Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আ’লীগ-জাপার প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও নিশ্চুপ বিএনপি
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। ইতিমধ্যে আ’লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। রসিক নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছে দলটি। ফলে একদিকে যেমন বিএনপির নেতাকর্মীরা দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব আছেন তেমনি ক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন বিএনপি সমর্থিত সাধারণ ভোটাররা। তাদের মতে রংপুর সিটি কর্পোরেশন বিএনপির জন্য একটি সম্ভাবনাময় সিটি হলেও বিএনপি এখানে গুরুত্ব দিচ্ছে না। অজ্ঞাত কারনে এখানে কোন শক্তিশালী প্রার্থী দিচ্ছে না! বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এখন যিনি মাঠে আছেন তাকেও দলীয়ভাবে কোন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। তিনি ব্যক্তি ইমেজেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন গত নির্বাচন থেকে। অথচ বিএনপি একটু গুরুত্ব দিলেই এখানে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে যেতে পারবে। তবে নগরবাসী এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব কষছেন বেশ গুরুত্ব দিয়েই।
ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২শে নভেম্বর। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর বাছাই এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪’শ ২১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬’শ ৫৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৭’শ ৬২ জন। নগরীর ১’শ ৯৬টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১’শ ৭৭টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, সিটি কর্পোারেশন নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। চায়ের দোকার থেকে অফিস পাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী গল্প-আড্ডা। ইতিমধ্যে প্রধান দু’টি দলের প্রার্থী ঘোষণা এবং মনোনয়নপত্র সংগৃহিত হলেও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করায় বিষয়টি নিয়ে হতাশ আওয়ামী এবং জাতীয় পার্টি বিমুখ ভোটাররা। তফশিল ঘোষণার আগে থেকেই আওয়ামীলীগের প্রায় দেড় ডজন নেতা মাঠে নামেন এবং দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করেন। এরমধ্যে অন্যতম বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিক, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, আওয়ামলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান এমপির ছেলে রাশেক রহমান, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধাক্ষ্য মোঃ আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রেজাউল ইসলাম মিলন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল। দলীয় মনোয়নের জন্য সবাই দৌড়-ঝাঁপ করলেও অবশেষে কেন্দ্র থেকে গত ১১ নভেম্বর বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ সময় দল থেকে সকলকে তার পক্ষে মাঠে নামারও নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক আওয়ামলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশারীও সকলেই ঝন্টুর সাথেত হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করে দেন। তবে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিক নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ঘোষণা দেন। অপর দিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অনেক আগেই এবার মহানগর কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দলীয় প্রার্থী হিবেবে ঘোষণা দেন এবং স¤প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে দলীয় মনোনয়ন তুলে দেন। মোস্তফা এর আগে রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তিনি সেখান থেকে পদত্যাগ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে দ্বিতীয় স্থানে থাকেন। বিজ্ঞজনদের মতে, গত নির্বাচনে জাপার দলীয় কোন্দল এবং পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের দ্বি-মুখী আচরণ এবং দফায় দফায় মত পরিবর্তনের কারনেই মোস্তফা পরাজিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তৎকালীন নেতা এবং সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিকও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। তবে এবারেও জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার মাঠে আছেন। তিনিও নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে দ্যার্থ কন্ঠে জানিয়ে দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে হুশিয়ারী ও বহিস্কারের হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে। তবে আসিফ শাহরিয়ারও পাল্টা জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন তিনি করবেন। তার মতে, ভোটাররা এবারও এরশাদ স্যারকে ‘না’ উপহার দিবে। তবে তার এই সিদ্ধান্তকে নগরবাসী জাতীয় পার্টি এবং প্রার্টির প্রার্থী মোস্তফার জন্য অনেকটা হুমকি স্বরুপ মনে করছেন। তাছাড়া বিএনপি এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন কাওছার জামান বাবলা। দলীয় কোন্দলের কারনে গত নির্বাচনে তিনি দল থেকে তেমন কোন সাপোর্ট পাননি। এবারেও তিনি ব্যক্তি ইমেজেই নিজ গতিতে এগিয়ে চলেছেন। অথচ এখানে বিএনপি একজন ভালো এবং শক্তিশালী প্রার্থী দিলে অথবা কাওছার জামান বাবলাকেও পুরোপুরি সমর্থন দিলে অনেক দুর এহিয়ে যেতে পারত। বিশেষ করে জামায়াতের একটি বড় অংশের ভোটারের ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে পারত।
এদিকে, জাতীয় পার্টির কোন্দল এবং বিএনপির প্রার্থী সংকটের সুযোগ নিয়ে দাপিয়ে চলেছেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি এবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে নগরবাসী এবার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব কষছেন বেশ গুরুত্ব দিয়েই। তারা অত্যন্ত জোরালোভাবেই দেখছেন পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক হয়ে তারা কি পেলেন? বর্তমান মেয়র কতটুকু নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন নগরবাসীকে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকার নাগরিকগন এ হিসাবটা কষছেন বেশ গুরুত্ব দিয়ে। কারন ইউনিয়ন থেকে নগরবাসী হয়ে তারা নগরীর কোন সুযোগ-সুবিধাই পাননি! এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিশদ অভিযোগও তুলেছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ