Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে হতাশা

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্ট্রংম্যানদের শাসন চলছে। বাস্তবে এসব স্ট্রংম্যান কিন্তু ততটা স্ট্রং নন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো অথবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিÑ এরা কেউই আসলে অর্থনীতি নিয়ে যত গর্জন করেন তত বর্ষণ করতে পারেন না। উল্লিখিত তিন দেশের অর্থনীতির পারফরম্যান্স দেখলে বিষয়টি প্রমাণিত হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এশিয়ার এই নেতারা যদি দ্রæত সংস্কারের উদ্যোগ না নেন তাহলে তাদের দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। শিল্প-কারখানা স্থাপনে গতি আনতে মোদিকে অবশ্যই ভ‚মি সংস্কার করতে হবে। লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোকে দ্রæত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দিতে হবে। অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে জোকো উইদোদোকে তার ঘোষিত অবকাঠামো কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করতে হবে। মোদি ও জোকো উইদেদো দুজনকেই নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের পথ সহজ করতে হবে, যাতে ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যাদেশ বৃদ্ধি পায় এবং রফতানি ও আয় দুটোই বড় হয়।
এব্যাপারে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস গত অক্টোবরে এক হতাশা জাগানিয়া প্রতিবেদন তৈরি করে। দ্য অ্যান্ড অব গোল্ডেন এজ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, সা¤প্রতিক বছরগুলোর শ্লথতার পর উদীয়মান বাজারে প্রবৃদ্ধির পুনরুজ্জীবনের যে ব্যাপক আশাবাদ তৈরি হয়েছে তা বাস্তব রূপ পাবে না। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস বলেছে, উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো আগামী কয়েক বছরে ৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে না। ২০০০ সালের পর থেকে ৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির যে ধারাবাহিকতা ছিল সেটা ছিন্ন হচ্ছে। চীন ও ভারতের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলো যত এগোচ্ছে, চোখ ধাঁধানো প্রবৃদ্ধি অর্জন তত কঠিন হয়ে পড়ছে। এসব দেশে সম্ভাবনার কমতি নেই, অভাব রয়েছে নেতৃত্বের। অতিকায় ও লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় ভর্তুকি বন্ধ করতে শি জিনপিংকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে তাকে কয়েকটি খাতে অতি সক্ষমতা হ্রাস করতে হবে এবং অর্থ ও পুঁজি বাজারের স্বাভাবিক গতিকে অব্যাহত রাখতে হবে। এই তিন নেতা যদি আরো সাহসী ও উদ্যোগী না হন তাহলে এশিয়ার স্বর্ণযুগ সত্যিই অতীত হয়ে যেতে পারে।
২০১২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজের ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি করছেন। দুই বছর পর ভারত ও ইন্দোনেশিয়াতেও নতুন নেতারা দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দুজনই ভোটারদের কাছে নিরাপস সংস্কারক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে নির্বাচনে জেতেন। তিনটি দেশেই নির্বাচনের পর অনেকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। তারা ভেবেছেন, উন্নয়নশীল তিনটি দেশের অর্থনীতির রাস অবশেষে হয়তো শক্ত হাতে অর্পিত হয়েছে। নতুন নেতারা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। ২০১৭ সাল শুরুর পরও এসব মন্তব্যের সত্যতা প্রমাণের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জোকো উইদোদোর ঢিমেতেতালা সংস্কার একই রকম শ্লথ প্রবৃদ্ধি এনেছে। শি জিনপিংয়ের বহুল আলোচিত বাজার-বান্ধব ইশতেহার অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর ফলে চীন এখন আগের চেয়ে বেশি ঋণ সঞ্চার করে অর্থনীতিকে সজীব রাখতে বাধ্য হচ্ছে। ভারতের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদি সরকারের অনীহা দেখা গেছে। বাস্তবতা হলো, এশিয়ার এসব স্ট্রংম্যান আসলে ততটা স্ট্রং নন। এশিয়ার নেতাদের এ দুর্বলতা আরো বেশি উদ্বেগজনক এ কারণে যে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্যই অনেকে এশিয়ার দিকে চেয়ে থাকেন।
উল্লিখিত দেশগুলোর বর্তমান চিত্রকে অতীতের সাহসী সিদ্ধান্ত প্রণয়নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাক। নব্বই দশকে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ও তার অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং বিধি-বিধানের রাজ ভেঙে খেলার মাঠ বড় করেন। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা অনেক আইনকে তারা সরিয়ে ফেলেন। আশির দশকের শুরুতে দেং জিয়াও পিং ও তার দূরদর্শী সহযোগীরাও মাওয়ের অনেক সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। এমনকি সুহার্তো তার যাবতীয় ত্রæটি-বিচ্যুতি সত্তে¡ও নাটকীয় কিছু পরিবর্তন আনেন, যা ইন্দোনেশিয়ায় দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখে। পূর্বসূরিদের তুলনায় এখনকার নেতারা সংস্কারের জন্য অত মরিয়া নন। কারণ ১৯৮০ সালের পর থেকে ইন্দোনেশিয়ার জিডিপি পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে। একইভাবে ভারতে জিডিপি ছয় গুণের বেশি এবং চীনে ২৬ গুণের বেশি বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির এ উল্লম্ফনে বিশ্বায়ন বড় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু গত এক দশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার কারণে বিশ্বায়নের বিপক্ষেও শক্ত জনমত তৈরি হয়েছে। তুলনামূলক সহজ প্রবৃদ্ধিগুলো আগেই অর্জিত হয়েছে। বৈশ্বিক সেবা, বাণিজ্য ও সরবরাহ চেইনের সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতির সংযোগ ঘটানোর কাজটি অতীতে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমান অর্থনীতির চরিত্র অনেক জটিল। উদ্ভাবনের মতো যে চ্যালেঞ্জগুলো বর্তমান অর্থনীতির সামনে দাঁড়িয়েছে, সেগুলো সহজ নয়। সংরক্ষিত খাত উদারীকরণের কাজটি সহজ নয়। এতে অতীতের সংস্কারের সুফলভোগী স্বার্থগোষ্ঠীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শি জিনপিং যে সংস্কারের রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছেন তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার পর্যন্ত অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। বøুমবার্গ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ