নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভয়াবহ ভূমিকম্পও যাকে থামাতে পারেনি তার নাম প্রেম প্রসাদ পুন। নেপালের ৪৩ বছর বয়স্ক তীরন্দাজ। মাথার পেছনে যার লম্বা টিকি। এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপের ২০তম আসরে স্বর্ণ পদক জেতার লক্ষ্য নিয়েই ঢাকায় এসেছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ভারতের জামশেদপুরে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টের রিকার্ভ ইভেন্টে সোনা জিতেছিল তিনি। এবার সেটা পুনরুদ্ধার করতেই তার বাংলাদেশে আসা। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তীর-ধনুক হাতে দেখা গেল প্রেম প্রসাদকে। বাঁম হাতে ধরা ধনুকে তীর বসানোর চেষ্টা করছেন বার বার। দু’বছর আগে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তার বাঁম হাতের বুড়ো আঙ্গুল এবং ডান পা ভেঙ্গে যায়। ফলে আগের মতো স্বাচ্ছন্দে তীর বসাতে পারেন না ধনুকে। তারপরও তাকে থামিয়ে রাখা যায়না। আরচ্যারির সঙ্গে যেন রক্তের বন্ধন তার। বয়স এবং ভূমিকম্পে আহত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা সত্বেও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন নেপালের এই তীরন্দাজ। কাল র্যাংকিং রাউন্ডের ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন শুরু করেছেন তিনি। সম্ভবত এবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রেম প্রসাদই সবচেয়ে বয়স্ক আরচ্যার। আসরে অংশ নেয়া প্রেম প্রসাদের দেশ নেপালের দল ১১ সদস্যের। যেখানে পাঁচ জন পুরুষ, দুই জন মহিলা আরচ্যার এবং কোচ ও কর্মকতা রয়েছেন চার জন। রিকার্ভ ইভেন্টে মুনজার নামে নেপাল দলে আছেন একজন অলিম্পিয়ানও। তবে মুনজারকে ছাপিয়ে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন প্রেম প্রসাদই। স্বীকৃত কোনো কোচ নেই নেপাল দলে। তিনি শুধু প্রতিযোগি হিসেবেই টুর্নামেন্টে খেলছেন না, মুনজারসহ দলের অন্য আরচ্যারদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন।
প্রেম প্রাসাদ শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের ১১তম আসরে খেলতে। ওই আসরের দলগতে ব্রোঞ্জপদক জিতেছিলেন। এর আগে আরও তিনবার ঢাকায় এসেছিলেন এই নেপালী আরচ্যার। আর এবারেরটা নিয়ে তার পঞ্চমবার বাংলাদেশ সফর হলো। আঙ্গুলের গিরে গুনে গুনে অবাক কন্ঠে বলেন প্রেম, ‘সাত বছর পার হয়ে গেল তোমাদের দেশে শেষবার আসার।’
২০০৫ সালে ১৪তম দিল্লি এশিয়া আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে শুরু তার। এরপর ধারাবাবাহিকভাবেই অংশ নিয়েছেন এই টুর্নামেন্টে। প্রিয় এই ইভেন্টে এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো খেলছেন তিনি। তবে এবারের আসরেই ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইচ্ছা থাকলেও প্রেম জানান,২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমস খেলেই আরচ্যারিকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবেন তিনি। সেই ১৩ বছর বয়সে তীর-ধনুক হাতে শুরু প্রেমের। এরপর গত তিন দশক ধরেই আরচ্যারির সঙ্গে একচ্ছত্র সম্পর্ক এই নেপালীর। এই সম্পর্কটা পরিবারের সঙ্গে গেঁথে নিতে চান প্রেম। তার কথায়, ‘সব বাধা বিঘœ উপেক্ষা করে আমি খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমার ছেলে-মেয়েকেও আরচ্যারিতে দেখার ইচ্ছা আছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতও করতে চাই।’
২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালবাসীদের জন্য একটি ভয়ংকরতম দিন। চাইলেও এই দিনটিকে ভুলতে পারবেন না কোনো নেপালি। এদিনেই ঘটে যায় দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকম্পের ঘটনা। সকাল সাড়ে এগারটার দিকে আঘাত আনা এ ভ‚মিকম্পে প্রায় ৯ হাজার নেপালীর প্রাণহানি ঘটে, ২২ হাজার লোক আহত হয়। আহতের তালিকায় ছিলেন অন্যতম সেরা আরচ্যার প্রেম প্রাসাদ পুনও। আর দশটা দিনের মতো ২৫ এপ্রিলের সকাল শুরু করেন প্রেম পরিবার। স্ত্রী, পুত্র-কন্যার সঙ্গে সকালের নাস্তা খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন প্রেম। ঠিক ওই সময় ভ‚মিকম্প শুরু হয়। ভ‚মিকম্পের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে দিগি¦দিক হয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। দৌড়ে প্রথমে ছেলে-মেয়ের কক্ষে যান। পরে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে তিনতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। পরিবারের কেউ গুরুতর আঘাত না পেলেও হাতে-পায়ে বড় ধরনের চোট পান প্রেম। যার জন্য তিন মাস বিশ্রামে থাকতে হয় তাকে। এর মধ্যে দুই মাসই ছিলেন হাসপাতালে। ভূমিকম্প অবশ্য প্রেমের খেলোয়াড়ী জীবন থামিয়ে রাখতে পারেনি। তবে ভ‚মিকম্পের সেই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। হাতে আঘাতের চিহ্ন এখনও সুস্পষ্ট। পুরো শক্তি দিয়ে আগের মতো আর তীর ছুঁড়তে পারেন না। পায়ে আগের মতো জোর পান না। কিছুটা খুড়িয়ে হাঁটেন। ভ‚মিকম্পে আঘাত পাওয়ার মাস চারেক পরই খেলায় ফেরেন প্রেম প্রসাদ। এর ঠিক ছয় মাস পরই ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে ভারতের গৌহাটি-শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে অংশ নেন। তবে পদক জিততে পারেননি। চতুর্থ স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।