Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী করতে যা যা দরকার করব -প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একাত্তরে কর্মরত বাহিনীর সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন, বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের যে প্রচেষ্টা বর্তমান সরকার চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীও এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর আরও ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন তিনি। জনগণের কল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বিকেলে ঢাকা সেনানিবাস সেনাকুঞ্জে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলার জন্য আমাদের সরকার কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশবাসীর সঙ্গে একত্রে মিলে কাজ করতে হবে। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির সব যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়াস অব্যাহত আছে। তিনবাহিনীকে আধুনিক করতে যা যা দরকার সব করবে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও স¤প্রসারণের অংশ হিসেবে বেশ কিছু ব্রিগেড আর ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সিলেটে ও রামুতে পূর্ণাঙ্গ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীতেও শীঘ্রই একটি নতুন পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। সমুদ্রসীমার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে জয়লাভের মাধ্যমে আমরা দু’দফায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সমদ্র্রসীমায় নিজস্ব অধিকার লাভ করেছি। সমুদ্রসীমা নিরাপদ রাখার পাশাপাশি বøু-ইকোনমির সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিতে সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং ওই এলাকায় (কক্সবাজার) সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এর আগে গতকাল সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ এবং সরকার প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এসময় সশস্ত্র সালাম জানায়। পরে প্রেসিডেন্ট শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রেসিডেন্টের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময়, সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অফ অনার দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী যখন শিখা অনির্বাণে ফুল দেন, তখন বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। প্রেসিডেন্ট ও সরকার প্রধানের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে ফুল দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গেলে সেখানে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও অন্যান্য পরিচালকরা তাকে স্বাগত জানান। সেখানে তিন বাহিনীর প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এরপর আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর উত্তরাধিকারী এবং খেতাবপ্রাপ্ত ১০১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাদের হাতে চেক ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সেনাবাহিনীর দশজন, নৌ বাহিনীর একজন ও বিমান বাহিনীর একজনকে ২০১৬-১৭ বছরের জন্য শান্তিকালীন পদক এবং সেনাবাহিনীর দশজন, নৌ বাহিনীর দুইজন ও বিমান বাহিনীর দুইজনকে ২০১৬-১৭ সালের পদক তুলে দেন সরকার প্রধান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) তারিক আহমদ সিদ্দিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির শুরুতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সারাদেশে সেনা নিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা, বিমান বাহিনী ঘাঁটিসহ তিন বাহিনীর অধীনের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। গতকাল ফজরের পর দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি-স্থাপনা এবং বিমান বাহিনীর ঘাঁটির মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা হয়। ঢাকা ছাড়াও সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা ও রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসেও সংবর্ধনার আয়োজন রয়েছে বলে আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রধান ২৬ নভেম্বর, নৌবাহিনী প্রধান ২১ নভেম্বর এবং বিমান বাহিনী প্রধান ২২ নভেম্বর নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সদস্য এবং তাঁদের পরিবারবর্গের সম্মানার্থে পৃথক পৃথক সংবর্ধনার আয়োজন করবেন।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান সস্ত্রীক তাঁকে স্বাগত জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, একাত্তরে সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সীমন্তরক্ষা বাহিনীর যে সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই ভাতা চালু হবে বলে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীতে যারা কর্মরত ছিলেন, চাকরি করার কারণে তাদের তখন ভাতা দেয়া হয়নি। তাদের বেশিরভাগই, প্রায় সবাই এখন অবসরে। তাদের পরিবার আছে, অনেকে কষ্টে আছেন। বাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের এবং তাদের পরিবারকে ভাতা দেব। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে তাদের ভাতা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না, ইতিহাস ঠিক তার স্থান করে নেয়। এটা আরেকবার প্রমাণ হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর। সে সময় দেশে শুধু উন্নয়ন হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গতকাল বিকেলে ঢাকা সেনানিবাস সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তিনবাহিনী প্রধানগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং তাদের স্ত্রীগণ, কূটনীতিক এবং পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ সংবর্ধনায় অংশ নেন। সংবর্ধনরা অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা স্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করে চা-চক্রে যোগ দেন।

 



 

Show all comments
  • Habib ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৫২ এএম says : 0
    Tara e amader sob chaye Boro sompod
    Total Reply(0) Reply
  • তাজরিয়া ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০৯ পিএম says : 0
    দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী করা এটা সময়ের দাবি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ