Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিদায়ী আবাসিক সমন্বয়ক রবাট ডি ওয়াটকিনস্ গত বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সঙ্গে মত বিনিময়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে জাতিসংঘের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। কেবল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই নয়, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনও চায়। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠ হবে । কীভাবে এ ধরনের একটি নির্বাচন সম্ভবপর হতে পারে, সে ব্যাপারে একটি পরামর্শও তিনি দিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন দরকার। সেই মহাজনবাক্য পুনরুচ্চারণ করে তিনি আরও বলেছেন, কার্যকর গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভবপর নয়।
জাতিসংঘ বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, এটা কোনো নতুন কথা নয়। বিভিন্ন উপলক্ষে জাতিসংঘের তরফে একথা বলা হয়েছে। পুন:পুন: একই কথায় বলার একটি বড় কারণ হলো, দশম সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি এবং সে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না, এটা জাতিসংঘ বিশ্বাস করে। কাজেই সে চায়না একাদশ সংসদ নির্বাচন আগের নির্বাচনের মতো হোক। সকলেরই জানা, দশম সংসদ নির্বাচন মোটেই অংশগ্রহণমূলক ছিলনা। অধিকাংশ দল সে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠুও স্বচ্ছ ও ছিলনা। তা ছিল একতরফা ও জবরদস্তিমূলক একটি নির্বাচন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রধান শর্ত হলো, প্রধান বিরোধীদলসহ অধিকাংশ দল তাতে অংশ নেবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে জনগণের বা ভোটারদের স্বত:র্স্ফূত ও অবাধ অংশগ্রহণ থাকবে। এই শর্ত দুটি ওই নির্বাচনে অনুপস্থিত ছিল। একারণেই নির্বাচনটি দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। জাতিসংঘ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সে প্রশ্ন থেকে তারা এখনো পর্যন্ত সরে আসেনি। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ভারত। ভারত নির্বাচনটি সমর্থন করে এবং একথা কারোই অজানা নেই, ভারতের ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপের কারণেই ওইরকম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের মতো হোক, সঙ্গতকারণেই জাতিসংঘ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব তা কামনা করে না। তারা চায়, আগামী নির্বাচন প্রকৃতার্থেই অংশগ্রহনমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু হোক; গণতান্ত্রিকভাবে হোক। কার্যকর গণতন্ত্রে উত্তরণের এটাই প্রকৃষ্ট উপায়। ইতোমধ্যেই আমরা জেনে গেছি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশ অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা লাগাতারই এ অভিমত জ্ঞাপন করে যাচ্ছে। এমন কি ভারতও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বলে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বলে গেছেন। মনে যাই থাক, ভারত মুখে হলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি ও প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যেতে পারছে না। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে অনড়-অটল। এমনকি ক্ষমতাসীন দলও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। সরকারও চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বার বলেছেন, আগামী নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের মতো হবে না। তিনি ওই নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। এ কথার ব্যাখ্যায় বলা যায়, একতরফা ও জবরদস্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফলে দল ও সরকারের দেশে-বিদেশে যে অখ্যাতি হয়েছে, ভাবমর্যাদায় যে কালিমা লেপিত হয়েছে, তিনি আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে তার অপনোদন করতে চান। প্রকৃতপক্ষে এটাই যদি ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে এমন একটা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সকল দল নির্বাচনে অংশ নিতে এগিয়ে আসে এবং জনগণও ভোট দিতে উজ্জীবিত হয়।
নির্বাচন কমিশন তার নির্বাচনী কার্যক্রমের রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ শেষ করেছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে। সেই মতামতের মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐক্য যেমন আছে তেমনি কিছু বিষয়ে পরস্পরবিরোধিতাও লক্ষ্য করা গেছে। বিরোধীয় বিষয়গুলো বিশেষ করে, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের আগে-পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন, সংসদের অবস্থিতির মতো বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, সংসদ বিলোপ ইত্যাদির দাবি জানিয়েছে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চেয়েছে, যার অর্থ দাঁড়ায় বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন এবং সেখানে সংসদও বহাল থাকবে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি সে ছেড়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে।
ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা এদেশে এখন একটি রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন যথাযথ হয় না এবং তাতে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনা, অতীতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই তার প্রমাণ বহন করে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এর নিকৃষ্টতম নজির স্থাপিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধীদলের নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা সহজেই অনুধাবণ করা যায়। অতীতে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে-পরে ম্যাজিস্টেসি সেনাবাহিনী মোতায়েন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। ম্যাজিস্টেসি ক্ষমতা ছাড়া সেনাবাহিনী মোতায়েন তেমন ফল নাও দিতে পারে, সে প্রশ্ন রয়েছে। আর গণতান্ত্রিক বিশ্বে এমন কোনো নজির নেই যে, একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচন হয়। কাজেই এই সব তর্কিত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ফয়সালা হওয়া দরকার। এবং সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফলপ্রসূ সংলাপের অপরিহার্যতা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিরোধীদলগুলোর তরফে এ ধরনের সংলাপ চাওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও সংলাপের আবশ্যকতার কথা জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিতে পারে বলে তারা অভিমত দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তো এ সুযোগ আছেই। নির্বাচন কমিশনের জবাব ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কোনো আয়োজন নির্বাচন কমিশন করবে না। তিনি এও বলে দিয়েছেন, সরকার যেভাবে আইন করবে সেভাবেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। তার এ অভিমত থেকে বুঝা যায়, সরকারের করা আইন ও ইচ্ছার বাইরে নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে না, কাজও করবে না।
সরকার সংলাপের আয়োজন করবে, এমন আলামত বা ইঙ্গিত নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পূর্ণ নেতিবাচক। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ একসুরেই বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এ নিয়ে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে তারা একেবারেই নারাজ। দলের এই অভিমত সরকারের অভিমত হিসাবে গণ্য। ক’দিন আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য সরকারকে অবশ্যই আলোচনা ও সমঝোতায় আসতে হবে। আলোচনা -সমঝোতায় না-এলে এটাই প্রমাণিত হবে জাতির কাছে তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। একই দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জবাব দিয়ে বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। সে সুযোগ সে-ই বন্ধ করে দিয়েছে।
এই যদি বাস্তব অবস্থা হয় এবং বড় দু’দল স্ব স্ব অবস্থানে অনড় থাকে তাহলে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে? সরকার ও সরকারী দলের দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাব থেকে এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, সংবিধানের আওতাতেই তারা নির্বাচন করতে চায়। এ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতায় তারা যাবে না। আবার নির্বাচন কমিশনও সংবিধান ও সরকারের করে দেয়া আইনের বাইরে যাবে না। এখানে সরকার বা সরকারী দল ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান একই বরাবর। অথচ বিএনপি’র তরফে বারবারই বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে সে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বুঝাই যায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলোও বিএনপির পথ অনুসরণ করবে। সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, তেমন আশা কী করে করা যায়?
রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের তরফে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা অর্জন নির্বাচন কমিশনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনকে তার কাজ ও ভূমিকার মাধ্যমে এই আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পূর্বাপর যে ভূমিকা ও কথাবার্তা তাতে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও নিশ্চিত করা। সকলের জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ইতোপূর্বেকার একটি মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এই প্রত্যাশিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় সে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ বা ভূমিকা নিতে চায় না। অথচ সব দলের জন্য সমান সুযোগ ছাড়া কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের এই অপরগতার কারণ কি, সে প্রশ্ন প্রসঙ্গিক। বলা বাহুল্য, নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে। দৃশ্যত নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে। কিন্তু অন্তরালে সু² কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এবং অবশেষে সরকারের পছন্দমতই তা গঠিত হয়েছে। এখানেও দলীয়করণ হয়েছে। এ ধরনের একটি নির্বাচন কমিশনের তরফে দলনিরপেক্ষ আচরণ ও ভূমিকা প্রদর্শন করা যে দূরূহ, সেটা যে কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব। অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকা অপরিহার্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচনে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি ও পক্ষপাতের ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, যারা নির্বাচন কমিশনের হয়ে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন তারা, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষ ও দ্ব্যর্থহীনভাবে দায়িত্ব পালন না করে তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবাট ডি ওয়াটকিনস নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে অনেক প্রতিষ্ঠানের পুনগঠন দরকার, একথা কেন বলেছেন, এ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, বর্তমান সরকারের আমলে সংবিধানিক ও অন্যান্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকমাত্রায় দলীয়করণ হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রায়। অনেকেই বলে থাকেন, দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও পুলিশই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। নির্বাচনের সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারাই মূলত: নির্বাচন পরিচালনা ও ভোট গ্রহণের কাজ করেন। নির্বাচন কমিশনের সামান্য কিছু লোকবল আছে। বেশিরভাগ লোকবল প্রশাসন থেকেই আসে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে সুষ্ঠু আইনশৃংখলা একান্তভাবেই আবশ্যক। এ দায়িত্ব প্রধানত পালন করে পুলিশ। প্রশাসন ও পুলিশ যদি দলীয়করণপুষ্ট হয় এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করে তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। এমতাবস্থায়, প্রশাসন ও পুলিশে ব্যাপক রদবদল ও পুনর্গঠন জরুরি বললেও কম বলা হয়। এ প্রসঙ্গের উপসংহারে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশায় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রশ্ন হলো, সেটা কি সম্ভব হবে? যদি না হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচনও প্রত্যাশাযুগ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কাঙ্খিত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ-সমঝোতা যেমন হতে হবে তেমনি নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এটা কতদূর সম্ভব হবে সেটা খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন এবং এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি, আশার চেয়ে হতাশার পাল্লাই ভারি। কীভাবে নির্বাচন হবে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য এবং ঐকমত্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া না গেলে কাঙ্খিত নির্বাচনের প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, বর্তমানে যে রাজনৈতিক স্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্বাচন উপলক্ষে সে স্থিতি ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং সংঘাত-সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি হুমকিতে পড়ে বা বিনষ্ট হয় তবে উন্নয়ন, বিনিয়োগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব কিছুই ওপরই বিপর্যয়কর প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হবে। সরকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে, প্রচার-প্রপাগান্ড চালিয়ে গণতন্ত্রহীনতাকে আড়াল করতে পারবে না। উন্নয়ন চাইলে গণতন্ত্র চাইতে হবে। উন্নয়ন চাইলে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনও চাইতে হবে। এবং অবশ্য অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ