হোদাইফ বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ হজযাত্রী পরিবহনের সহায়তা চাইলে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স সকল হজযাত্রীদের সউদী আরবে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিবে। তবে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ২/১ দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে প্রস্তাব দিতে হবে। গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলালের সাথে এক বৈঠকে সাউদিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার রিয়াদ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল বলেন, বিমানের ভ্রান্ত নীতির কারণে বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল বা খালি যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিমান হজ ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে হজ টিকিট বিক্রি করে। বিমান তার নিজস্ব এজেন্টদের মধ্যে আগ থেকেই সিট বণ্টন করলে হজ ফ্লাইট নিয়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো না। বিমান কর্তৃপক্ষ এখনই আরো অতিরিক্ত ১০টি হজ ফ্লাইটের সøট বরাদ্দ পাওয়ার দ্রুত উদ্যোগ না নিলে হজযাত্রী পরিবহনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। হজনীতি অনুযায়ী চলতি বছর বিমানের ৫০ হাজার ৫শ’ আর সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৫০ হাজার ৫শ’ হজযাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। এদিকে, সরকারী অব্যবহৃত কোটার ৪৬শ’ হজযাত্রীর কোটা বেসরকারী এজেন্সিগুলোর মধ্যে সিরিয়াল অনুযায়ী বণ্টন করা হলেও ধর্মমন্ত্রণালয় গতকাল পর্যন্ত এসব হজযাত্রীর মুয়াল্লেম ফি সউদী আরবে পাঠায়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির মালিকরা মক্কা-মদিনায় এসব হজযাত্রীর বাড়ীভাড়া করতে পারছে না। তারা বাড়ী ভাড়ার বারকোড নিয়ে দেশে আসতে পারছে না। এতেও বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল বা খালি যাওয়ার একটি কারণ। আটাব সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব ইনকিলাবকে বলেন, হাব ও ধর্মমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণেই বিমানের হজ ফ্লাইট নিয়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, হাবের চরম ব্যর্থতার দরুন বিমানের হজ ফ্লাইট দফায় দফায় বাতিল হচ্ছে। হজযাত্রী পরিবহনের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য আটাব সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হজ ফ্লাইট সংকট নিরসনের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য হজ এজেন্সিতে ওয়েবসাইটে ফ্লাইট সিডিউল ও টিকিটের অবস্থান প্রকাশ করতে বিমান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিটি হজ ফ্লাইটে ৩১৯ জনের পরিবর্তে ৪১৯ জনের একোমেডশন করা এবং ভ্রমণের দিনের ৭২ ঘণ্টা আগে ভিসা ও বিমান টিকিট নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩১৯ টি হজ এজেন্সির বিপরীতে ৬৮ হাজার হজ ভিসা প্রসেস করা হয়েছে। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নাসের বিমানের ১০টি হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সকল হজ এজেন্সিগুলোকে অবিলম্বে বিমানের হজ টিকিট গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় হজ ফ্লাইটের শেষের দিকে হজযাত্রী পরিবহনের ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। বিমানের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার সেলস (ঢাকা) সৈয়দ আহসান হোসেন কাজী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, অগ্রিম সিট বরাদ্দ দেয়ার পরেও হজ এজেন্সির মালিকরা সিট ব্যবহার করছে না। ফলে প্রায় ১০টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। তিনি ২/১ দিনের মধ্যেই সকল হজ এজেন্সিকে হজযাত্রীদের ভিসাসহ পাসপোর্ট নিয়ে বিমান অফিসে এসে হজ টিকিট সংগ্রহের অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে হজ ফ্লাইট সংকটের দরুন হজযাত্রীরা হজে যেতে না পারলে দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকেই বহন করতে হবে। হাব নেতৃবৃন্দ গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মাহরাম সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে পরিচালক হজ আবু সালে মোস্তফা কামাল কালক্ষেপণ করায় এজেন্সি তাদের অন্য পাসপোর্টও ভিসার জন্য জমা দিচ্ছে না। এতে হজযাত্রী পরিবহনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিমানের ৯টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এতে পরবর্তীতে সøট সংকটের দরুন হজযাত্রী পরিবহনে চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজযাত্রী পরিবহনে বিপর্যয়ের শঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ