Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাখাইনে আবার ত্রাণ দিতে পারে জাতিসংঘ

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ত্রাণ বিতরণের অনুমতি পেয়েছে। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণের আওতায় আনা হবে। অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধন চালিয়ে গত প্রায় দুই মাস ধরে সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। ডব্লিউএফপি’র মুখপাত্র বেটিনা ল্যুশার গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের সংস্থা রাখাইনে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করার সবুজ সংকেত পেয়েছে। বিস্তারিত সমন্বয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তবে ত্রাণ বিতরণ কবে থেকে শুরু হবে কিংবা কীভাবে হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। এর আগে উত্তর রাখাইনে অন্তত এক লাখ ১০ হাজার মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করতো এই সংস্থাটি। এতে যেমন রোহিঙ্গা মুসলিমরা খাবার পেতেন, তেমনি স্থানীয় মগ বৌদ্ধরাও। চলতি বছরের ২৪ আগস্টের পর থেকে অব্যাহত অত্যাচারে এখন পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা সোয়া ছয় লাখের কাছাকাছি বলে জাতিসংঘ জানাচ্ছে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও লাখ খানেক বেশি। এছাড়া আগে থেকেই চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে থাকেন। এতে মোট রোহিঙ্গা সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট। সে রাতে রাখাইনে পুলিশ ক্যাম্প ও সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্ব›েদ্বর জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে নতুন করে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্য তথা আরাকানে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। অপর দিকে বহুমুখী চাপের মুখে মিয়ানমার কি নমনীয় হচ্ছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বোদ্ধা মহলে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে দৃশ্যত সোচ্চার হয়েছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। শুক্রবারও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রাখাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একদিন আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানান সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। ওই দিনই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানকে ফোন করে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাপ বাড়াতে মার্কিন আইনপ্রণেতারাও নানামুখী পদেক্ষেপ নিয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের উদ্যোগে তৈরি করা মিয়ানমারবিরোধী খসড়া প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের চেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এদিকে চাপের মুখে সহিংসতা কবলিত রাখাইন থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে মিয়ানমার। এতে কি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নমনীয় হতে পারে বলে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। রাখাইনে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তদন্ত দল রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিপন্নতা দেখতে তদন্ত দলের তিন সদস্য জানান, এ ঘটনায় তারা গভীরভাবে মর্মাহত। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিশনের প্রধান ইন্দোনেশিয়ার মারজুকি দারুসমান বলেন, আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা উত্তর রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে বাস করা অনেক লোকের ঘটনা শুনেছি। তারা বলেছে, পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে সেখানে কীভাবে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। মিশনের আরেক সদস্য শ্রীলংকার রাধিকা কুমারাসোয়ামি জানান, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ও নৈরাশ্য দেখে তিনি মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। মিশনের অন্য সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টোফার ডমিনিক সিডোটি। একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খোলামেলাভাবেই সু চির প্রতি তার অসন্তোষ ব্যক্ত করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াংহি লি। রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকাকে ‘উদাসীন’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র বেট্টিনা লুয়েশের বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত রাখাইন রাজ্যে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি শুরুর ব্যপারে দেশটির কর্তৃপক্ষ সবুজ সংকেত দিয়েছে। রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা i
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ