Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এমডিজি পেরেছি এসডিজিও পারব

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : জাতিসংঘ ঘোষিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও (এসডিজি) অর্জন করতে পারব। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘পিপলস ভয়েস : স্ট্রেইনদেনিং এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, এমডিজির ৮টি লক্ষ্যমাত্রাই আমরা অর্জন করেছি। এসডিজির ঘোষিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১টি বাদে সবগুলোই আমরা সফলভাবে অর্জন করতে পারব। এক্ষেত্রে ১৩ নম্বরের জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা পুরোপুরি সফল নাও হতে পারি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে না দিলেও বাংলাদেশ নিজেদের উন্নয়নের জন্য এগুলো বাস্তবায়ন করত। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আমরা নিজেরাই ৮টি লক্ষ্যমাত্রা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলাম। এখন এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও প্রান্তিক জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি।
মুস্তফা কামাল বলেন, এসডিজি অর্জনের জন্য সকল পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলো আমরা বাস্তবায়নে কাজ করছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো। স¤প্রতি পরিকল্পনা কমিশন ১৯টি প্রকল্প পাশ করেছে। এর সব কটিই এসডিজি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা দায়ী নয়। এর জন্য উন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত শিল্পায়ন দায়ী। সুতরাং এ সমস্যা সমাধানে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে এসডিজি অর্জনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কথা জানিয়েছে পিকেএসএফ। বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নতুন এ প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ অর্থায়নকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
‘পিপলস ভয়েস : স্ট্রেনদেনিং এসডিজি ইমপ্লিমেনটেশন ইন বাংলাদেশ’ নামে এ প্ল্যাটফর্মে তিনটি কমিটি থাকবে। এসব কমিটি এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেবে এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ কমিটিসমূহের পরামর্শক হিসেবে থাকবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নে বিদেশি পরামর্শকের দরকার নেই। আমরাই ভালো উপদেষ্টা। কাউকে পিছনে ফেলে না দিয়ে সবাইকে নিয়েই এসডিজি অর্জন করতে হবে। আমরা একটি সফটওয়্যার উন্নয়নের চেষ্টা করছি, যাতে করে মন্ত্রী, এমপি ও সচিবরা ঘরে বসেই সব কিছু জানতে পারবেন।’ সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য শুধু দারিদ্র্য বিমোচন নয়; বরং দীর্ঘ মেয়াদে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করা। এই সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়নের দৃঢ় ভিত্তি লাভ করবে। সেমিনারে জানানো হয়, সরকারের এই স্বপ্ন পূরণের পথে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে পিকেএসএফ। পিকেএসএফ টেকসই উন্নয়নের ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১৩টি এবং ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩০টি বাস্তবায়নে অবদান রাখছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম।
এসইজেড-ইপিজেডের কাছাকাছি বিসিক শিল্পনগরী করা হবে
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকার দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিকাশের লক্ষ্যে এসইজেড এবং ইপিজেড এলাকার কাছাকাছি স্থানে বিসিক শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খানের নেতৃত্বে ডিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন না করে বিশেষায়িত শিল্প এলাকায় কল-কারখানা স্থাপন করতে হবে।
‘আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে এবং শিল্প-কারখানার পাশাপাশি বসতবাড়িতে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎসংযোগ প্রদান করা যাবে, যার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি আরো বলেন, সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করছে। বর্তমান অর্থবছরে প্রাক্কলিত জিডিপির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে এবং সেটি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্জিত হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের এ সময়কাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়সমূহকে গুরুত্বারোপের জন্য।
তিনি বেসরকারিখাতের বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ শতাংশ থেকে ২৯ শতাংশে উন্নীত করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের আহŸান জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ অবকাঠামো, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে প্রতিবছর প্রায় ৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা জিডিপির ৫ শতাংশে এবং এ লক্ষ্যে খাতভিত্তিক শিল্পে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
তিনি এসইজেড এবং ইপিজেডগুলোর কার্যক্রম দ্রæত চালুর জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সব ধরনের সেবা সংযোগ প্রদানের পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দেন।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ইকোনোমিক করিডোরকে কার্যকর করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন একান্ত অপরিহার্য। বøু-ইকোনোমির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সমুদ্র এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান এবং কোস্টাল ট্যুরিজম প্রবর্তনের আহŸান জানান।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো: জিয়াউল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার, পরিচালক ইঞ্জি: আকবর হাকিম, হুমায়ুন রশিদ, ইমরান আহমেদ মহাসচিব এ এইচ এম রেজাউল কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ