Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোনালদো আর রিয়ালের রেকর্ডময় রাত

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পরশু গেছে পাগলাটে রাত। সাইপ্রাসের দল অ্যাপোয়েলের বিপক্ষে রেকর্ডময় একটি ম্যাচ উপহার দিযেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের সঙ্গে প্রথমবারের মত আসরের শেষ ষোলয় পা রেখেছে তুরস্কের ক্লাব বাসিকতাস। তিন গোলে পিছিয়ে থেকেও লিভারপুলের অপেক্ষা বাড়িয়ে দুর্দান্ত ড্রয়ে নক-আউট পর্বের আশা টিকিয়ে রেখেছে সেভিয়া। ওদিকে মোনাকোকে তাদেরই মাঠে গুড়িয়ে বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে বুন্দেসলিগার দল লাইপজিগ। আসর থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও মারিবরেরও।

স্পোর্টস ডেস্ক
ভিন্ন আসর মানেই যেন ভিন্ন রিয়ালের গল্প। লা লিগায় হোঁচট খেতে খেতে ক্লান্ত দলটি ইউরোপিয়ান ফুটবলে ফিরেছে ঠিক রাজার হালে। এর কারণটাও অবশ্য স্পষ্ট। ঘরোয়া লিগে গোলের জন্যে হাহাকার করতে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমা যে পেয়েছেন গোলের দেখা। দুজনেই গোল করেছেন ২টি করে। অ্যাপোয়েলকেও জিনেদিন জিদানের দল উড়িয়ে দিয়েছে ৬-০ গোলে।
সাইপ্রাসের মাঠে লস বø্যাঙ্কোসদের এমন আধিপত্যের ম্যাচ রেকর্ড বইকে করে দিয়েছে ওলট-পালট। ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নাম ধারণের পর প্রতিপক্ষের মাঠে এটি ছিল রিয়ালের সবচেয়ে বড় জয়। প্রথম দল হিসেবে আসরে ১০০ জয়ের মাইলফলকও স্পর্শ করেছে ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা। এর মধ্যে প্রতিপক্ষের মাঠে ৫০ ম্যাচ জয়ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড। বার্নাব্যুর দলের টানা ২১তম বারের মত আসরের শেষ ষোল নিশ্চিত করাটাও আসরের রেকর্ড।
এ তো গেল রিয়াল বন্দনা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? এই দুই গোল নিয়ে চলতি বছরে পর্তুগিজ তারকার গোলসংখ্যা এখন ১৮টি। এক বর্ষপঞ্জিকায় যা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। সংখ্যাটা আরো বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই, গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে। ইতোমধ্যে ৫ ম্যাচে করে ফেলেছেন সর্বোচ্চ ৮ গোল। আধুনিক যুগে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৫ গ্রæপ পর্বের ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়লেন তিনি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এদিন ইউরোপিয়ান ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন ‘সিআর-সেভেন’, সেটাও মাত্র ৯৫ ম্যাচে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল ৯৮টি ও সুপার কাপে ২টি।
রোনালদোর গোলমুখ আবিষ্কারের আগেই অবশ্য ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল রিয়াল; চারটিই প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৫ মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করেন রোনালদো। প্রথমটি মার্সেলোর ক্রস থেকে হেডে, পরেরটি স্বগতিক রক্ষণের ভুলে অরক্ষিত জায়গায় বল পেয়ে কোনাকুনি শটে। মনে হচ্ছিল শুধু আসর থেকে বিদায়-ই নয়, তার চেয়েও বড় লজ্জা পেতে যাচ্ছে অ্যাপোয়েল। কিন্তু শেষ ৩৬ মিনিট আর কোন গোল খেতে হয়নি স্বাগতিকদের।
২৩তম মিনিটে ২৫ গজ দুর থেকে দারুন ভলিতে প্রথমে দলকে এগিয়ে নেন লুকা মড্রিচ। প্রায় ১৫ মাস পর রিয়ালের জার্সিতে এটি ক্রেয়েশিয়ান মিডফিল্ডারের প্রথম গোল। প্রথমার্ধেই সাত মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করেন বেনজেমা। থিয়েরি হেনরিকে (৫১টি) টপকে ফরাসিদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোল এখন বেনজেমার (৫৩টি)। অপর গোলটি করেন ডিফেন্ডার নাচো।
এর আগে চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছিল রিয়াল। এর মধ্যে আছে গ্রæপ প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে ৩-১ গোলের হারও। এরপর লা লিগায় একটি করে হার ও ড্র। কোচ জিদান অবশ্য বার বার বলে আসছিলেন তার দল ঘুরে দাঁড়াবেই। ম্যাচ শেষে সেটাই স্বরণ করে দিয়ে ফিফা বর্ষসেরা বলেন, ‘আমরা জানতাম এটা ঘটবে- গোল আসবেই। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি তাদের নিয়ে খুশি। ছয় গোল করা মোটেও সহজ কাজ নয়।’
টটেনহ্যাম গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় শেষ ষোলয় অন্য গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন দলের সামনে পড়বে রিয়াল। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে এদিন আবেমেয়াংয়ের গোলে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েও হ্যারি কেইন ও হুয়াং মিন সনের গোলে জার্মানি থেকে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে ফেরে স্পার্সরা। তাতে বিদায় ঘন্টা বেজে যায় ডর্টমুন্ডের। ‘এইচ’ গ্রæপে ৫ ম্যাচে টটেনম্যামের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট, রিয়ালের ১০। ২ পয়েন্ট করে দুই বিদায়ী ডর্টমুন্ড ও অ্যাপোয়েলের।
যে ড্র হারের সমান
জিতলেই শেষ ষোল নিশ্চিত। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ড্র করে বসেছে লিভারপুল। তাতে ‘অল রেড’ খ্যাত দলটির শেষ ষোলর অপেক্ষা যেমন বেড়েছে তেমনি আশা টিকিয়ে রেখেছে সেভিয়া। সেভিয়ার মাঠে ম্যাচের বয়স আধা ঘন্টা না পেরুতেই সফরকারীরা এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে। এসময় জোড়া গোল করেন ফিরমিনহো, বাকিটা সাদিও মানে। দ্বিতীয়ার্ধে বেন ইয়াদের জোড়া গোলে ম্যাচের উত্তেজনা বাড়লেও জয়ের পথেই ছিল ইয়ূর্গুন ক্লপের দল। কিন্তু নির্ধারিত সময়েরও ৩ মিনিট পর রেড সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় পিজারোর গোলটি।
২০০৯ সালের পর থেকে আসরের নক-আউট পর্বে খেলেনি লিভারপুল। এবার তাদের ভাগ্য বাধা পড়ল শেষ ম্যাচে এসে। ৯ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে থাকায় পরের রাউন্ড অবশ্য অনেকটাই নিশ্চিত লিভারপুলের। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ স্পার্তাক মস্কো। ৬ পয়েন্ট নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছে তারাও। বরং সুবিধাজনক অবস্থানে ৮ পয়েন্ট পাওয়া সেভিয়া। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ আসর থেকে ছিটকে পড়া মারিবর।
স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছে নাপোলি
‘এফ’ গ্রæপ থেকে আগেই শেষ ষোল নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। যদিও ঘরের মাঠে এদিন জয় পেতে ঘাম ছুটে গেছে সিটির, তাও আবার পয়েন্টশূন্য ফিয়েনর্ডের বিপক্ষে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রেইম স্টার্লিংয়ের ৮৮তম মিনিটের গোলে আসরে শতভাগ জয় নিশ্চিত করে আকাশি-নীলরা। গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও নিশ্চিত পেপ গার্দিওলার দলের।
এই গ্রæপে নজর ছিল মূলত নাপোলি-শাখতার ম্যাচের দিকে। যে ম্যাচ ৩-০ গোলে জিতে আসরে টিকে থাকা নিশ্চিত করেছে নাপোলি। সেরি আর দলের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। ৯ পয়েন্ট নিয়ে তাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে শাখতার দোনেৎস্ক। তবে শেষ ম্যাচে তাদের লড়তে হতে গার্দিওলার দলের বিপক্ষে। পয়েন্টশূন্য ফিয়েনর্ডের বিপক্ষে বরং ভালো অবস্থানেই থাকবে নাপোলি।
বাসিকতাসের ইতিহাস মোনাকোর বিদায়
সবচেয়ে বিষ্ময় উপহার দিয়েছে ‘জি’ গ্রæপের ম্যাচ দুটি। ঘরের মাটে পোর্তোর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাসিকতাস। প্রথম তুর্কিশ দল হিসেবে আসরের নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করতে পেপের বাসিকতাসের এটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। ঠিকই পড়ছেন সাবেক রিয়াল ডিফেন্ডারের ঠিকানা এখন তুরস্ক।
অপর ম্যাচে মোনাকোকে তাদেরই মাঠে ৪-১ গোলের শুধু লজ্জাই উপহার দেয়নি জার্মান ক্লাব লাইপজিগ, তাতে মোনাকোর আসর থেকে ছিটকে পড়াটাও নিশ্চিত হয়েছে। ম্যাচের ৫টি গোলই আসে প্রথমার্ধে। মোনাকোর জন্য এটি ছিল ভুলে ভরা ম্যাচ। প্রথমে তারা পিছিয়ে পড়ে আত্মঘাতি গোলে। দু’বার তাদের বিপক্ষে বেঁজেছে পেনাল্টির বাঁশি। গেল মৌসুমে শেষ চারে খেলা লিগ ওয়ানের দলটির সংগ্রহ মাত্র ২ পয়েন্ট।
ম্যাচ শেষে ভুলের কথা অকপটেই স্বীকার করেছেন মোনাকো কোচ জার্দিম, ‘গ্রæপ পর্বে ভুলের চরম মাশুল দিতে হলো আমাদের। এমন প্রতিযোগীতায় ঘরের মাঠে তিন হার ও প্রতিপক্ষের মাঠে দুই ড্র খুবই হতাশাজনক। পরের মৌসুমের জন্য আমাদের শক্ত দল গড়তে হবে।’
পরের রাউন্ড নিশ্চিত করা ‘বø্যাক ঈগল’ খ্যাত বাসিকতাসের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। সমান ৭ পয়েন্ট দুই ও তিনে থাকা পোর্তো ও লাইপজিগের। দুদলের সামনেই সুযোগ রয়েছে পরের রাউন্ডে পা রাখার।
একনজরেফল
অ্যাপোয়েল ০ : ৬ রিয়াল মাদ্রিদ
স্পার্তাক মস্কো ১ : ১ মারিবর
বাসিকতাস ১ : ১ পোর্তো
সেভিয়া ৩ : ৩ লিভারপুল
নাপোলি ৩ : ০ শাখতার দোনেৎস্ক
ম্যান সিটি ১ : ০ ফিয়েনর্ড
মোনাকো ১ : ৪ লাইপজিগ
ডর্টমুন্ড ১ : ২ টটেনহ্যাম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ