Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাইকেন্দ্রিক বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে রাজশাহী বিএনপি

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এক বছরেও পরিপূর্ণ হলো না রাজশাহী বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আভ্যন্তরীণ কোন্দল থমকে দিচ্ছে সাংগঠনিক তৎপরতা। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকটি কর্মসূচিতে লাখো লাখো মানুষের সরব উপস্থিতিতে রাজনৈতিক সিডরে সারাদেশে তছনছ হওয়া বিএনপি যখন উজ্জীবিত। ফের ঘুরে দাড়াবার প্রেরণা পেয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। ঠিক তখনি উল্টো হাওয়া বইছে এক সময়ের বিএনপির দূর্গখ্যাত রাজশাহী বিএনপিতে। তাদের শনির দশা কাটছেনা। সেই ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে একের পর এক নির্যাতনের স্টীম রোলার ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে বিএনপির এ দূর্গ। হাজারো মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। এরপর রয়েছে ক্রমাগত পুলিশী দাবড়ানী। এসব জুলুম নির্যাতন সয়ে সাধারণ কর্মীরা ঘুরে দাড়াবার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে এলেও ঘরের শত্রু বিভীষণদের কারনে তা আর হয়ে উঠছেনা। নেতৃত্বের বলয় কবজায় রাখতে নেতায় নেতায় চলছে একে অপরকে সাইজ করার খেলা। দলীয় কর্মসুচিতে নেতারা মুখে মেকি হাসি দিয়ে কর্মীদের সামনে দাড়ালেও নেপথ্যে চলছে ভিন্ন খেলা। চেহারায় সারল্য দেখালেও ভেতরটা একেবারেই গরল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় কজন প্রভাবশালীর নাম।
রাজশাহী বিএনপির রাজনীতি ভাই কেন্দ্রীক বলয়ে বন্দী বহু বছর ধরেই। এখানে রয়েছে সতের বছরের সিটি মেয়র ও এমপি প্রতাপশালী মিজানুর রহমান মিনু ভাই গ্রæপ। আরেক মন্ত্রী এ্যাড. কবির হোসেন, সাবেক এমপি এ্যাড. নাদিম মোস্তফা গ্রæপ। এখানে চলে দলের নয় ভাই কেন্দ্রীক বলয়ের রাজনীতি। দীর্ঘদিন দৌদান্ড প্রতাপের সাথে রাজশাহী মহানগর বিএনপি ছিল মিজানুর রহমানের দাপটে ও জেলা বিএনপি এ্যড. নাদিম মোস্তফার হাতে। এরা নিয়ন্ত্রন করেছেন বিএনপি মহানগর ও জেলার রাজনীতি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পদবীর পরিবর্তনের পর এখানে পরিবর্তন আসে দলীয় নেতৃত্বে। দলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এ দু’জনকেই। কিন্তু এতে করে বিরোধ যেন আরো বিস্তার লাভ করে। নেপথ্যে নগরীর কর্মকান্ডে কলকাঠি নিয়ন্ত্রন করেন মিনু আর জেলায় নাদিম ও ব্যারিষ্ট্রার আমিনুল হক। এ্যাড. কবির হোসেন বার্ধক্য জনিত কারনে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তার আর্শীবাদ রয়েছে নাদিম মোস্তফা ও মিনু বিরোধী গ্রæপের উপর। মহানগর ও জেলা কমিটি হতে মিনু নাদিমকে সরিয়ে দেয়া হলেও এতটুকু প্রভাব কমেনি এ দুজনের। বিশেষ করে মিজানুর রহমান মিনুর। সতের বছর মেয়র এমপি থাকার কারনে নিজ প্রভাবে শেকড় নিয়ে গেছেন দলের অনেক গভীরে। যার কারনে অন্যকেউ দায়িত্ব পালন করতে পড়ছেন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে। এদের বাদদিয়ে প্রায় এক বছর আগে কমিটি গঠন করা হলেও আজো তা সাংগঠনিক ভাবে পূর্নতা পায়নি। জেলার দায়িত্ব দেয়া হয় তপু-মন্টু ও মহানগরীর দায়িত্ব দেয়া সিটি মেয়র বুলবুল-মিলনের উপর। শুরু থেকেই এনিয়ে শুরু হয় নানা রকম খেলা। মুল দল যুবদল ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি করতে গিয়ে পড়তে হয়েছে নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে। বাদ প্রতিবাদও কম হয়নি। যার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে মহানগর ও জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চলে মারপিট আর নাজেহালের ঘটনা। এনিয়ে কেন্দ্র হতে আসা নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর কেটে গেছে আরো কয়েক মাস। বিরোধের নিষ্পত্তিতো হয়নি বরং তা আরো বেড়েছে। জেলা ও মহানগর কমিটি এগারো মাসে পরিপূর্ণ হয়নি। অনৈক্য আর বিভেদ ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেড়েছে। সাংগঠনিক কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়ার সাথে সাথে কর্মী সমর্থকরা হতাশায় ডুবেছে, মনোবল ভেঙ্গেছে। নেতায় নেতায় কোন্দলের কারনে এখানকার বিএনপি এখন যেন কান্ডারী বিহিন। সারা দেশে যেখানে বিএনপি জাগছে তখন এখানে আরো ডুবছে।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা জেলা সাধারন সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর সোজা সাপটা জবাব আমরা সাংগঠনিক ভাবে এখনো কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনি। সংগঠন শক্তিশালী করার নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও সাবেক মন্ত্রী এমপি ও কিছু নেতার বাধা আর নানা রকম বিরোধীতা রয়েছে। ফলে উপজেলা পৌর কমিটি করা যায়নি। কারো কারো মনোভাব এমন বিএনপি যেন তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের নির্দেশনায় সবকিছু হবে। কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসুচি পালন হয় দায়সারা ভাবে। মহানগর সেক্রেটারী এ্যাড. শফিকুল হক মিলন বলেন আমরা সব কর্মসুচি পুলিশের বাধার মুখেও চালিয়ে যাচ্ছি। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন দলের ভেতরের অবস্থা খুব খারাপ। কর্মসুচির নামে যা পালন হচ্ছে তাতে নাখোস। কর্মসুচি এখন কার্যালয় আর নিচের রাস্তার পুলিশের ঘেরা টোপে বন্দী। জনগন জানতে পারেনা বিক্ষোভ কর্মসুচি হচ্ছে। তাদের ভাষায় সরকারের এজেন্টরা দলকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অতীতে যাদের আতাঁতের কারনে আন্দোলন সংগ্রাম ব্যার্থ হয়েছে। তারা এখনো কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ভাবে সক্রীয়। সব মিলিয়ে রাজশাহী বিএনপিতে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
এদিকে সামনে এগিয়ে আসছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এরপর জাতীয় নির্বাচন। দলের বর্তমান অবস্থার চলমান থাকলে সিটি নির্বাচনে চরম মূল্য দিতে হবে। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনেও। বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের অবস্থা কুল রাখি না শ্যাম রাখি। মেয়র পদ ফিরে পেতে তিন বছর কেটেছে আদালতের বারান্দায়। আবার নগর সভাপতি হবার ব্যাপারটিও অনেকে ভাল চোখে দেখেনি। দলের একটা অংশ তাকে সিটি কর্পোরেশন ও দলের দায়িত্ব অসফল প্রমানে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সাবেক মেয়র এমপি ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ার পার্সননের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর কথা হলো বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল জুলুম নির্যাতনের মুখে দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তারা ঐক্যবদ্ধ আছে। আগামীতে তারা থাকবে। সঠিক নির্বাচন হলে বিএনপি সবক্ষেত্রে অতীতের ধারা বজায় রাখবে। সব নেতাই কৌশলে এড়িয়ে যান দলের অভ্যন্তরে বিরোধের কথা। সব ঠিক আছে। হয়ে যাবে। এমন কথায় সায়দিতে নারাজ বিএনপির প্রবীন ত্যাগি নেতাকর্মী সমর্থকরা। তারা বলেন নেতায় নেতায় দ্বন্দ আর শীতল সম্পর্কের কথা সবার জানা। একে অপরকে সাইজ করতে পিছপা হচ্ছেনা। এমন অবস্থা নিরসনে বিএনপির দূর্গ অক্ষুন্ন রাখতে হাইকমান্ডকে মাঠ পয্যায়ের প্রকৃত চিত্র অবগত হয়ে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বিলম্ব করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সময় গেলে সাধন হবে না।



 

Show all comments
  • Rasel ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০২ এএম says : 0
    Akhon BNP'r birod korar Somoy noy
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ