Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুদকের স্বচ্ছতার অভাব

বেসিক ব্যাংকের মামলা শুনানিতে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৮০ দিনের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও দুই বছরেও বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিষয়ক মামলার তদন্ত রিপোর্ট না দেয়ায় প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বসে বসে কি করেছে?। ৪ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি মামলার তদন্তে দুদকের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত মামলায় একজন আসাসির জামিন আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য আসে। শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের এতথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট।
ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, আমি দুদকের মামলা করতে গিয়ে খুবই হতাশ হয়েছি। এখানে কোনো দক্ষতা- যোগ্যতা নেই। এসব দুর্নীতি তো দেশে অবশ্যই হচ্ছে। যারা দুর্নীতি করছে তাদের ধরার মত আইনের আওতায় আনার মত দক্ষতা- যোগতা এবং নিষ্ঠা থাকতে হবে, আমার মনে হয় সেটার অভাব আছে। কোর্ট বলেছে, একই মামলায় আপনারা কাউকে ধরবেন কাউকে ধরবেন না এটাতো পিক অ্যান্ড চুজ।আদালতে আসামি সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের অসুবিধার কথা আদালতের কাছে বলেছি। কিন্তু আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট। কারণ, দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিতে ছিল ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে। যেটি সর্বশেষ সংশোধনী হয়ে এসেছে ১৮০ দিন। সেখানে দুই বছর অতিক্রম হয়েছে। আদালতের প্রশ্ন ছিল- তাহলে দুদক বসে বসে কি করেছে?
আদালতের নির্দেশনা দুদক প্রতিপালন করছে উল্লেখ করে খুরশীদ আলম খান বলেন, চার্জশিট অচিরেই হয়ে যাবে। ৪৮টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলা ইতোমধ্যে অনুমোদ দেয়ার জন্য পেন্ডিং আছে। দুদকের চেয়ারম্যান সেমিনারে যোগ দিতে দেশের বাইরে গেছেন। সামনের সপ্তাহে এলে আশা করি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এছাড়া হাইকোর্টযেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, দুদক সেগুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণের আলোকেই বাকি কাজ সম্পাদন করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট বলেছেন, দুদকের স্বচ্ছতার অভাব, দক্ষতার অভাব। আমরা সেটা মেনেই নিচ্ছি। দক্ষতা অবশ্যই আমরা বাড়াবো। স্বচ্ছতা আছে, স্বচ্ছতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবো। আদালতের প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আদালতের নির্দেশ পালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
আব্দুল হাই বাচ্চু কোথায় সেটা আপনাদের যেমন প্রশ্ন, আদালতেরও প্রশ্ন, সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন। আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে একজন সহ-আসামি শিপন আহমেদ, সেটা দুদক তলিয়ে দেখছে এবং বোর্ডের মেম্বারদের নোটিস দিচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশা করি অচিরেই দুদক ৪৮টি মামলার চার্জশিট দিতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বেসিক ব্যাংকের বোর্ড ডিরেক্টর যারা ঋণের অনুমোদন দিয়েছিলেন, তাদের কেন আসামি করা হয়নি এমন প্রশ্নে দুদক আইনজীবী বলেন, বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের মধ্যে যারা ছিল তাদের মধ্যে একজন ছিল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী ফখরুল ইসলাম মামলার আসামি। তিনি জেলে আছেন। বাকি বোর্ড অব ডিরেক্টর যারা আছেন আমরা উনাদের কর্মকান্ড অর্থাৎ বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার ওই সময়টা উনাদের কর্মকান্ড তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। যদি পাওয়া যায় অবশ্যই তারা আসামি হবেন। এ বিষয়টি তদন্ত করতে কতদিন লাগতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ আমি মনে করি বেশি দিন লাগবে না। খুব সহসাই এটা হয়ে যাবে।
ড.শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, আজকের মামলার আসামি বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঋণ পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। এই কমিটিতে ১৫-১৬ জন করে সদস্য থাকে। কোনো ঋণ প্রস্তাবই তারা করেনি। প্রত্যেকটি ঋণ প্রস্তাবে তারা নেতিবাচক পর্যালোচনা দিয়েছেন। তা সত্তে¡ও প্রত্যেকটি কমিটি থেকে একজন বা দুজন সদস্যকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেড় বছর দুই বছর ধরে জেলে আটকে আছে। এর প্রেক্ষিতে আদালতও মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, যেখানে তারা স্পষ্টত ঋণ দেয়ার জন্য অনুমোদন দেননি। তা সত্তে¡ও যেহেতু ঋণ দেয়া হয়েছে তাহলে তো উপরের লোকজনই ঋণ দিয়েছে। ঋণ দেয়ার অনুমোদনের জন্য কোনো প্রস্তাব নাই। যিনি ঋণ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেননি তাকে আপনারা আটকে রেখেছেন, আর অনুমোদনের প্রস্তাব না থাকা সত্তে¡ও উপরের কর্মকর্তারা যারা, বোর্ড সদস্য যারা ঋণ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে একটি মামলাও হয়নি। এটাই বিভিন্ন সময় কথবর্তায় উঠে এসেছে।
শাহদীন মালিকের মতে, জিনিসটা খুবই খামখেয়ালীভাবে হচ্ছে। খুবই বেআইনিভাবে হচ্ছে। এর পেছনে যারা আসল হোতা তারা সম্পূর্ণ আড়ালে। এই মামলাগুলো ফাইল হয়েছে দুই বছর আগে। আমার মনে হচ্ছে তাদের ব্যপারে দুদকের কোনো উৎসাহ নেই। আর যারা এক অর্থে চুনোপুটি এবং যারা সাধারণ অফিসার যারা না করেছেন তাদেরকে ধরে ধরে জেলে রাখা হচ্ছে।
আসামিপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, যেহেতু দুই বছর হয়ে গেছে, এতদিন ধরে যখন বড় রুই কাতলাদের কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি তার থেকে আদালতের একটি মন্তব্য ছিল এরকম, হয় দুদকের অদক্ষতা অথবা পক্ষপাতিত্ব বা এমনটা যদি কেউ মনে করে এত দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কেউ যদি মনে করে, এদেরকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, এরকমটা মনে করলে তা অযৌক্তিক মনে করা হবে না। এ ধরণের মন্তব্য আদালত করেছে। উল্লেখ্য, এর আগে হাইকোর্টে একই বেঞ্চ একটি মামলা শুনানিকালে দুদকের গতি কচ্ছবের ন্যায় বলেও মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ