Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টাঙ্গাইলে গত দশ মাসে অর্ধশতাধিক হত্যাকান্ড অন্যান্য অপরাধ আড়াইশ’র বেশি

মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে

| প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল থেকে : টাঙ্গাইলে অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। আগের চেয়ে তুলনামুলক বেশি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানী ও মাদকসহ নানা অপরাধ এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অপরাধ বিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মীরা এমন পরিস্থিতিকে গুরুতর বললেও সরকারি কৌশুলীরা তা মানতে নারাজ। তবে পুলিশ বিভাগ বলছেন এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের দাবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ মাসে জেলার ১২টি উপজেলায় শুধুমাত্র হত্যাকান্ডই হয়েছে ৫২ টি। অন্যদিকে নির্যাতন ও ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২৫৮টি। এই সকল অপরাধের বেশিরভাগই ছিলো, পারিবারিক, অর্থ, জমিজমা এবং মাদক সংক্রান্ত। এই সকল হত্যাকান্ডের মামলায় আসামী করা হয়েছে ১২৮ জনকে। তার মধ্যে জেলা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৬৭ জন, পলাতক রয়েছে ৬১ জন।
এদিকে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো তদন্তনাধীন থাকায় বেশিরভাগ মামলারই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। ফলে মামলাগুলো ঝুলে থাকায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তি বাঁধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডগুলোর মামলায় অগ্রগতি না থাকায় দোষীদের বিচারের দাবিতে প্রতিনিয়ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান করছে নিহতদের পরিবার, এলাকাবাসী ও সচেতন মহল। অনেক সময় গ্রেফতারের পরেও অনেক অপরাধী জামিনে বের হয়ে স্বজনহারা পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ফলে নিজেদের জীবন নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন অনেক পরিবার।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে গত জুলাই মাসে নিজ গৃহে খুন হন শিক্ষক অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাস। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের কোন সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। নিহত অনিল কুমার দাসের ছেলে নির্মল কুমার দাসের অভিযোগ আমার দুই চাচা সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে জেল হাজতে থাকলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন সুনির্দিষ্ট আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে মামলার তেমন কোন অগ্রগতিও হয়নি।
দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে গৃহবধূ নুপুর হত্যাকান্ডের কুল-কিনারাও করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষরা উল্টো মামলা দিয়ে পরিবারকে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ গৃহবধূর শ্বশুর আশোক আলীর। এভাবে অপরাধ করেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করে আসছে অপরাধীরা।
এব্যাপারে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলার সমন্বয়কারী এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া এবং আইনের বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর থাকায় অনেক সময় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে অপরাধের পূণরাবৃত্তি ঘটে এবং প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকে। যা প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্তরায়।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স (সিপিএস) বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত অবস্থানের কারণেই টাঙ্গাইল অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ভৌগলিক দিক দিয়ে টাঙ্গাইল বিভিন্ন অঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বরাবরই অস্থিতিশীল, এছাড়াও মাদক ও পতিতা পল্লীর মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এখানে থাকায় এবং পুলিশের সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধ সংঘটিত হয় বেশি। রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছা, আইনের কঠোরতা, পুলিশের পেট্রোলিং এবং বিচার বিভাগের একাগ্রতায় এই অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন এই অপরাধ বিজ্ঞানী।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মনিরুল ইসলাম খান বলেন, জেলায় নানা ধরণের অপরাধ সংঘটিত হলেও তা অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি। নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, অপরাধীদের মোটিভেশন করতে পারলে অপরাধ কমবে। পাশাপাশি তিনি সাক্ষীদের স্বাক্ষদানে অনীহার কারণে মামলা ঠিকমতো এগোতে পারেনা বলে দাবি করেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব আলম পিপিএম বলেন, ইতিমধ্যে অনেক অপরাধী আইনের আওতায় এসেছে। বাকি অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ