Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে উভয় দলই সঙ্কটে

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ষ চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে
ষ সা¤প্রতিক পুলিশী আচরণ অবাধ নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে


 আগামী বছরের প্রথমভাগে অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তদবীর ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। দুই দলেই মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী প্রকাশ্যে ও গোপনে সক্রিয় থাকলেও কোন দল থেকে মেয়র পদে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে যথেষ্ঠ কৌতুহল রয়েছে জনমনে। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ বিভ্রান্তি কাজ করছে এখনো। তবে আসন্ন এ নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তা নিয়েও আমজনতা থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মাঝে অনেক আগ্রহ রয়েছে। অতি স¤প্রতি বরিশালে বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশী হামলা এবং প্রকাশ্যে এক কাউন্সিসলর সহ একাধিক নেতার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় এ সন্দেহ আরো জোরদার হচ্ছে। বরিশালসহ দেশের ৪টি সিটি নির্বাচন সরকারি দলের কছে যথেষ্ঠ সম্মানের বিষয় হলেও বিরোধী শিবিরও বিষয়টিকে যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হিসেব বিবেচনা করছে। তবে এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়েই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ইতোমধ্যে যথেষ্ঠ বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছে।
২০০২ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠিত হবার পরে বিধি মোতাবেক অধুনালপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান আহসান হাবীব কামাল ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব লাভ করেছিলেন। কিন্তু ২০০৩-এর প্রথম সিটি নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারোয়ারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি পরাজিত হন। ১/১১ সরকারের অধীনে ২০০৮-এর দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন ৬৭৫ ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরফুদ্দিন সান্টুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৩-এর ১৫জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে বিএনপি পুনরায় আহসান হাবীব কামালকে মনোনয়ন দিলে সারোয়ার সহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচন্ড দাপটের মধ্যেও ঐ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কামালের পেছনে কাজ করে। ফলে আওয়ামী লীগ যাকে ‘বরিশালের উন্নয়নের রূপকার’ হিসেবে দাবি করছিল, সেই শওকত হোসেন হিরন ১৭ হাজারেরও বেশী ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
কিন্তু গত চার বছরাধিককালে আহসান হাবীব কামাল বরিশাল মহানগরবাশীর প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন তা নিয়ে নানামুখি মন্তব্য আছে। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছেও তিনি অনেকটা বিতর্কিত হয়েছেন। মাথাভারী প্রশাসনের চাপে দেড় শতাধিক কোটি টাকা দায়-দেনা নিয়ে ২০১৩-এর সেপ্টেম্বরে মেয়রের দায়িত্ব লাভ করে কামাল সে পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেননি। উপরন্তু নতুন পে-স্কেল ঘোষণার পরে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে পরেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। উপরন্তু সরকারি থোক বরাদ্ধ সহ প্রকল্প সাহায্য হ্রাস পাবার কারণেও নগর প্রশাসন জনগনের চাহিদা কতটুকু পূরণ করতে পেরছে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নগর ভবনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের আহসান হাবীব কামালকে অসহযোগীতা করছেন রাজনৈতিক কারণেই। এ মন্তব্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। এমনকি গত চার বছরাধিককালে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমনি যথেষ্ঠ বাধাগ্রস্থ হয়েছে, তহবিল সঙ্কটে চলমান রক্ষণাবেক্ষন কাজও অনেক ক্ষেত্রেই মুখ থুবরে পড়েছে।
এসব বিষয়ের মধ্যেই আগামী বছরের প্রথমভাগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ নির্বাচন। আর সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র একাধীক প্রার্থী স্বরবে ও নীরবে মাঠে রয়েছেন। সাবেক চীফ হুইপ ও বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র জেষ্ঠ পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র পদে নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছে আরো তিন বছর আগে থেকে। এমনকি বরিশাল সদর আসনের এমপি ও প্রয়াত শওকত হোসন হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেসা আফরোজ দলীয় সভায় তাকে সমর্থনও দিয়েছেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে আরো একাধীক প্রার্থী সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর আপন ছোট ভাই ছাড়াও ২০০৮-এর নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনের এমপি প্রার্থী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুখ শামিম এবং বরিশাল সদর আসন ও পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে একাধিকবারের পরাজিত প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমও সিটি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। কিন্তু এখনো মাঠ কর্মীদের সমর্থনের পাল্লা সাদেকের দিকেই ভারী বলে মনে হচ্ছে। তবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তটি দলনেত্রী শেখ হাসিনাই গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
এদিকে বিএনপিতেও বরিশাল সিটির মেয়র পদে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রকাশ্যে ও নীরবে তৎপর রয়েছেন। বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল ছাড়াও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি এবাদুল হক চান এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন। তবে দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই চাচ্ছে সাবেক মেয়র ও এমপি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার মেয়র পদে নির্বাচন করুক। কিন্তু সারোয়ার পূর্বের ন্যায় বরিশাল সদর আসনে এমপি পদে নির্বাচন করতেই বেশী আগ্রহী বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে মেয়র পদে নির্বাচনে তার আইনগত বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে। তবে অনেকই আবার এমন মন্তব্যও করছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচনে সারোয়ারের মত শক্তিশালী প্রার্থী ছাড়া প্রতিদ্ব›দ্বীতার অবস্থান সৃষ্টি করা কঠিন হতে পারে। ঘনিষ্ঠজনদের মতে এমপি পদে নির্বাচনে বেশী আগ্রহী হলেও দলীয় চেয়ারপার্সন নির্দেশ করলে সারোয়ার অন্য কোন বিকল্প চিন্তা নাও করতে পারেন।
ফলে উভয় রাজনৈতক দলেই বরিশাল সিটি মেয়র পদে মনোনয়নের বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে এখনো। তবে কবে নাগাদ দলীয় প্রার্থী বাছাই করে প্রধান দুটি দল মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবে, তা এখনো নিশ্চিত নয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের কাছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র জেষ্ঠ পুত্র সাদেক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগরীর রাজনীতিতে ইতোমধ্যে নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরী করে নিয়েছেন। নিজস্ব অনুসারী সহ একটি আলাদা বলয় তৈরী করতেও সক্ষম হয়েছেন তিনি। অপরদিকে হিরনের অনুসারী বলে পরিচিত কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা তাদের নিজস্ব কর্মকান্ডে দলকে যথেষ্ঠ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে মাঝে মধ্যেই। চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজী থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে এসব কথিত নেতা বরিশাল মহানগরীতে শাষক দলকে যথেষ্ঠ বেকায়দায় ফেলেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বরিশালে ‘অভিভাবকবিহীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনই এর অন্যতম কারণ হলেও মাস কয়েক আগে নতুন করে মহানগর কমিটি গঠনের পরে সে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। নতুন কমিটিতে সাদেক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হলেও এখন তার গুরুত্ব সভাপতি ও সম্পদকের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বেশী।
অপরদিকে অতি স¤প্রতি বিরোধী দলের একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশী নির্মম হামলা সহ এক কাউন্সিলর গ্রেফতারকৃতদের প্রকাশ্যে নির্যাতন আসন্ন সিটি নির্বাচন কতটুকু অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে নুতন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। জেল জুলম সহ হামলা-মামলা দিয়ে বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হয়রানীর অভিযোগের মধ্যেও পক্ষপাতহীন একটি অবাধ নির্বাচন হলে বরিশাল সিটি নির্বাচনের ফলাফল শাষক দলের জন্য কতটা আশানুরূপ হবে তা নিয়ে নতুন সংশয় সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি নির্বাচন

১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ