Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনায় সহযোগিতা করতে চীনের সম্মতি

| প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় চীন সহযোগিতা করতে রাজি আছে বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফরে আসা ইয়াং ই গত শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সংকট সমাধানের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। আলোচনায় চীনের পূর্ব অবস্থান অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমাধানের ব্যাপারে ইয়াং ই জোর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, চীন মিয়ানমারকে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সংকটের সমাধান করতে বলেছে। তিনি আরো বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট; কিন্তুু বাংলাদেশ এ সংকটের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সন্ধ্যায় চীনা দূতাবাসে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহযোগিতা দিয়ে যাবে তার দেশ। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গত আরও একটি বিষয় সামনে এনে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের উদ্যোগের গতি মন্থর হোক, চীন তা চায় না। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে তার দেশের নাগরিকদের নিরাপদে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে হবে। তিনি এও পুনরুল্লেখ করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের লোক এবং তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের অবস্থান ও অভিপ্রায় সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণেও মূলত এই একই কথা বলেন। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সংকটের সমাধান আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে বাংলাদেশের সংশয় থাকলেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও সংলাপকে বাংলাদেশ নাচক করে দেয়নি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অংসান সুচির দফতরের একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মিয়ানমার সফর করেছেন। আগামীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে আশার কোনো আলো দেখা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো মিয়ানমার সফর শেষে দেশে ফিরে এমন মন্তব্যও করেছেণ যে, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মিয়ানমার কিছুই করবে না। তারপরও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সদিচ্ছার দিকে তাকিয়ে আছে, যদিও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো প্রতিশ্রæতিই মিয়ানমারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার সময়ক্ষেপন ও টালবাহানার নীতি অনুসরণ করছে। পাল্টা বাংলাদেশের প্রতি দোষারোপ করছে এই বলে যে, বাংলাদেশ দ্রæত রোহিঙ্গাদের ফেরৎ পাঠাতে চাইছে না। তার এই অভিযোগ যে সত্যর অপলাপ, তা বলাই বাহুল্য। স্টেট কাউন্সেলর অংসান সুচি অনেক আগেই জানিয়েছিলেন, রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো যে তা চলছে, তার ওই ঘোষণার পরও, হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে, এখনো করছে। অত:পর ১৯৯২ সালের সমঝোতা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নেয়ার যে কথা মিয়ানমার বলছে তাতে দেখা গেছে, ১৪ থেকে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা দেশে ফিরতে পারবে। তাহলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গার কি হবে? এর কোনো জবাব নেই। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও মহলের অভিন্ন অভিমত, আন্তর্জাতিক চাপ, উদ্যোগ ও পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত বিবৃতি, সিপিএ’র বিবৃতি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সামাজিক, মানবিক ও সংস্কৃতিকবিষয়ক ফোরাম থার্ড কমিটির ৪৭তম বৈঠকে গৃহীত ১৬ দফা প্রস্তাব ইত্যাদিতে মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু মিয়ানমার এসবের প্রতি তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ করছে না। বরং এমন খবর পাওয়া গেছে, রাখাইনে সামরিক বাহিনী নতুন করে হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের তাÐব শুরু করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে, সেখানে রোহিঙ্গাদের হত্যা নির্যাতন ও বিতাড়ণে সামরিক বাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে, চীন-রাশিয়ারও সম্মতি রয়েছে। এমতাবস্থায়, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সমর্যাদায় স্বদেশে প্রত্যাবাসন অত্যন্ত প্রসঙ্গিক ও অত্যাবশ্যক। এই কাজটির ব্যাপারে মিয়ানমার পূর্বাপর অনীহা প্রদর্শন করে আসছে। চীনের অবস্থান এখন পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে সমাধান। দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে যদি সমাধান হয়, বাংলাদেশের তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এ ব্যাপারে চীন যদি উদ্যোগী হয়, মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তবে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। চীন যেহেতু দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সহযোগিতা করতে রাজি, সুতরাং তাকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে নাগরিকত্বসহ স্বদেশে নিরাপদে ফিরতে ও বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চীনা সহযোগিতার আশ্বাসকে ইতিবাচক হিসাবেই বিবেচনা করি এবং এও মনে করি, চীনের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থেও এ সংকটের সন্তোষজনক ও স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরি। তবে বাংলাদেশকে তার পূর্বাপর অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ রাখে হবে। এই দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে তার কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন