Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ত্বরান্বিত করুন

সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে দল-মতের পার্থক্য ভুলে যেতে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদের আহ্বান

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে জাতির অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে বর্তমান সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। তিনি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে  দেশ  থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে এবং  শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের  সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে। মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির  যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথ ধরেই বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং দিনবদলের সনদের ভিত্তিতে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং এ কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আর্থ-সামাজিক  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ ও ‘এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির এ প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ হবে।
বিকাল চারটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ  নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন শুরুর পর সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে  শোক প্রস্তাব গ্রহণ হয়। এর পর  রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে সন্ধ্যা ছয়টায় আবার অধিবেশন শুরু হয়।
কোনো সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে  প্রেসিডেন্টের ভাষণ  দেয়ার বিধান রয়েছে। পরে পুরো অধিবেশন জুড়ে তার ভাষণের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। রোববার সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে স্পিকার প্রেসিডেন্টর আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদ্যদল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে প্রেসিডেন্টকে সম্ভাষণ জানান। সংসদ কক্ষে প্রেসিডেন্টের  ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে প্রেসিডেন্টর জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সম্বলিত চেয়ার রাখা হয়।
স্পিকারের  ঘোষণার পর  প্রেসিডেন্ট তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার পড়া শুরু করেন। এসময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। প্রেসিডেন্ট স্পিকারের আসনের বাম পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে তার ভাষণ দেন। ১১৯ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন আবদুল হামিদ। ভাষণে প্রেসিডেন্ট অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এসব লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’ এছাড়া  দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট। ২০১৪  সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত  রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর  দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়।’
তিনি বলেন, গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন  সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে  তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে ২০৪১ সালের দিকেÑ বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে, আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’
তিনি বলেন, মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর নাগাদ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, সরকার পদ্মা  সেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সড়ক অবকাঠামো ৬ দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা  সেতুর বাস্তবায়ন-কাজ এগিয়ে চলেছে এবং ২০১৮ সালের  শেষ নাগাদ এ  সেতু যানবাহন পারাপারের জন্য খুলে  দেয়া সম্ভব হবে। ৮ হাজার ৪৪৬  কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে একটি টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মোট ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট ভিত্তিতে নির্মাণের লক্ষ্যে একটি চীনা নির্মাণ-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং প্রকল্পটি ইতোমধ্যে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৪ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। ২০২০ সাল নাগাদ এ টানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য থেকে জাতির অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে বর্তমান সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত  গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে,  দেশ  থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে এবং  শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে।
বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত  রেখেছে। ফলে  দেশে নাশকতার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের  দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লে­খযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় অনেক  ক্ষেত্রে এগিয়ে  গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপমুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায় ও ন্যায্যতাভিত্তিক, জ্ঞান-নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্যনিরসন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণকে উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্যতম  কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেসিডেন্ট

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ