Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আম্বিয়াগণের আল্লাহ প্রদত্ত হেকমত বা প্রজ্ঞা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
প্রতিটি বিষয়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দু’টি শ্রেণী আছে। এর একটি ঐ শ্রেণী যারা নিয়ম মাফিক ঐ বিষয়টি হাসিল করেন, তার চর্চা করেন, এবং এর মাঝে অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতা অর্জন করেন, আর দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক সহজাতভাবে এবং সৃষ্টিগতভাবে সেই বিষয়ের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অধিকারী হন। তারা অভিজ্ঞতা এবং দলীল প্রমাণ ছাড়াই নিজেদের সহজাত যোগ্যতা, সঠিক অনুভূতি এবং বিশুদ্ধ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা উক্ত বিষয়ের কোন একটি বস্তু দেখামাত্রই এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারেন এবং তা অক্ষরে অক্ষরে সঠিক হয়। এরই নাম আপনি সুস্থ অনুভূতি এবং পরিচ্ছন্ন বুদ্ধিমত্তা রাখতে পারেন। কাব্য সাহিত্য এবং অন্যান্য সূ² বিষয়াবলীতে এর অধিক উদাহরণ পরিদৃষ্ট হয়। অনুরূপভাবে কোন কোন মানুষের মাঝে বস্তুরাজির সত্য-মিথ্যা, কার্যাবলীর ভালো-মন্দের সঠিক অনুভূতি এবং সঠিক মানসিকতা পাওয়া যায়। তারা ঐ সকল কাজের সু² হতে সূ²তর অবস্থা ও সমস্যা সম্পর্কে স্বীয় রাব্বানী প্রজ্ঞা ও মননশীলতার দ্বারা এমন সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন যা অন্যান্য লোকেরা দীর্ঘ পর্যালোচনা এবং চিন্তা-গবেষণার পরও দিতে পারেন না। বস্তুতু : তা হলো মারেফাত ও নুরে ইলাহী যা চেষ্টা-তদবীর ও চিন্তা-গবেষণা নয়। বরং এ শক্তি দানের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এরই নাম হচ্ছে হেকমত।
অন্যান্য ঐশী ক্ষমতা ও যোগ্যতা এবং প্রাকৃতিক দান ও অনুগ্রহণের মত হেকমতের দানও সবাই একরকম প্রাপ্ত হয় না। বরং যোগ্যতা অনুসারে মামুলী হেকমত হতে শুরু করে উচ্চতর ও পরিপূর্ণ হেকমত পর্যন্ত মানুষকে দান করা হয়। এর বিভিন্ন পর্যায় এবং মর্যাদা সাধারণ মানুষও লাভ করতে পারে। এমনকি অনেকে পেয়েও থাকে। কিন্তু এর উচ্চতর ও পরিপূর্ণ পর্যায় এবং মর্যাদাও হযরত আম্বিয়ায়ে কেরাম লাভ করে থাকেন।
কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রাটি স্মরণযোগ্য যে, যেভাবে এই রাব্বানী দান ও অনুগ্রহ, স্বর্গীয় বুঝ-ব্যবস্থা, ধর্মীয় বুদ্ধি ও আকল এবং নুরানী শক্তির উপর হেকমত শব্দটির ব্যবহার ঘটে থাকে, অনুরূপভাবে এই শক্তির নিদর্শনাবলীর পরিণাম এবং এগুলোর শিক্ষার উপরও হেকমতের ব্যবহার দেখা যায়। সুতরাং অপর এক আয়াতে হযরত লুকমান (আ:)-কে হেকমত প্রদানের বর্ণনা রয়েছে। এরপর সেই হেকমতে লুকমানীর শিক্ষার কথাও উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অংশীবাদীত্বের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারী করা, পিতামাতার খেদমত করা, ভালোলোকের অনুসরণ করা, আল্লাহর সর্বগ্রাসী জ্ঞান, নামাজের হুকুম, ধৈর্য্য, অহঙ্কার ও বড়াইভাবের নিষেধাজ্ঞা, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা, মধ্যম চালে পথ চলা, আস্তে আস্তে কথা বলা ইত্যাদি
অনুরূপভাবে ত্রয়োদশতম আয়াতে হেকমতে মুহাম্মাদীর নি¤œলিখিত শিক্ষার বিস্তৃত বিবরণও দেয়া হয়েছে। অংশীবাদীতার প্রতি নিষেধাজ্ঞা, পিতামাতার প্রতি সদয় ব্যবহার, প্রতিবেশী ও দু:স্থদের সাথে সদয় ব্যবহার, অপচয়ের ক্ষতিকর প্রভাব, বিনয়ের সাথে কথা বলা, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা, সন্তান হত্যার নিষেধাজ্ঞা, কাউকে হত্যা না করা, নিহতের বদলা গ্রহণ করা, এতীমের সাথে সদ্ব্যবহার করা, অঙ্গীকার পূরণ করা, মাপ ও ওজন ঠিক রাখা, প্রাণহীন বস্তুর পায়রবী না করা, অহঙ্কার ও অহমিকার ক্ষতিকর দিক ইত্যাদি বিষয়াদির বিবরণ তুলে ধরে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “এই হচ্ছে, হেকমতের ঐ সকল কথা যা আল্লাহপাক তোমার উপর অহী নাযিল করেছেন।” (সূরা আসরা : রুকু-৪)
হেকমতের এসকল কথার বিস্তৃত আলোচনার দ্বার অনুমাণ করা যায় যে, হেকমতের বিকাশস্থল ও পরিণামগুলো কোন শ্রেণীর কথা বা বাণী হয়ে থাকে। বস্তুুত: এগুলো এমন সব কথাই হয়ে থাকে, যার বিশ্বব্যাপী সত্যতাকে স্বয়ং মানুষের সহজাত স্বভাব ও মানবিক ইন্দ্রিয়ানুভূতি সহজেই স্বীকার করে নেয়। এ কারণেই তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতে হেকমতের ব্যবহার যাবুর কিতাবের উপর এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ আয়াতে ইঞ্জিলের উপর করা হয়েছে। কেননা এগুলোর মাঝে এ জাতীয় প্রাণস্পর্শী উপদেশরাজি এবং বিশ্বগ্রাসী সত্যতার শিক্ষা স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে আল-কুরআনও স্বীয় গুণ হেকমতপূর্ণ কুরআন উপস্থাপিত করেছে। যেমন “এগুলো হচ্ছে হেকমতপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ” (সূরা লুকমান ও সূরা ইউনুস) ‘বিজ্ঞানময় কুরআনের নসীহতের শপথ।’ (সূরা ইয়াসীন) ‘বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ।’ (সূরা আলে-ইমরান) সুতরাং এ সকল আয়াতের দ্বারাও সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, হেকমতের কোন কোন বিশেষ শিক্ষাকে স্বয়ং অহীয়ে ইলাহী নিজের মাঝে সামিল করে এগুলোকে দিক-নির্দেশনা করে দিয়েছে। কেননা এসকল বস্তুু আম্বিয়ায়ে কেরাম কিতাবে ইলাহী অহীর সাথে সাথে সাধারণভাবেই পেয়ে থাকেন। ইরশাদ হচ্ছে, “এবং স্মরণ কর যখন আল্লাহ পাক পয়গাম্বরদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কিতাবও হেকমত প্রদান করব।” (সূরা আলে ইমরান : রুকু-৯)
মোটকথা, এই হেকমতের শক্তি আম্বিয়ায়ে কেরাম পরিপূর্ণভাবে অর্জন করেছিলেন এবং এর ফলশ্রæতিতে তাঁদের প্রত্যেক কথার মাঝে বিচক্ষণতা এবং তাঁদের প্রতিটি কাজে প্রজ্ঞাশীলতা বিদ্যমান ছিল। যেহেতু এই শক্তি তাদের অর্জিত ছিল। এ জন্য-এর নিদর্শনাবলী ও প্রতিক্রিয়া তাদের কাজ ও কথার আকারেও বিকশিত হয়ে উঠেছিল। এ জন্য এগুলোর শুধু সত্যতা স্বীকার করাই নয়, বরং এগুলোর উপর আমল করাও নবুওতের সত্যতার মাঝে সামিল রয়েছে। এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে: (হে মোহাম্মদ (সা:)-এর বিবিগণ!) তোমাদের গৃহগুলোতে আল্লাহর যে সকল আয়াতসমূহ ও হেকমতের কথাসমূহ শোনানো হয়, এগুলোকে স্মরণ রেখো।” (সূরা আহযাব : রুকু-৪) রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পবিত্রা স্ত্রীগণকে আয়াতে ইলাহী ছাড়া কোন্ হেকমতের কথা স্মরণ রাখতে বলা হয়েছিল? একথা সুস্পষ্ট যে, তা ছিল স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর হেকমত ও জ্ঞানপূর্ণ বাণীসমূহ। তবে এসকল কথা যদি দ্বীন বা ধর্ম সংক্রান্ত না হত, তাহলে এগুলো স্মরণ রাখাকে জরুরি সাব্যস্ত করা হল কেন? অনুরূপভাবে অষ্টম, নবম, দশম এবং একাদশতম আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর এই গুণকে তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তিনি মুসলমানদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিতেন।” (সূরা জুময়া : রুকু-১)
রাসূলুল্লাহ (সা:) কিতাবের পর কোন্ হেকমতের বাণী শিক্ষা দিতেন? একথা সুষ্পষ্ট যে তা ছিল তাঁরই হেকমত। সুতরাং যে হেকমতের শিক্ষা তিনি প্রদান করতেন, তা তার মাঝেও বিদ্যমান ছিল। কেননা যে বস্তুু যার মাঝে নেই, তা তিনি অন্যের কাছে কিভাবে দিতে বা পৌঁছাতে পারেন? যেহেতু এই শক্তি ও সামর্থ্য তাঁর মাঝে ছিল, সেহেতু তার কথা এবং কাজের ভিতরেও এর স্বরূপ অবশ্যই ফুটে উঠত যে সকল বস্তুুর তালিম তিনি দিতেন। এ সকল হেকমতপূর্ণ শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, মুসলমান যেন এগুলোর উপর আমল করেন।
পঞ্চম আয়াতে হযরত ঈসা (আ:) বলেছেন, “আমি তোমাদের কাছে হেকমত নিয়ে এসেছি, যেন তোমরা যে সকল বিষয়ে বিতর্ক করছ, তার কিছু কথার মর্ম তোমাদের সামনে খোলাখুলি বলে দিতে পারি।” (সূরা যুখরুক : রুকু-৬)
এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হেকমতের একটি অপরিহার্য দাবী হচ্ছে, বিস্তৃতভাবে বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করা। অর্থাৎ কোনও সংক্ষিপ্ত আয়াত এবং বিভিন্নমুখী মাসয়ালার ব্যাখ্যাও বিশ্লেষণ করা। যাতে করে সেই সংক্ষিপ্ততা মতবিরোধ দূরীভূত হয়ে যায়। মোট কথা : এর মাধ্যমেই মাকসুদের বিশ্লেষণ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে হযরত ঈসা (আ:) তৌরাতের কোন কোন আহকামের বিশ্লেষণ করেছিলেন, যেগুলো সম্পর্কে ইহুদীরা বিভিন্ন মত ব্যক্ত করত। এমনি করেই তাদের ভুল অপসারিত হয়েছিল। দ্বাদশতম আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে “যদি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ তোমার উপর না হত, তা হলে তাদের মাঝে একটি দল চাচ্ছিল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে; তারা কেবলমাত্র নিজেদের ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করতে পারত না এবং সামান্যতম ক্ষতিও তোমাকে করতে পারত না, আল্লাহ পাক তোমার উপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন ঐ বস্তুু যা তুমি জানতে না; আল্লাহর বৃহত্তর ফযিলত তোমার উপর রয়েছে।” (সূরা নিসা: রুকু-১৭)
এই আয়াতসমূহের দ্বারা জানা যায় যে, মোনাফেকদের একটি শ্রেণী তাঁকে ভুল পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তুু আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তাদের এই চক্রান্ত কার্যকরী হতে পারেনি। এমনকি তারা তোমাকে পথভ্রান্ত করতেও সক্ষম হয়নি। এর কারণ ছিল এই যে, তোমার উপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছিল অপরিসীম। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই যে, তিনি তোমার নিকট কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং তোমাকে ঐ জ্ঞানদান করেছেন যা পূর্বে ছিল না। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর এই হেফাজত, এই পবিত্রতা, এই জ্ঞান ও মনীষা, এই অনুগ্রহ পরিপূর্ণরূপে অর্জিত হয়েছিল, কিতাব ও হেকমত লাভ করার পর। মোট কথা, এই হেফাজত ও নিরাপত্তা অর্জনের সাথে হেকমতে রাব্বানীর পুরস্কারও শামেলে হাল ছিল।
এইতো সেই নববী হেকমত, যার উৎসস্থল ছিল নবুওতের বক্ষস্থল। কিন্তু এই ফয়েজ, বরকত ও শক্তি ও যোগ্যতা অনুসারে পয়গাম্বরের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে অন্যান্যদেরও অর্জিত হয়। যার ফলশ্রæতিতে এই ব্যক্তি সঠিক ও সত্য কথাকে অতি সহজেই বুঝতে পারেন, কবুল করে নেন এবং এর উপর আমল করেন।
তাবলীগে ইসলামের তিনটি উপাদানের মাঝে হেকমত, সদুপদেশ এবং সচ্চরিত্রতার দ্বারা বিতর্ক করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হেকমতকে স্থান দান করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তুমি স্বীয় প্রতিপালকের পথে হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা আহŸান কর এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় বিতর্ক কর। (সূরা নহল : রুকু-১৬)
সুতরাং এই শুদ্ধ ও পরিষ্কার হেকমতের কথা অন্তরকে স্পর্শ করে এবং দ্রæত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাইতো আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন ‘অন্তর স্পর্শকারী হেকমত।’ (সূরা কামার: রুকু-১) আর এই হেকমত হচ্ছে সকল পুণ্য কর্মের মূল এবং মঙ্গল অনুষ্ঠানের কেন্দ্র। এই পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে? এ জন্যই ইরশাদ হচ্ছে, “যাকে হেকমত দেয়া হয়েছে তাকে অধিক উত্তম দৌলত দান করা হয়েছে।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-৩৭)
এ পর্যায়ে ঐ সকল প্রামাণ্য হাদীসসমূহ উপস্থাপন করা প্রয়োজন, যেগুলোর মাঝে হেকমতের গূঢ়মর্ম তুলে ধরা হয়েছে। কমসেকম প্রথম জামানায় এর মর্ম খুবই সুস্পষ্ট ছিল। একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) এক দল প্রতিনিধির ভাষ্যকারের বক্তব্য শ্রবণ করে বলেছিলেন: ‘কোন কোন কবিতা হেকমত পূর্ণ হয় এবং কোন কোন বর্ণনায় যাদুকরী প্রভাব থাকে।’ (সহীহ বুখারী)
একটি হাদীসে কোন কোন কবিতাকে হেকমত এবং কোন কোন বর্ণনাকে যাদু বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই তুলনার দ্বারা বুঝা যায় যে, হেকমতের আরবী গূঢ়মর্মের ব্যাপ্তি উর্দু পরিভাষা হতে খুবই বিস্তৃত। অর্থাৎ যাদু ও বশীকরণের ঊর্ধ্বে মানবিক চিন্তার মত হেকমতের আরবী গূঢ়মর্মের মাঝে কোন কোন মানবিক চিন্তা- চেতনার রেশ পাওয়া যায়। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, আরবী হেকমতের অর্থ জ্ঞান, বুদ্ধি ইত্যাদি সাধারণ শব্দ হতে বুলন্দ ও উচ্চকিত অসাধারণ অবস্থার সমাহার। এ কারণে উর্দু ভাষায় হেকমত শব্দটির সাথে ইলহামী শব্দটি সংযোগ করে এর মর্ম প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ ইলহামী হেকমত।
হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন: “হিংসা ও প্রতিহিংসা যদি বৈধ হত, তাহলে দু’ব্যক্তির মাঝেই তা সিদ্ধ হত। এদের একজন হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যাকে মাল-সম্পদ প্রদান করা হয়েছে, সে তা’ যথার্থ স্থানে খরচ করে। দ্বিতীয়জন হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ পাক হেকমত প্রদান করেছেন, যিনি তদনুসারে বিচার মীমাংসা করেন এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেন। (সহীহ বুখারী : কিতাবুল এলেম) তাঁর মাঝে শিক্ষাদাতার গুণাবলীও পয়দা হয়। যখন সাধারণ মানুষের এই মর্যাদা তাহলে আম্বিয়ায়ে কেরাম এই দৌলত সেই বিস্তৃত পরিসরে লাভ করেন যা তুলনা বিহীন। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা:) হেকমতের যে সুবিশাল বিস্তৃত পরিমÐল লাভ করেছিলেন, তা তাঁর জীবনাদর্শে প্রতিফলিত হওয়াও ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। মূলত : তার ঐ সকল ফায়সালা, সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা, প্রজ্ঞা ও মনীষা সবই ছিল অহীয়ে ইলাহীর ব্যবহারিক পর্যায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত সম্প্রসারিত বক্ষের হেকমতের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লাহ

৩১ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ