Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সন্তানরা হোক সোনার মানুষ

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৪. সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষাদান : সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি মায়ের ওপরই ন্যস্ত। যেহেতু শিশুরা মায়ের সান্নিধ্যে বেশি থাকে এবং মায়ের সাথে প্রথম কথা বলতে শুরু করে। তাই মাতাই হলেন শিশুর প্রধান তদারক ও গুরু। মায়ের আচরণ, তাঁর কথাবার্তা এমনকি চাল-চলন সবকিছু শিশুর অনুসরণ করে তাই মাকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। শিশুর এ স্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মাতা-পিতা উভয়কেই ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হতে হবে এবং শিশুকে সে মোতাবেক গড়ে তুলতে হবে।
১৫. পিতৃহীন সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করা : পিতার সাথে মাতাও সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা করবেন। আর দুর্ভাগ্যবশত যদি পিতা মারা যান, তবে মাতাকে এককভাবে এ গুরু-দায়িত্ব পালন করতে হবে। এরূপ ত্যাগ তিতিক্ষা ও গুরু-দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে মহান আল্লাহ মাকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রদান করবেন। এমন কি রোজ হাশরে ওই মা মহানবীর সা. পাশাপাশি অবস্থান করবেন বলে হাদীসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
১৬. পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা : সুস্থ-সবল সন্তান গড়ে তোলার জন্য সন্তানের পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে হবে। নিজেকে ও পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাকেই সন্তানের পরিষ্কার পরিচছন্নতার সবক দিতে হবে। নিজেদের ঘর-দরজা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা মায়ের দায়িত্ব। আল কুরআনে এসেছে, ‘‘বলুন! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেমন সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করে দিতে পারে?’’ (সূরাআল আরাফ,৩২)
১৭. মানসিক গঠন : শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা সীমাহীন। মা তার সন্তানের মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে পারেন। মায়ের উন্নত চিন্তা, রুচি, ভাষা, ভাবধারা, আদব-কায়দা, তাহজিব-তমদ্দুন-কৃষ্টি-সভ্যতা, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ইত্যাদি শিশুর মন-মানস গড়ে তোলার সহায়ক হয়। কাজেই মাকে শিশুর মানসিক গঠন ও বিকাশে উত্তম ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের মধ্যে উন্নত মানসিকতা সৃষ্টি করবেন। সবসময় সন্তানদেরকে আশাবাদী করবেন। কোনো ব্যাপারে নিরাশ হতে দেবেন না। নিয়মিত জান্নাত ও জাহান্নামের জীবন্ত চিত্র তাদের সামনে তুলে ধরবেন। এতে তাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম পরকালের মুক্তি ও পুরস্কারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হবে। তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে তুলবেন। কখনো যেনো তাদের আত্মসম্মানবোধে আঘাত না লাগে, সেদিকে লক্ষ রাখবেন। বৈধ সীমা পর্যন্ত তাদের মানসিক প্রবণতাকে উৎসাহিত করবেন। তাদেরকে পরিকল্পিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলবেন। অপসংস্কৃতিক সয়লাভ থেকে বেঁচে থাকার মতো তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন। তাদের মধ্যে বীরত্ব, দৃঢ়তা অবলম্বনের শিক্ষা দেবেন। এমনভাবে সঠিক জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে স্থির করে দেবেন যাতে আজীবন তারা এর ওপর অটল-অবিচল থাকে। তাদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সৃষ্টি করবেন
১৮. ব্যবহারিক শিক্ষা : দৈনন্দিন অনেক কাজ আছে যা মা শিশুকে সহজে শেখাতে পারেন। নিজেদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় গোছানো, ঘর-দুয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, অজু-গোসল করে পাক-সাফ হওয়া ইত্যদি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে পারেন। বিশেষ করে মেয়ে সন্তানকে গৃহস্থালী কাজ-কর্মে অভ্যস্ত করে তোলা, রান্না-বান্না ও অন্যান্য কাজের শিক্ষা দিয়ে সুনিপুন গৃহিনী করে গড়ে তুলতে পারেন।
১৯. তত্ত¡াবধান : একজন আদর্শ মাতার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হচ্ছে তার সন্তানদের তত্ত¡াবধান করা, সন্তানদেরকে সু-মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া। মাকেই মমতাময়ীর ভূমিকা নিয়ে সন্তানকে উত্তমরূপে গড়ে তুলতে হবে। কেননা, ইসলাম মাকে গৃহের দায়িত্বশীলরূপে স্থির করেছে। হাদীসে এসেছে : আর স্ত্রীরা তার স্বামীর এবং পরিবার পরিজন ও সন্তানদের তত্ত¡াবধায়ক। কাজেই সেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৭১৩৮)
২০. সবার হাসি-কান্নার সাথি বানানো: আপনার সন্তান যেন হয় সমাজের সব মানুষের হাসি-কান্নার সাথি। শুধু সুখ সাগরে ভেসে শোকার্ত না হয়ে মাঝে মধ্যে তাকে কোর্ট পাড়া, রেল স্টেশন, ডাস্টবিন আর লোকালয় কিংবা গাছতলায় গরীব-দুঃখি জীর্ণ-শীর্ণ বস্ত্রহীন বা অর্ধনগ্ন শুয়ে থাকা মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র দেখান। তাদের প্রতি দয়াদর্শনের সবক দেয়ার চেষ্ঠা করুন। নবী করীম সা. ইরশাদ করেন, ‘যারা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না , আল্লাহ তাআলাও তাঁর প্রতি অনুগ্রহ দেখান না।
২১. বড়দের শ্রদ্ধা করার তালিম দেয়া: বেশক সব মা-বাবারাই বড়দের শ্রদ্ধা করার তালিম দিয়ে থাকেন। বক্ষমান প্রবন্ধে বড় দ্বারা সমাজে যাদের কোনো প্রভাব নেই এমন বড়ই বুঝানো হয়েছে। আপনি সমাজের বড় মাপের লোক দু’চার জন কাজের লোক সর্বদা প্রস্তুত থাকে আপনার হুকুম তামিল করার জন্য। অথবা রাস্তার পাশে রিকশা-সিএনজি, টমটম ইত্যাদি গাড়ী নিয়ে বসে আছে যে জন তাদের প্রতি কী রুপ ব্যবহার করবে আপনার সন্তান। এটা আপনাকে বলে দিতে হবে। নয়তো বা আপনার সন্তানের ভদ্রতার সীমা থাকবে শুধু আত্মীয়-স্বজন আর মা-বাবার রিলেটিভদের মধ্যে।
সুস্থ পরিবার ও সমাজ গঠনে ইসলাম সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল পরিবার। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার শুধু একটি উত্তম সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং একটি পবিত্র সংস্থা। পরিবারের সুখ, শান্তি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিক। নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র হল পরিবার। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র করে। পবিত্র আল কোরআনে পারিবারিক সদস্যদের মুহসিনীন বা প্রাচীর ঘেরা দুর্গে অবস্থানকারী সুরক্ষিত লোকজনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইসলামে পরিবার শুধু স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবারের পরিসর আরও ব্যাপক। নিকটাত্মীয়স্বজনও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দয়া, করুণা এবং সহানুভূতি তো আছেই, বাড়তি দায়িত্বশীলতার প্রশ্নও জড়িত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা ও স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি ও সর্বাঙ্গীণ উন্নতি; স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে চললে পারিবারিক পরিবেশ অনেকাংশে সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হল মানুষ গড়ার মূল কেন্দ্র এবং সমাজ গঠনের প্রধান ভিত্তি। এ জন্য পরিবার গড়ার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে যতœবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তাই আসুন উপরোল্লেখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণে আমরা সবাই সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ