Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিকিৎসার বিল দিতে না পারায় লাশ আটকে রাখার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাভারে এবার বিল পরিশোধ করতে না পারায় শিলা সুত্রধার (২৬) নামের এক নারীর লাশ আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় ওই নারীর চিকিৎসা বন্ধ করে তাকে অবহেলা করে মেরে ফেলারও অভিযোগ করেন নিহতের স্বামী শঙ্কর সুত্রধর। গতকাল শনিবার সকালে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নারী আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার শঙ্কর সুত্রধরের স্ত্রী।
স্বামী শঙ্কর সুত্রধর ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর তার স্ত্রী ও নবজাত শিশু সন্তানসহ তাদেরকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিবীড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিউতে) ভর্তি করা হয়। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে রোগী ভালো হয়ে যাবে বলে পরামর্শ দেন। এর পর টানা দুই সপ্তাহের বেশি দিন চিকিৎসা শেষে শিলা সুত্রধর সুস্থ্য হয়ে গেছে বলে জানিয়ে তাকে আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে তৎদিনে আইসিউতে লাক্ষাধিক টাকা বিল বকেয়া পড়ে যায়। এদিকে আইসিইউর বিল পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সাধারণ বেডেও হস্তান্তর করছে না।
এদিকে হঠাৎ করে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে দাবি করে। পরে রাতেই শিলা সুত্রধর মারা যায়। শনিবার সকাল দশটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে রোগী মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করে লাশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তৃপক্ষ। তবে টাকা দিতে না পারলে লাশ দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
লাশ আটকে রাখার খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ছুটে গেলে পরে দুপুরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে নিহতের লাশ হস্তান্তর করে।
নিহতের স্বামী সঙ্কর সুত্রধর অভিযোগ করে বলেন, চার দিন আগেও তার স্ত্রী সুস্থ্য ছিল, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে আইসিইউর ভেতরে কথাও বলেছেন। তবে হাসপাতালে তার স্ত্রী ও শিশু বাচ্চার প্রায় ৭ লাখ টাকা বিল হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ইতিমধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। তবে ৫ লাখ টাকা বকেয়া থাকায় তার স্ত্রীর লাশও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রাখে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, গত চার দিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রী অনেকটা সুস্থ বলে জানিয়ে সাধারণ বেডে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। তবে তিনি আইসিইউর বিল পরিশোধ করতে না পারায় তার স্ত্রীকে সাধারণ বেডে না দিয়ে আইসিইউতে রেখে দেওয়া হয়। আর শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই তার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়ে দেয় ডাক্তার।
হাসপাতালের বিল দিতে না পারায় তার স্ত্রীকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও টাকা দিতে না পারায় তার শিশু সন্তানকেও অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার শিরিন আক্তার।
এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক আশরাফ উল্লাহ চৌধুরী সাইফুল বলেন, হাসপাতালের বিল দিতে না পারলে তারা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কেন চিকিৎসার জন্য আসেন। অন্য কোথাও তো যেতে পারে। এছাড়াও এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।
এছাড়াও হাসপাতালের অভিযুক্ত ডাক্তার শিরিন ও রেজাউল হকের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের সাথে কথা বলতে দেয়নি।
এ ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি। তবে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো: এহসানুল করিম বলেন, বিল পরিশোধ করতে না পারলে লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রাখতে পারবে না এ সংক্রান্ত একটি আদেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত। আর যেহেতু এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক একজন সাংসদ তারও এ বিষয়টি স্পষ্ট জানার কথা। এছাড়াও বিনা চিকিৎসায় অথবা অবহেলায় রোগী মারা গেলে সে বিষয়েও খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।
তবে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো: আমজাদুল হক বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই, তবে রোগীর অবস্থার উন্নতী হওয়ার পর যদি অবহেলায় তার মৃত্যু হয় তাহলে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ