Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে আ’লীগের অঙ্গ সংগঠনেও চরম বিরোধ

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা তৃণমূলে বিভক্তি
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মতো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও গৃহবিবাদ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও সমমনা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বেপরোয়া কলহ-কোন্দলে তৃণমূলেও বিভক্ত সরকারি দল।
কোন্দল মিটিয়ে এক কাতারে আসতে কেন্দ্রের আহŸান ও নানা উদ্যোগেও সুফল মিলছে না। বরং দিনে দিনে কলহ-বিবাদ বিস্তৃত হচ্ছে, বাড়ছে অশান্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিভক্তির নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার দাপট, আধিপত্য বিস্তার আর পাওয়া না পাওয়ার দ্ব›দ্ব। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী দিনগুলোতে এ দ্ব›দ্ব আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের গৃহবিবাদ অনেক পুরনো। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় নেতায় নেতায় রয়েছে বিভক্তি। মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের মধ্যে রয়েছে বিরোধ। অনেকের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। মহানগরে একদিকে নগর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপ, অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গ্রæপ। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-মহিলা লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও বিরোধে দ্বিধাবিভক্ত। একই অবস্থা চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলায়ও।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরোধ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। টেন্ডারবাজি, দখল-বেদখল, চাঁদাবাজি আর মাদক ব্যবসা নিয়ে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। ১১ ফেব্রæয়ারি নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকার একটি হোটেলে দুই গ্রæপের লড়াইয়ে ছুরিকাঘাতে মারা যায় ছাত্রলীগ কর্মী ও সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত। পুলিশ নিশ্চিত হয় রেয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসার বিরোধে খুন হয়েছে ইয়াছিন। এর দু’দিন আগে পটিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হয় প্রজন্ম লীগের এক নেতা। তারও আগে নগরীর বাকলিয়ায় দলীয় কর্মীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন এক যুবলীগ নেতা। ওই ঘটনায় বান্দরবানে পালিয়ে যাওয়া তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের টেন্ডারবাজির ঘটনায় সিআরবিতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয় মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সোহেল। এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজির ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামীতে খুন হন যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান। নগরীর সদরঘাট ও আলকরন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে সম্প্রতি খুন হন দুই যুবলীগ কর্মী। তাদের একজনকে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
অপরাধের সকল ঘাট এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারীদের দখলে। পাতাল জগতে আধিপত্য বিস্তারে প্রতিনিয়ত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। অবৈধ অপকর্মকে আড়াল করতে এবং নানা সুবিধা পেতে আওয়ামী লীগের নামে গড়ে উঠছে অসংখ্য সংগঠন। প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী সৈনিক লীগ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। তারা আবার নিজেরাই বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে।
ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর। তার পরিবারের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজির ঘটনায় তাকে খুন করে লাশ ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ। এ খুনের ঘটনার এখনও সুরাহা হয়নি। এরপরও থেমে নেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের কলহ-বিরোধ। প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
সর্বশেষ শনিবার বিকেলে ফেসবুকে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কটূক্তির জের ধরে এক কর্মীকে কুপিয়ে আহত করেছেন প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা। আহত ছাত্রলীগের কর্মী মোফাজ্জল হায়দার ওরফে টাইগার মোফা চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীরাও সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। শনিবার বিকেলে হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পÐ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফুল দেওয়া নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এম এ সালামের গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীতে। সংঘর্ষের সময় মঞ্চে উপস্থিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন নেতাকর্মীদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরুর পর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর অনুসারীরা আগে ফুল দিতে চান। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমানের অনুসারীরাও ফুল দিতে গেলে বাকবিতÐার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয়পক্ষের লোকজন এ সময় হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর করা হয় অনেক চেয়ার।
মঙ্গলবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তিতে জড়ায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। ১৮ বছর পর সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে মুখোমুখি হয় দুই গ্রæপ।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম এসে গৃহবিবাদ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেন। বিরোধ মেটাতে দলের নেতাদের সাথে বৈঠকও করেন তিনি। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনার পরও নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমেনি। দিনে দিনে সংকট আরও প্রকট হচ্ছে, বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা। তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এ পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে নানা মেরুকরণ ঘটছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে কলহ-বিরোধ আরও বাড়বে এমন আশঙ্কা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ