Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দু’শতাধিক এজেন্সির বিরুদ্ধে বিচার শিগগিরই

হজে প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগ

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত হজে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে দু’শ আটাইশটি অভিযুক্ত হজ এজেন্সি’র বিরুদ্ধে শিগগিরই শুনানী শেষে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। নানা অনিয়ম ও প্রতারণার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সউদী হজ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই আরো ৪৫ টি বাংলাদেশী বেসরকারী হজ এজেন্সি’র বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। আগামী ২০১৮ সালের হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় এবং কোনো প্রতারণা ও অনিয়মের ঘটনা না ঘটে সে জন্যও ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে। হজ এজেন্সি’র বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগসমূহ তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ পেশ করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনিসুর রহমান সম্প্রতি তিনটি কমিটি গঠন করেছেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রথম কমিটি’র প্রধান হচ্ছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব মো: হাফিজ উদ্দিন। দ্বিতীয় কমিটি’র প্রধান হচ্ছেন একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব হাফিজুর রহমান এবং তৃতীয় কমিটির প্রধান হচ্ছেন যুগ্ন-সচিব আমিন উল্লাহ নূরী। এদিকে, আগামী ২২ নভেম্বর বিয়াম মিলনায়তনে হজ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কর্মশালার (২০১৭) আয়োজন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে যথাক্রমে বক্তব্য রাখবেন ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি। নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে চলতি মাসের শেষের দিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদস্থ ইফা’র সম্মেলন কক্ষে শুনানী শেষে দায়ী হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব মো: হাফিজ উদ্দিন গতকাল তার দপ্তরে ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যুগ্ন-সচিব হাফিজ উদ্দিন বলেন, যে সব হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। যেসব হজ এজেন্সি প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বাড়ি দেয়নি , দূরে বাড়িতে রেখেছে , হজযাত্রীদের টাকা নিয়ে হজে না নিয়ে যারা পালিয়েছিল এবং খাবার সঠিকভাবে সরবরাহ করেনি তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দায়ীদের লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত, এবং জরিমানা করা হবে বলেও যুগ্ন-সচিব হাফিজ উদ্দিন উল্লেখ করেন।
গত হজে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত কতিপয় হজ এজেন্সিগুলো হচ্ছে, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (১০৪১), সিয়াম ওভারসীজ, করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, গুলশান-ই-মোহাম্মদীয়া, ইউনাইটেড ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, সুবহা ইন্টারন্যাশনাল, দারুস সুন্নাত ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, আল সাফা এয়ার ট্রাভেলস (২৩৩), মিলিনিয়াম এয়ার ট্রাভেলস, আল আমাদত ট্রাভেলস, বাবুস সালাম স্কাই এয়ারওয়েজ, মেসফালা ট্রাভেলস, গোল্ডেন ট্রাভেলস, সোনিয়া ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, এয়ার ল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল, মিডিয়া, আমানা বিজনেস সলিউশন, ফরহাদ এয়ার ট্রাভেলস, মারওয়া ট্রাভেলস, শোহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, লাকী ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম, জিননুরাইন ট্রাভেলস, মিনার এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল মারিয়া ট্রাভেলস, সাউথ এশিয়া ট্রাভেলস এন্ড হজ সার্ভিস,, নাইম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস, গোল্ডেন ট্রাভেলস এন্ড কার্গো সার্ভিস, আশা এভিয়েশন, পেনাং ট্রাভেলস, আল বালাদ ওভারসীজ, কক্সবাজার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, তিশা এয়ার সার্ভিস, সারা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, এম এ এম ইন্টারন্যাশনাল, রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হাবিব এয়ার ট্রাভেলস, আল মানার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, গালফ ট্রাভেলস, মিম ট্রাভেলস, ঢাকা হজ কাফেলা এন্ড ট্রাভেলস (পার্টনার উজ্জ্বল) , আল রাইয়ান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, মামুন ট্রাভেলস লি:, আমদা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস ও নর্দান ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল ।
সাউথ এশিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী প্রতারক সালেহ আহমেদ রংপুরের খলিফাপাড়ার গ্রæপ লিডার হাফিজারের মাধ্যমে রংপুরের ১৬জন হজযাত্রী’র প্রায় ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে হজ ভিসা করে যাত্রীদের হজে না নিয়ে হজের মৌসুমে সউদী আরবে পালিয়ে যায়। রংপুরের হজযাত্রী নুর আলম ও তার মাতা নূর জাহান হজে যাওয়ার জন্য গ্রæপ লিডার হাফিজারের মাধ্যমে প্রতারক সালেহ আহমেদের কাছে প্রায় ৬ লাখ টাকা জমা দেয়। হজযাত্রী নূর আলমের মাতা নূর জাহান মারা গেলে তার হজের টাকাও ফেরত দেয়নি প্রতারক সালেহ আহমেদ। সাউথ এশিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী প্রতারক সালেহ আহমেদ রংপুরের হজযাত্রী মো: আবুল আউয়াল শাহ, বেগম হোসনে আরা, খোরশেদ আলম, মো: নূর ইসলাম, জেসমিন পারভীন নাছিমা, এস এম নজরুল ইসলাম, নুরন্নাহার বেগম শাহদার রহমান, সুলতান মিয়া, নূরে আলম সিদ্দিস, খাইরুজ্জামান, সেলনা ডেইজি সদরুন নেছা খন্দকারের কাছ থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে হজ এজেন্সি আল-সাফা এয়ার ট্রাভেলসের (২৩৩) স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমানের মাধ্যমে এসব হজযাত্রীর হজ ভিসা করে তাদের হাজী ক্যাম্পে এক সপ্তাহ ফেলে রেখে টিকিট না দিয়ে হজের সময়ে সউদী আরবে পালিয়ে যায়। গ্রæপ লিডার হাফিজার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারক সালেহ আহমেদ গত কয়েক বছর যাবত এ ধরনের প্রতারণা করেনি। কিন্ত গত হজে সে জঘন্যতম প্রতারণ করে হজ নিয়ে কেলেংকারী করে সউদীতে পালিয়ে গেছে। হজ শেষে দেশে ফিরে সে হজযাত্রীদের সকল টাকা তুলে নিয়ে গেছে। প্রতারক সালেহ আহমেদ এখনো প্রতারণার শিকার হজযাত্রীদের সাথে কোনো যোগাযোগ না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ম মন্ত্রী, পরিচালক হজ, ও হাবে লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয়েছে। প্রতারণার শিকার এসব হজযাত্রী আগামীতে হজে যেতে পারবে কি না তা’ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ