Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৃহত্তর ময়মনসিংহে বিএনপিতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস : আন্দোলনের রোডম্যাপ চায় নেতাকর্মীরা

খালেদা জিয়ার ফেরা

| প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: শামসুল আলম খান ময়মনসিংহ থেকে : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরায় বৃহত্তর ময়মনসিংহে সরগরম হয়ে উঠেছে বিএনপি’র রাজনীতি। মাত্র ক’দিন আগেও দলীয় চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও চরম আতঙ্কে থাকা নেতা-কর্মীদের মাঝে এখন বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়েছে।
দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন মামলা, হামলা, দমন-পীড়ন ও নির্যাতনে কাবু নেতা-কর্মীরা। দলীয় প্রধানের দেশে ফেরার একদিনের মাথায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়ার ইতিবাচক ঘটনা তাদের প্রবল আতœবিশ্বাসী করে তুলেছে। নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কোটি কোটি জনতার রায়ে জয়ী হয়ে দলটি জনগণের সরকার গঠন করতে পারবে বলেও চরম আশাবাদী নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদায় করতে কূটনৈতিক ও নানামুখী তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি কঠোর-কঠিন আন্দোলনের রোডম্যাপও চায় তারা। তাদের বিশ্বাস, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের আগের মুহুর্তের চেয়ে এবারের আন্দোলন হতে হবে অনেক বেশি শাণিত ও পরিকল্পিত। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমেই শুধুমাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।
জানা যায়, দীর্ঘ ৩ মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তাকে বরণ করতে রাজপথে অবস্থান নেয় হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সৃষ্টি হয় জনসমুদ্রের। দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতিতে থমকে যায় রাজধানী।
ঝক্কি-ঝামেলা মোকাবেলা করে সারা দেশের মতো বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকেও হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় পৌছেন। তারাও রাস্তার দু’পাশে অবস্থান নিয়ে প্রিয় ও মমতাময়ী নেত্রীকে স্বাগত জানান। এতোদিন সরকারের মনোভাবে দেশনেত্রীকে নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা থাকলেও তার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে উদ্বেগ রূপ নেয় বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াসে।
শাসক মহলের নানামুখী তৎপরতা, অবৈধ হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের মাঝেও পরের দিন হাজার হাজার নেতা-কর্মী বেষ্টিত হয়ে আদালতে হাজির হয়ে জামিন পান একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের মহাসচিব ডা: এ.জেড.এম.জাহিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই জনতার টানে, দেশের মায়ায় নিজের স্বদেশে ফিরে এসেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এর মাধ্যমে লাখ লাখ নেতা-কর্মী উজ্জীবিত হয়ে উঠার পাশাপাশি সরকারের বড় বড় নেতাদের প্রোপাগাÐার দাঁত ভাঙাও জবাব দেয়া হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তিনি ঘরে বসে থাকবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কিংবা সহায়ক সরকার দাবি আদায়ে তিনি যে নির্দেশ দিবেন জীবনবাজি রেখে নেতা-কর্মীরা সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী ইনকিলাবকে বলেন, জনগণের নেত্রী হিসেবে জনগণের কাছে দেশনেত্রী ফিরে এসেছেন। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অচিরেই তিনি সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন। সরকার টালবাহানা করলে লাখ লাখ নেতা-কর্মী রাজপথে নেমে আসবে। তীব্র আন্দোলনেই সরকার বাধ্য হবে সহায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে, এমন মত শেরপুর জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় সাবেক এ নন্দিত তথ্য সচিব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার আগেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে দলটির সিনিয়র নেতারা। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা। তবে এ সংলাপ শেষ পর্যন্ত যাতে প্রহসনে রূপ না নেয় সেই বিষয়ে আগেই গুরুত্বারোপ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপ ফলপ্রসু হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে বলেও মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। সংলাপের পর পরই দেশে ফিরে দলীয় চেয়ারপার্সনের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জামিন লাভ নেতা-কর্মীদেরও আশাবাদী করে তুলেছে।
আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নতুন ইতিহাসের রচয়িতা উল্লেখ করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বলেন, দেশনেত্রীকে বরণ করতে লাখ লাখ নেতা-কর্মীর অভূতপূর্ব উপস্থিতি প্রমাণ করেছে জিয়া পরিবারের জন্য তারা নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত। এ গণজোয়ারের মধ্যে দিয়ে সরকারকে একটি সুস্পষ্ট সতর্ক বার্তাও দেয়া হয়েছে।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সফল নেত্রী ডাক দিলে লাখ লাখ নেতা-কর্মী যে কোন সময়ে গর্জে উঠবে। সরকার সেই কম্পন মোকাবেলা করতে পারবে না। তারা বাধ্য হবে পিছু হটতে। তিনি বলেন, নেত্রী আন্দোলনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন সেই অনুযায়ীই শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা কাজ করবে।’
ওয়ান ইলেভেন নামক রাজনৈতিক সিডরের ক্ষত কাটিয়ে এখনো পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দেশের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনের আগে ময়মনসিংহসহ সারা দেশ ‘ঢাকা’ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না নামায় শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখেনি ।
সেই থেকে দীর্ঘদিন যাবত রাজপথে প্রকাশ্যে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারছে না দলটি। এতে করে নেতা-কর্মীরাও হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু অনেক দিন পর দলীয় চেয়ারপার্সনের দেশে আগমনের মধ্যে দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীরা যেভাবে ঢাকার রাজপথ জমিয়ে দিলেন তাতে করে দলে চাঙ্গাভাব তুঙ্গে উঠেছে বলে মনে করেন জামালপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। একই রকম মন্তব্য করেন জামালপুর জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য ও মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মিজানু রহমান আকন্দ রতন।
পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিক ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিন বারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার মধ্যে দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল যেভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তা ধরে রেখে সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ই হবে আমাদের একমাত্র কাজ।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ম্যাডাম আসাতে নেতা-কর্মীরা দারুনভাবে উৎফুল্ল। এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবেন এবং এটার পক্ষে জনমত দৃষ্টিতে তিনি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকারের সব বাঁধা বিপত্তি এবং ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সহায়ক সরকারের দাবী আদায় করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো।
‘শাসক গোষ্ঠীর নানা উদ্ভট ও কাল্পনিক বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত করে আপোসহীন নেত্রী বীরের বেশে দেশের মাটিতে ফিরে এসেছেন’ এমন জানিয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ইনকিলাবকে বলেন, জনতার উত্তাল সমুদ্র স্বাগত জানিয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। সরকারের নানা চক্রান্ত তাকে রুখতে পারেনি।’ লেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছেন। ইনশাল্লাহ সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি অবশ্যই সেই নির্বাচনে অংশ নিবে। এ দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আন্দোলন

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ