Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টানা তিন দিনের বৈরী আবহাওয়ার আরও অবনতি ঘটে গতকাল শনিবার। দেশজুড়ে বিরাজ করছে অস্বাভাবিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। কার্তিক মাস, হেমন্ত কাল। এই ঋতুটাই যেন ভুল মনে হচ্ছিল। আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই ঘনঘোর কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গিয়ে হিমেল কনকনে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে অঝোরে বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ফেনীতে ৩০৬ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১৫৮ মিমি বর্ষণ হয়। গত ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫৩ মিমি। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা একটি নিম্নচাপ দ্রুতই স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে সরে গিয়ে সর্বশেষ দেশের মধ্যাঞ্চল টাঙ্গাইলে অবস্থান করছে। নিম্নচাপটির সক্রিয় প্রভাবে পাল্টে যায় মওসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক আবহাওয়ার রূপ। অথচ বর্ষার মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে গত সপ্তাহে। নিম্নচাপের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিপর্যস্ত ঘটে। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেক স্থান অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল।
অকালে সর্বত্র ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রার গতি। নিম্নচাপের প্রভাব বজায় থাকার কারণে দেশের চর, উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলে গতকাল দুই দফায় জোয়ারের সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২ থেকে ৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে করে আগের নড়বড়ে ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ আবারও ভেঙে গেছে অনেক জায়গায়। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলের নিম্নাঞ্চল। বিশেষত ভাঙা বাঁধের সংলগ্ন বসতি, ফসলের জমি ও ক্ষেত-খামার, চিংড়িসহ মৎস্য ঘেরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা অতিবৃষ্টির সাথে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে ফসল, শাক-সবজি ক্ষেতেরও ক্ষতি হচ্ছে। তীব্র বৈরী আবহাওয়ার চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে মালামাল লাইটারিং খালাস ডেলিভারি পরিবহনে অচলদশার সৃষ্টি হয়। বাণিজ্যিক নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন থমকে যায়। জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বৈরী আবহাওয়ায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট সড়কে একদিকে যানবাহনের সঙ্কট, অন্যদিকে তীব্র যানজটে গন্তব্যমুখী অগণিত মানুষ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েন। অবিরাম বর্ষণের কারণে পানিবদ্ধতা ও ঝড়ো হাওয়ায় ফল-ফসল ও শাক-সবজির আবাদ ও ফলনে ক্ষতি হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ আজও (রোববার) অতিবৃষ্টির সতর্কতায় জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপের কারণে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ স্থানে মাঝারি থেকে প্রবল বর্ষণ এবং উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও জোয়ার অব্যাহত থাকে। অকাল বর্ষণের সাথে নিম্নচাপের কারণে সামুদ্রিক প্রবল জোয়ারে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আছদগঞ্জ সওদাগরী পাড়া, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, শোলকবহর, পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলীসহ ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরীর অনেক জায়গায় বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদাম, আড়ত কাদা-পানি ও ময়লায় সয়লাব।
এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বিকেলে টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরী অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ