পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : পদ্মা নদীর তীরে বিনোদন স্পট আর পার্কে জোড়ায় জোড়ায় কিংবা তিন চারজন মিলে বসে তরুণ-তরুণী প্রেম করছে কিংবা আড্ডা দিচ্ছে এমনটি আগে ভাবা হলেও এখন আর তেমনটি নেই। ল্যাপটপ ঘিরে কয়েকজনের গভীর মনোনিবেশ দেখে মনে হতেই পারে ওরা বুঝি প্রযুক্তির সর্ব্বোচ ব্যবহার করছে। জ্ঞান অন্বেষণ করছে। এটি খুবই ভাল ব্যাপার।
কিন্তু দিন বদলেছে। প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় আসার সুফলের পাশাপাশি কুফল মারাত্মকভাবে চেপে বসেছে। যার সহজ প্রমাণ মেলে একটু গভীর ভাবে ঐসব ল্যাপটপ ও মোবাইলের পর্দার উপর চোখ রাখলে শিউরে উঠতেই হবে। সব পর্দায় ভাসছে পর্নোগ্রাফী। জোড়ায় জোড়ায় বসারা কখনো একে অপরকে গুতো মেরে অনুভূতি প্রকাশ করছে। আর দল বন্ধুরা উহ আহা এমন নানা ধ্বনি দিচ্ছে। আগে সাইবার ক্যাফের ছোট ছোট খুপড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মোবাইলে রয়েছে এসব। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে নিরিবিলি স্থানে। দেখে মনে হবে ওরাতো বসে গল্প করছে। দোষের কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবে যে উল্টো। স্কুলের ছেলে-মেয়েদের কিছুটা ভয় থাকলেও ওদের চেয়ে একটু বড়রা যে বাঁধন হারা। তাছাড়া তাদের দেখার বকাঝকা করার কেউ নেই।
শিক্ষানগরী হিসাবে খ্যাত রাজশাহীতে লেখাপড়া করতে আসে লাখের বেশী ছেলে-মেয়ে। এরা আশ্রয় নেই ছাত্রাবাস, মেস কিংবা বাসা বাড়িতে। এরা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, পলেটেকনিকসহ বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ম্যাটসে লেখাপড়া করে। এরাই বেশী বাঁধন ছাড়া। স্থানীয়রা একটু লুকিয়ে ছাপিয়ে চলাফেরা করলে এদের ওপরের দরকার নেই। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানার মত করে হারিয়ে যেতে চাই অন্য ভুবনে। এরাই আড্ডা জমায় বিনোদন স্পটগুলোয়। কেউ কেউ মরা পদ্মার বালিচরের মাঝেও চলে যায় একটু নিরিবিলির জন্য। ওসব দেখার পাশাপাশি চলে বেলেল্লাপনাও। নগরীর আনাচে-কানাচের ছোট-বড় মোবাইল ও কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের দোকান। মোবাইল রিচার্জসহ গান ডাউনলোর্ডসহ বিভিন্ন দোকানে পয়সা দিলেই মিলছে অশ্লীল নাচগান চলচিত্র ভিডিও ক্লিপ ডাউন লোডের কার্যক্রম। বিভিন্ন ইলেট্রানিক্স যন্ত্রের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে পর্নোগ্রাফী। যতবেশী রগরগে তার দাম তত বেশী। দশ থেকে দেড়শো টাকায় মিলে এসব। সিডি ছাড়াও পর্নোগ্রাফীর ম্যাগাজিনও সহজলভ্য।
নগরীর অর্ধশত সাইবার ক্যাফের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সব শ্রেণীর তরুণ সময়ে অসময়ে নিমগ্ন থাকছে ইন্টারনেটে। তারা যেসব সাইট ব্রাউজ করে তার বেশীর ভাগ পর্নোসাইড। সেখান থেকেও অবাধে পর্নো ছবি ডাউনলোড করা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফী ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বেড়েছে মাদকাশক্তি। এর এসবের জন্য অর্থযোগাতে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করছে। বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনাও। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী আর অভিভাবকরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন পর্নোগ্রাফীতে আসক্তরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। যার বেশিরভাগই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। এরা লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এক পর্যায়ে এরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের ব্যক্তিত্বও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হচ্ছে নেশাগ্রস্ত। তারমতে সমাজের সর্বক্ষেত্রে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে পর্নোগ্রাফী সম্পর্কে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। আর তা সহজলভ্য হওয়ায় তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমাদের সামাজিককরণ প্রক্রিয়ায় মেয়েদের পণ্য হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে। ফলে মেয়েদের সম্পর্ক সম্মানবোধ জাগ্রত হচ্ছে না। তাছাড়া সুস্থ ও বিকাশ বিনোদনের অভাবের কারণে তরুণরা পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত হচ্ছে। বিজাতীয় আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনেও কম দায়ী নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন জরিপ করে দেখা গেছে পর্নোগ্রাফীতে আসক্তরা পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হচ্ছে। এখন অন্যান্য মাদকের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে উত্তেজক ইয়াবা নামক মাদকটি। নেশার টাকা যোগাড় করতে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। পর্নোগ্রাফী উৎসাহ দিচ্ছে ধ্বংসে। জরিপে দেখা যায় সম্প্রতি রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণের মত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িতদের বয়স কুঁড়ি বছরের মধ্যে। এরা আসক্তির খরচ যোগান দিতে এসবে জড়িত হচ্ছে। পর্নোগ্রাফী আর মাদক হাতের নাগালে হওয়ার কারণে যেমন অপরাধপ্রবণতা বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে। তেমনি সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে। এর নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। পুলিশের কর্তারাও বলছেন এটি আমাদের সমাজের জন্য অভিশাপ। এসব যেন যুবসমাজ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে যাতে সহজলভ্য না হয় সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। অন্যান্য অভিযানের সাথে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। আটক হয়। পরে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে একই কাজ শুরু করে। এরপরও আমরা সতর্ক। অভিভাবকরা শংকা প্রকাশ করে বলেছেন যেভাবে পর্নোগ্রাফী আর মাদকের বিস্তার ঘটছে তাতে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। এক্ষুনি এসব প্রতিরোধে কঠোর ব্যবহার না নেয়া হলে এর বিরূপ প্রভাব থেকে কেউ রেহায় পাবে না। শুধু শহরেই নয়, গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে পর্নোগ্রাফী। শিক্ষার্থী নয় রিকশা চালকসহ বিভিন্ন শ্রমজীবীদের হাতের মোবাইলেও বিস্তার ঘটেছে এটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।