Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা সঙ্কট সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দূরত্ব কমচ্ছে সু চির?

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির সঙ্গে দেশটির প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দূরত্ব কমে আসছে। দীর্ঘদিন মিয়ানমার সামরিক শাসনে থাকার ২০১৫ সালে বেসামরিক সরকার গঠন করেন সু চি। সরকার গঠন করলেও দেশটির সেনাবাহিনী ও সেনা কর্মকর্তাদের ওপর কোনও কর্তৃত্ব না থাকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন সু চি। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমন্ত্রণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সঙ্কটের শুরু থেকেই সু চি সেনাবাহিনীর অভিযানকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। এর মধ্য দিয়ে সু চি দেশটির প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে।

সু চির নীরবতায় বিমূঢ় বিশ্ব
আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ এনেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার ও সংস্থা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যার অভিযোগ এনেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নে নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন সু চি।
চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনকারীরা আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ও সামরিকায়নের আশঙ্কা করছেন। কূটনীতিকরা আশঙ্কা করছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটির ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
মিয়ানমারের অবস্থানরত এক বিদেশি কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। বেসামরিক সরকারের সামর্থ্যহীনতার কারণে প্রায় অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে সেনাবাহিনীই এখনও একমাত্র কার্যকর প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত। সেনা শাসন ফিরে এলে অনেকেই স্বাগত জানাবে।
মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়ে নিজেকে জনগণের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছেন সু চি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ও সু চিকে গ্রহণ করেছে। বেসামরিক সরকার না থাকলে যে বিকল্প সামরিক সামনে রয়েছে তাতে পশ্চিমারা সু চিকেই সমর্থন করছে। এ কারণেই ২০১২ সালে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় সু চি নীরব থাকলেও পশ্চিমারা তাকে সমর্থন করে গেছে। পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গাদের একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির কোনও মুসলিম প্রার্থীকে না রাখলেও পশ্চিমারা কোনও সমালোচনা করেনি। ওই নির্বাচনে সু চির এনএলডি পার্টি ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল।
এই বছরের শুরুতে এক কূটনীতিক বলেছিলেন, সু চি কেন আরও বেশি করছেন না- দেশের বাইরে থেকে এমন প্রশ্ন করা সহজ। এরপর যা হবে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতায় আসবে আগের মতোই। তখন আবার তারা বলবে, আমরা মিয়ানমারে আবার হেরেছি। এর ফল আরও খারাপ হতে পারে।
কিন্তু এবার ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার পলায়নে পরিস্থিতি একটু অন্যরকম দাঁড়িয়েছে। সু চির আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে তলানীতে পৌঁছেছে। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের কথা বলে সু চি চলমান সঙ্কট নিয়ে কথা না বলায় মিত্ররা তার নিন্দা করছেন। প্রকাশ্য ও গোপনে সু চি সেনাবাহিনীর কথাই বলছেন বলে অভিযোগ ওঠছে। বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনীর ওপর যে তার নিয়ন্ত্রণ নেই তা স্বীকার করতে চান না সু চি।
এই হতাশা সু চিকে উভয় সঙ্কটে ফেলেছে। সমালোচনা সহ্য করতে না পারার বৈশিষ্ট্য রয়েছে সু চির। ফলে রাখাইনে জাতিসংঘের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করতে অনুমতি দিচ্ছেন না তিনি। তবে আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কাছে লেগেছে। শুক্রবার সু চি রাখাইনে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম চালুর অনুমতি দিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নিপীড়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। জাতিসংঘের সদর দফতরে এক ভাষণে গেøাবাল সেন্টার ফর দ্য রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সিমন অ্যাডামস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের হাড়ের ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র নির্মিত হতে পারে না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা শোনা যাচ্ছে। এক কূটনীতিক জানান, সু চির সঙ্গে সেনাপ্রধানের সম্পর্ক তলানীতে পৌঁছেছে।
মিয়ানমার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কয়েক দিন আগে সু চির একজন অজ্ঞাত উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, সু চি আশঙ্কা করছেন সেনাবাহিনী তাকে উৎখাত করতে পারে।
এনএলডি দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা মনে করেন, সেনাবাহিনী কট্টরপন্থী অঙ্ক চাইছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে সু চিকে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত করতে।
গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনে ২০ বছর কারাবন্দি ছিলেন মিয়াত সান। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় সরকারকে সমর্থন না করে দেশকে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সু চিকে সামরিক বাহিনীর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। সূত্র : দ্যা গার্ডিয়ান।



 

Show all comments
  • কামরুল ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৫১ এএম says : 0
    সব এক নায়ের মাঝি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ