Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিটি নির্বাচন সরকার ও ইসির অগ্নি পরীক্ষা -ড. মোশাররফ হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ৭:০৪ পিএম

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য অগ্নি পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, রংপুরসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। কেননা এসব নির্বাচন একাদশ নির্বাচনের পূর্বে হচ্ছে। তাই এসব নির্বাচনে আমরা দেখতে চাই, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আচরণ, আমরা দেখতে চাই, সরকারের কী আচরণ। এসব নির্বাচন সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নি পরীক্ষা। আমরা এসব পরীক্ষা আমরা দেখতে চাই এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চাই। রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘গুম, খুন ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা রংপুর সহ অন্যান্য সিটি নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের একটা রূপরেখা দেবেন। সেই রূপরেখা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাবো এবং যদি আমরা দেখি এই সরকার আবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের দিকে হাঁটছে, আমরা বিশ্বাস করি এবার আর জনগণ তা হতে দেবে না। জনগণ আরেকবার একতরফা নির্বাচন এদেশে হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমে তাদের দাবি আদায় করে, তাদের ভোটের অধিকার আদায় করে ইনশাল্লাহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকবো। দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার দলকেই জনগণ ক্ষমতায় বসাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে গুম-খুনের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ভবিষ্যতে এই যে গুম-খুন এবং অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে একটি আইনগত পদ্ধতিতে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আজকের আলোচনা সভার বার্তা হচ্ছে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে গুম-খুন-অন্যায়ের জবাব দিতে হবে। আমরা সেই দিনের প্রত্যাশায় থাকবো।
গুম-খুনের পেছনে রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে কারা গুম করেছে, কার নির্দেশে হয়েছে এবং কিছু কিছু উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা যদি হজম করে ফেলতো তাহলে কখনো কেউ স্বীকার করতো না যে, র‌্যাবের কর্মকর্তারা এর সাথে যুক্ত আছে। আজকে র‌্যাব কর্মকর্তারা ধরা পড়ার কারণে এটা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এর আগে ২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত যে চারশ’র বেশি গুম হয়েছে, প্রত্যেকটি সরকারের নির্দেশে, সরকারের সর্বোচ্চ স্থান থেকে নির্দেশে তাদের যে প্রশাসন, তাদের যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মাধ্যমে কিন্তু গুম করা হয়েছে। সুতরাং আজকে ওইভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সাফাই গাওয়া যারা গুম হয়েছে ইচ্ছাকৃত গুম হয়ে বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা গুম হয়েছে ইত্যাদি বলার কোনো অবকাশ নেই। গুম নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন মন্তব্য করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন দেশে গুম হয়। সেই গুমকে যৌক্তিক করার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে গুম হওয়ার কথা বলেছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিশ্বের কোনো দেশে কোনো উদাহরণ দেখাতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী যে, রাষ্ট্রীয় নির্দেশে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এভাবে পৃথিবীতে কোনো গুমের ঘটনা ঘটেছে। আমরা নিন্দা জনাই, প্রধানমন্ত্রী আপনি সত্যকে গোপন করে অন্য দেশের উদাহরণ দিয়ে আজকে এদেশের মানুষকে প্রতারণা করার চেষ্টা করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আপনার নাই। বাংলাদেশের গুম এবং অন্যান্য দেশে সামান্য গুম হয় তার মধ্যে তফাৎ অনেক। অন্যান্য দেশে গুম হয় শত্রুতা করে বা পণ আদায়ের জন্য গুম করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনার সাথে প্রশাসন ও সরকারি বাহিনী জড়িত। গুম হওয়া ব্যক্তিরা জীবিত আছেন এরকম প্রত্যাশা করে অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার দাবি ও বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের দায় সরকার এড়াতে পারবেনা বলেও মন্তব্য করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাউথ এশিয়া ল-ইয়ার্স ফোরামের সদস্য ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার। গুম হওয়া লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আকতার রানুর সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্র নেতা রবিউল হোসেন রবির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল আজীম, বদিউজ্জামান আকন্দসহ, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসানুল ইসলাম, লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়নুর কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার রাতুল ও সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা আক্তার আঁখি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ