Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উম্মাতের বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এ কথা অনস্বীকার্য যে, কোন বিষয়ে একক কোন ব্যক্তির চিন্তা- চেতনা ও মতামতের চেয়ে উক্ত বিষয়ে একদল মানুষের চিন্তা-চেতনা ও গবেষণার সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়ক। তা ছাড়া পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সঠিক বিষয়টিই বেরিয়ে আসা স্বাভাবিক। এ কারণেই শূরা (পরামর্শ) থেকে নির্গত ফলাফল অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, “সকল কাজে তাদের সাথে পরামর্শ করে, অত:পর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।”
একক গবেষণার তুলনায় সম্মিলিত গবেষণা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেননা সমকালীন বড় বড় আলিম, গবেষক, বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে সামগ্রিক দিক পর্যালোচনার মাধ্যমে সম্মিলিত ইজতিহাদ সম্পন্ন হয়। সম্মিলিত ইজতিহাদ ইজতিহাদকে চলমান রাখে এবং তা বন্ধ হওয়া রোধ করে। ইজতিহাদ ইসলামী আইনের একটি মৌলিক বিষয় ও ইসলামের গতিশীলতা প্রমাণের প্রধান অবলম্বন। সম্মিলিত ইজতিহাদ মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের পথ সুগম করে। কারণ মুসলিম উম্মাহ’র আলিমগণ একত্রিত হয়ে গবেষণা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধানে ব্রতী হয়। আর জনসাধারণ তাদের নির্ণীত বিধানের সাথে একমত হয়ে অনুসরণ করেন। যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্য ফুটে ওঠে।
সা¤প্রতিক বিষয়ের ইসলামী বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সম্মিলিত ইজতিহাদের গুরুত্ব বর্ণনা করে ড. ইউসুফ আল-কারযাভী বলেন, আধুনিক বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইজতিহাদকে সামষ্টিক ইজতিহাদের উন্নীত করতে হবে। যে পদ্ধতিতে আলিমগণ উক্ত উত্থাপিত বিষয়ে বিশেষত সাধারণ জনগণ যার অনুসরণ করবে সে বিষয়ে পরামর্শ ও পর্যালোচনা করবেন। নিশ্চয় একক মতামতের চেয়ে একদল মানুষের চিন্তা-গবেষণা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছানোর উপযোগী। ড. মুফসির কাহতানী তার গ্রন্থে শেখ মোস্তফা আল-যারকাহ এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতে ব্যক্তিগত ইজতিহাদের প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে তা বরং ক্ষতিকর, যা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে ভয়ঙ্কর রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাযহাবের ফকীহগণ ইজতিহাদের দরজা রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের একমাত্র অবলম্বন ইজতিহাদ এক্ষেত্রে আমাদেরকে ইজতিহাদের নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। আর তাহল ব্যক্তিগত ইজতিহাদের পরিবর্তে সম্মিলিত ইজতিহাদ এবং এর মাধ্যমে আমরা ইজতিহাদের প্রথম পথ চলা অর্থাৎ আবু বকর ও উমর রা. এর যুগে ফিরে যাব।
সা¤প্রতিক বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের পদ্ধতি অবগত হতে হলে আমাদেরকে ইতিহাসের ক্রমধারায় এ সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। ইসলামী আইনের প্রাথমিক যুগগুলোতে কীভাবে সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হত নিম্নে সংক্ষেপে তা বিধৃত হল- সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তদানে মহানবী সা. এর পদ্ধতি মহানবী সা. এর সময়ে সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তদান মূলত দু’টি বিষয়নির্ভর ছিল।
পবিত্র কুরআন সাধারণত সা¤প্রতিক অবস্থার বিশ্লেষণ, মুসলমানদের করণীয় বা তৎসংশ্লিষ্ট বিধান নিয়ে অবতীর্ণ হতো, যাকে উক্ত অংশ অবতরণের কারণ বা ‘শানে নুযুল’ বলা হয়। অতএব কুরআন অবতরণের সময়কালে উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতির বিধান সরাসরি কুরআন থেকে পাওয়া যেত। যাকে রাসূল সা. এর বাণীমূলক, কর্মসূচক ও মৌনসম্মতিমূলক সুন্নাহ বলা হয়। সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তদানের ক্ষেত্রে ওহী গায়র মাতলুর যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করা হত তার মধ্যে রয়েছে-
রাসূল সা. কুরআনের ব্যাখ্যা করতেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন: ‘আপনার প্রতি আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় ব্যাখ্যা করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। এ কারণে মহানবী সা. কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রদান করতেন, এর বিধান বাস্তবায়ন করতেন, এর আলোকে বিভিন্ন বিধান প্রয়োগ করতেন। এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে কোন কোন বিধান রহিত করতেন। উদ্ভূত বিষয়ের বিধান তিনি নিজেই প্রদান করতেন। বিশেষত যেসব বিষয়ের কোন বিধান কুরআনে আসেনি। রাসূল সা. এর ঘোষিত বিধানের মধ্যে রয়েছে দাদীর উত্তারধিকার, যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা, বিতরের সালাত ইত্যাদি
(চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ