Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন সিনেটরদের সাক্ষাৎ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাখাইনে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনা ঘটেছে -মার্কিন প্রতিনিধি দল


মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে সেদেশটির সরকার ও সেনাবাহিনী দাবি করলেও বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের একটি প্রতিনিধি দল মনে করে, সেখানে ‘যুদ্ধাপরাধের মতো’ ঘটনা ঘটেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতনে জীবনের ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে গতকাল রবিবার প্রতিনিধি দলটি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে। তিনি বলেন, মিয়ানমার আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা চাই তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের পরিচয়পত্র দিয়েছে।
সিনেটর জেফ ম্যার্কলি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মার্কিন সিনেটরদের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এসব কথা জানান।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে স¤প্রতি একটি প্রতিবেদন দেয়।
প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মনে করেন এটা যুদ্ধপরাধের মতো ঘটনা। তারা এই ধরনের যুদ্ধাপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের মতো ঘটনায় উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারের রাখাইনে যা হচ্ছে, তা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লংঘন বলেও মত প্রকাশ করে মার্কিন সিনেটরদের দলটি।
বাংলাদেশেকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথাও জানান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন তারা।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের ভারতে আশ্রয় নেয়ার কথা স্মরণ করে মানবিক কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর তার ও তার বোন শেখ রেহানার ভারতে আশ্রয় নেয়ার স্মৃতিও স্মরণ করেন।
তার সরকারের প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সমস্যায় ৬০ হাজারেরও বেশি নাগরিক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এবং বাংলাদেশ তার নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।
ইহসানুল করিম বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেছেন, তারা চায় এই শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফেরত যাক।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা চাই তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নিক। রোহিঙ্গাদের আরকানে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে পূর্ণবাসনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
মার্কিন সিনেটররা বলেন, প্রত্যেক দেশের এই অপরাধ ও জাতিগত নিধনের নিন্দা জানানো উচিত। এই সংকটের সমাধান ও উদ্বাস্তুদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আরও সোচ্চার হতে হবে।
তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে সবধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তারা বলেন, উদ্বাস্তুরা তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ঙ্কর নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে জেফ ম্যার্কলি বলেন, তারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে নির্যাতিতদের কাছ থেকে সরাসরি নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে মার্কিন সিনেট প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের কঠোর পরিশ্রমের স্বাক্ষর। তারা নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রশংসা করেন।
সিনেটররা জলবায়ু ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রতিনিধি দলে মার্কিন সিনেটর রিচার্ড ডার্বিন, কংগ্রেসওম্যান বেটি ম্যাককলাম, জ্যান সাকোস্কি, কংগ্রেসম্যান ডেভিড এন সিসিলিন ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ডেপুটি চিফ অব মিশন জোয়েল রেইফম্যান, সিনেটর মার্কলের এমএলএ লরা আপডেগ্রোভ, মার্কলের লেজিসলেটিভ ডিরেক্টর জেরিমিয়াহ বাউম্যান এবং সিনেটর ডারবিনের এমএলএ রব লিওনার্ড।
মার্কিন প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাবে। সেখান থেকেও তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের পর যুক্তরাজ্যের কাউন্টেস অফ উইসেক্স সোফি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন সোফি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্টেস অফ উইসেক্স।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তার জন্য শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান।
এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Monsurul Alam Sumon ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ২:২৫ এএম says : 0
    আল্লাহ, তুমি তোমার কুদরতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হেফাজত করো । আমীন ।
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২২ এএম says : 0
    বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ লিপ সার্ভিস বন্ধ করে কার্যকর কিছু করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৩ এএম says : 0
    এই সংকটের সমাধান ও উদ্বাস্তুদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আরও সোচ্চার হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম কিবরিয়া ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৪ এএম says : 0
    মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের আরকানে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা, না হলে তাদের কপালে দুঃখ আছে
    Total Reply(0) Reply
  • আজমল ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৫ এএম says : 0
    বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো যে কবে ঘুম ভাঙ্গবে তা আল্লাহই ভালো জানেন
    Total Reply(0) Reply
  • সৌরভ ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৬ এএম says : 0
    প্রয়োজনের এর জন্য বাংলাদেশ আরো কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৭ এএম says : 0
    এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ খুবই প্রসংশনীয়
    Total Reply(0) Reply
  • আরাফাত ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৮ এএম says : 0
    প্রত্যেক দেশের মিয়ানমারের এই অপরাধ ও জাতিগত নিধনের নিন্দা জানানো উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৮ এএম says : 0
    শান্তি প্রিয় সকল দেশ মিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠারো ব্যবস্থা করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • নাজির ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৫০ এএম says : 0
    মিয়ানমারকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ