Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িঘর

| প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চৌধুরী মো. ফারুক, পাথরঘাটা (বরগুনা) থেকে : পাথরঘাটার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর বেশীর ভাগই বেড়িবাঁধের বাইরে নির্মাণ করার কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অপরিকল্পিতভাবে বলেশ্বর ও বিষখালীর তীরে এসকল আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপন করায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই তলিয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আশ্রয় গ্রহণকারী অসহায় দরিদ্রদের। এছাড়াও আবহাওয়া একটু খারাপ হলেই স্থানীয় নদী থেকে শো-শো করে ঢেউ এসে ওই সকল আশ্রয়ণ প্রকল্প বাসিন্দাদের আসবাবপত্রসহ সকল থালা,বাসন নদীর স্রোতে ভেসে যায় এবং ব্যারাকগুলোর টিনের ছাউনি মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হওয়ার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির পানি রুমগুলোতে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভিজে যায়। এভাবেই প্রতিনিয়ত ঝড় তুফানের সাঙ্গে লড়াই করে এবং বৃষ্টিতে ভিজে বেঁচে আছে ওরা।
পাথরঘাটা উপজেলা ভ‚মি অফিস সূত্রে জানা গেছে সরকারি অর্থায়নে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষের জন্য ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭টি ব্যারাকের মাধ্যমে ৩৩৭টি পরিবারের সহ¯্রাধিক হতদরিদ্র মানুষকে বসবাসের ব্যবস্থা করেন সরকার। এর মধ্যে উত্তরণ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪টি ব্যারাকে ৪০টি, জহুরা খাতুন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩টি ব্যারাকে ৩০টি, হাজী সাইদুর রহমান ও সেতারা বেগম আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩টি ব্যারাকে ২৪টি,এন ইসলাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬টি ব্যারাকে ৫৬টি, রুপদোন সিকদার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪টি ব্যারাকে ৪০টি,মনি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮টি ব্যারাকে ৮০টি,বলেশ্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪টি ব্যারাকে ৪০টি,আলি আকবর ও সুফিয়া আকবর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫টিসহ মোট ৩৭টি ব্যারাকে ৩৩৭টি পরিবারের সহ¯্রাধিক হতদরিদ্র মানুষ বসবাস করেন।
অন্সুন্ধানে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর বেশরি ভাগই বেড়িবাঁধের বাইরে বিষখালী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এবং খালের পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় পুর্নিমা-অমাবস্যার জোয়ারসহ স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই অশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর ভিতরে পানি ঢুকে। পাথঘাটার উত্তরন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন, মো. বাদল, মোসাঃ ফরিদা, হেলেনা, ডালিয়াসহ অনেকে জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোয়ারের পানি বেশী হলেই অশ্রয়ণ প্রকল্প ডুবে যায়। তারা বলেন, বর্ষাকাল আসার পূর্বেই অশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে অনেক বাসিন্দারাই অন্যত্র ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। যার ফলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের টিউবয়েল ও সেনিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে বরাদ্দ পেয়েও অনেকেই এখন আর অশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি অর্থায়নে পাথরঘাটায় যে ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে তা বেড়িবাঁধের ভিতরে এবং বাইরে উভয় স্থানেই যার ফলে সরকারের যে লক্ষ হতদরিদ্র ও গৃহহীনদের গৃহের ব্যবস্থা করা তা শতভাগ সফল হয়নি। সরকারি অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প বেড়িবাঁধের বাইরে নির্মিত হওয়ায় পাথরঘাটার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাদের মতে সরকারি অর্থে গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষদেরকে পুনর্বাসনের নামে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে চরম ঝুঁকির মুখে। কারণ ২০০৭সালের ১৫ই নভেম্বর সিডরের আঘাতে পাথরঘাটায় ২৫৪ জন মানুষের প্রাণহানী ঘটে। যাদের মৃত্যুর কারণই ছিল বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা পৌরসভার মেয়র, আনোয়ার হোসেন আকন,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভিন, উপজেলা পৌর-পরিষদের প্যানেল মেয়র-১মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, নদীর তীরে বা বাঁধের বাইরে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করা মোটেই ঠিক হয়নি, বাঁধের বাহিরের আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ব্যারাক হাউজগুলো ঝুঁকির্পূণ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে যে সকল মানুষ প্রাণ হারিয়ে ছিল তাদের বেশীর ভাগই বাঁধের বাইরে বসবাস ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাড়িঘর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ