Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ফাহিম আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে বাসা থেকে ময়লা নেয়ার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার বিভিন্ন অংশে টাকা আদায়ের হার ভিন্ন ভিন্ন। অধিকাংশ এলাকা থেকে আদায় করা হয় ৬০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও ২০০-২৫০ টাকাও আদায় করতে দেখা যায়। গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকা থেকে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা। যদি মাসে গড়ে ১০০ টাকা করে ধরা হয় তাহলে মাসে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ কোটি টাকা এবং বছরে ২৪০ কোটি টাকা। অথচ যদি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত হারে টাকা আদায় করা হতো তাহলে টাকার অঙ্কটি দাঁড়াতো মাসে সর্বোচ্চ ৬ কোটি এবং বছরে ৭২ কোটি টাকা। সামাজিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়েছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে তা বাণিজ্যের কেন্দ্র বিন্দু। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বাণিজ্যের হার অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন গুলোর তুলনার কয়েক গুণ বেশি।
বেসরকারি ময়লা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি সংগঠন রয়েছে যা ‘প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)’ নামে পরিচিত। পিডব্লিওউসিএসপি’র ভাষ্যমতে, ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনে তাদের সেবা গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা ৩ লাখ। যদি প্রতিটি পরিবার থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হয় তাহলে টাকার পরিমাণ হয় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু ঢাকা সিটি কর্পোরেশোনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলে ভিন্ন কথা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের হিসাব মতে, কর্পোরেশন এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৪৩ লাখ এবং লোকসংখ্যা এই সংখ্যার তিন গুণ অর্থাৎ ১ কোটি ২০ লাখ। বিবিএস এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পরিবার প্রতি সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৭ জন এবং পরিবারের সংখ্যা ২৪ লাখ। এর মধ্যে শতকরা ২০টি পরিবার নিজেদের বর্জ্য নিজেরাই পরিষ্কার করে। সুতরাং ঢাকায় টাকার বিনিময়ে ময়লা পরিষ্কার করায় ১৯ লাখ ২০ হাজার পরিবার। এই বর্জ্য বাণিজ্যের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। এই বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও কম নয়।
২০০৯ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ফ্ল্যাট প্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে একটি আদেশ জারি করে এবং একই আদেশে অতিরিক্ত টাকা আদায়কারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। বর্তমানে সংগ্রহকারীরা ৩ গুণের বেশি অর্থ আদায় করা সত্ত্বেও কর্পোরেশন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এই আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। পিডব্লিউসিএসপি সিটি কর্পোরেশনে ফ্ল্যাট প্রতি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে হার বড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনা করে কিছু দিনের মধ্যেই এটি নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।
নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, ময়লা সংগ্রহকারীরা যে টাকা নিচ্ছে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনগণকে জিম্মি করে যাতে তারা টাকার পরিমাণ বাড়াতে না পারে সে ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে আরো দায়িত্ত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনগুলোতে আইন অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন- সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জৈব সার উৎপাদন, প্রধান সড়ক থেকে ময়লার কন্টেইনার স্থানান্তর, নীতি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি গ্রহণ করলেও কোন উদ্যোগই পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বর্জ্য পরিবহনের সময় যাতে তা রাস্তায় ছিটিয়ে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এতে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। একই সাথে নিশ্চিত করতে হবে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। কারণ এগুলোর আথে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সরাসরি জড়িত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা যা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ছিল ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ঢাকা উওর সিটি কর্পোরেশনের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের পরিমাণ ২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ২ হাজার ৩২৭ কোটি ৬৭ কোটি টাকা যা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ছিল ২ হাজার ২২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ঘোষিত বাজেটের পরিমাণ ৪৯৩ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। বাজেট ঘোষণাই শেষ কথা নয়, ঘোষিত বাজেটের বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমান অর্থ বছরে বাজেটের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেটের পরিমাণ বৃদ্ধি উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যাপকতারই নির্দেশক।
ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশের কার্বন নির্গমন হ্রাস করার লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং আশা করব, গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল সিটি কর্পোরেশনে একটি স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য যাতে বাণিজ্যের বিষয়বস্তু না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষেরই। মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ নয় সবার আগে বিবেচনায় রাখতে হবে জনস্বার্থ। সিটি কর্পোরেশনের একক কর্মপ্রচেষ্টায় বর্জ্য বাণিজ্য বন্ধ এবং পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা সম্ভব নয়, জনগণকেও সিটি কর্পোরেশনের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টাই গড়ে তুলতে পারে একটি পরিচ্ছন্ন শহর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন