Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরীক্ষার হল থেকে রেকর্ড বইয়ে!

দ্রততম কিশোর হাসান, কিশোরী দিশা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সকালে ছিলেন জেএসসি পরীক্ষার হলে। বিকেলে সেই কিশোরই নিজের নামের পাশে লেখালেন জাতীয় রেকর্ড! জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে কিশোরদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এমনই এক কীর্তি গড়ে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে চমক দেখিয়েছেন হাসান মিয়া। গতকাল বিকেএসপির এই অ্যাথলেট ১০০ মিটার পাড়ি দিয়েছেন ১০.৬০ সেকেন্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১৫ সালে করা তারই অগ্রজ বিকেএসপির আশরাফুজ্জামানের (১০.৭০ সে.) দখলে।
জেএসসি পরীক্ষার্থী হলেও কিশোর বিভাগে খেলছেন বিকেএসপির হাসান। শারীরিক গঠনই তাকে খেলতে বাধ্য করেছে। এতেও কোন সমস্যা হয়নি নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরন ঘটাতে। সাভার ক্যান্টনমেন্টে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে দুপুর ১২টায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন বিকেএসপির এই অ্যাথলেট। বিকেলেই রেকর্ড গড়ে দ্রæততম কিশোরের খেতাব জিতে নেন। পরিবারের উৎসাহেই ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন হাসান। গত তিন বছরের কঠোর পরিশ্রমেই লক্ষ্যের সীমানা ছাড়িয়েছেন কুমিল্লার সীমানার পাড় গ্রামের এই সন্তান। যদিও পরীক্ষার জন্য ২০০ মিটারে খেলা হয়নি। ১০০ মিটারের (১০.৬০) পাশাপাশি রিলেতেও স্বর্ণপদক জিতেছেন হাসান।
তবে এদিন দিনের আলোচ্ছটা গায়ে মেখেছেন দিশা। কিশোরীদের ২০০ মিটার এবং রীলের পর ১০০ মিটারেও স্বর্ণ জিতেছেন দিশা। আগের দিন ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন দিশা। কাল কিশোরীদের বিভাগে জিতলেন ১০০ মিটার (১২.৮০ সে.) ও চার গুনিতক একশ’ মিটারেও। গতবার তানজিলার কাছে সোনা হারালেও এবার আর কোন প্রতিদ্ব›িদ্ব খুঁজে পাননি তিনি। তবে ১০০ মিটারের জন্য ইচ্ছে থাকলেও ছেড়ে দিয়েছেন লংজাম্পটি। তার কথায়, ‘অনেক হিসেব কষেই আমাকে চলতে হয়েছে। তিনটি স্বর্ণপদক জিততে ছাড়তে হয়েছে আরেকটি প্রিয় ইভেন্ট ছিল লংজাম্প।’ ভবিষ্যতে দেশের দ্রæততম মানবী শিরিনের চেয়েও ভালো টাইমিং করতে চান দিশা।
বালিকাদের বিভাগে হতাশা ছিল বিকেএসপির রুপা খাতুনের চোখে মুখে। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জিতেই তাকে নামতে হয়েছে লংজাম্পে। কিন্তু পায়ে আর কুলোয়নি। তাই কোনোভাবেই আর লংজাম্পে পদকটি কুড়িয়ে আনতে পারেননি। ‘খেলতে পারলে খেলবো, নাইলে দ্বাদশ শ্রেনীর পর খেলা ছেড়ে দেব’-সাফ কথা জানিয়ে দিলেন দ্রæততম বালিকা বিকেএসপির রুপা খাতুন। গত বছর ২০০ মিটার ও রিলেতে সোনা জিতেছিলেন। বাকি ছিল ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। সেটা এবার জিতলেন ১২.৬০ সেকেন্ডে। পাবনার এই অ্যাথলেট বলেন, ‘ভবিষ্যতে দ্রæততম মানবী শিরিন আপুর রেকর্ড ভাঙ্গতে পারলে থাকবো, নইলে আর খেলবো না।’ ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্রæততম বালিকার খেতাব জেতার পরই তাকে লংজাম্পে নামতে হয়েছে। তাই সাধারনত ৫ মিটারে লাফালেও কাল ৪ মিটারের বেশি পারছিলেন না। এ নিয়ে কম বিরক্ত নন তিনি। তাই এমন সাফ কথা জানিয়ে দিলেন বোধহয়।
জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে বিকেএসপির দিনে চমক দেখিয়েছেন নাটোরের সুলতান আহমেদ। উপস্থিত অনেকের দৃষ্টিতে বিকেএসপির নাদিম মোল্লা দ্রæততম কিশোর হলেও বিচারকের রায় যায় নাটোরের এই স্প্রিন্টারের দিকেই। তাদের মতে, ফটোফিনিশিংয়ে এগিয়ে ছিলেন নাটোরের এই স্প্রিন্টারই। ফলে দ্রæততম বালকের মসনদে বসলেন সুলতান। তিনি সময় নিয়েছেন ১১.৪০ সেকেন্ড। নাটোরের গুরুদাসপুর গ্রামের ছেলে সুলতান। ক্রীড়া বিজ্ঞান কিংবা আধুনিক অনুশীলন তার ভাগ্যে জুটেনি। কিন্তু জুনিয়র এই মিটকে সামনে রেখে তপস্যাও কম করেননি তিনি। প্রত্যেকদিন সকাল সাতটা থেকে ১০টা এবং বিকেলে-দু’বেলা কঠিন অধ্যাবসায় করেছেন সুলতান। আর তাতেই দ্রæততম বালকের সাফল্য ধরা দিয়েছে তার জীবনে। নিজের জমিতে কাজ শেষে বাবা দবিরুদ্দিন প্রামাণিক কিছু বেশি অর্থের আশায় অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। বাড়তি যোগানো অর্থে বাবা এক জোড়া বুট কিনে দিয়েছেন তাকে। সেই বুট নিয়েই দ্রæততম বালক হলেন সুলতান। আসন্ন যুব গেমসেও স্বর্ণপদক জিততে প্রতিজ্ঞ নাটোরের এই বালক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ