Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এলজিইডি

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীন সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সমূহ উন্নয়নে পল্লী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রামীন সড়ক সহ ২ লাখ ৫২ হাজার মিটার ছোট ও মাঝারী সেতু-কালভার্ট সমূহ এককালের নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিন্নমাত্রা যোগ করছে। পল্লী যোগাযোগ অবকাঠামো একসময়ের ঝিমিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাও আনছে ইতিবাচক পরিবর্তন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডি দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে ইতোমধ্যে ব্যপক অবদান রাখছে। এসব সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সমূহ উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় দেশী-বিদেশী তহবিল থেকে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশী অর্থ ব্যায় করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সোয়া ৫শ’ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সমূহের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে গড় অগ্রগতি ২০ ভাগেরও বেশী বলে জানিয়েছেন এলজিইডি বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এএসএম মুনিবুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৩ হাজার ২২০ কিলোমিটার উপজেলার সংযোগ সড়কের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা বায়ে ২ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার উন্নয়ন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেও প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যায়ে উপজেলা সংযোগ সড়কের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৪ হাজার ৩১৮ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়কের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করেছে এলজিইডি। ব্যায় হয়েছে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও প্রায় ২২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নে বরাদ্ব রয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় যে ৩৫ হাজার ৬৬১ কিলোমিটারের মত গ্রামীন সড়ক রয়েছে, তার মধ্যে এ পর্যন্ত উন্নয়ন হয়েছে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের মত। এ খাতে ব্যায় হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কিছু বেশী অর্থ। চলতি অর্থবছরেও দক্ষিণাঞ্চলের মাত্র ৪৫৫ কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। যেখাতে বরাদ্ধ রয়েছে ১৫৫ কোটির কিছু বেশী অর্থ। ফলে বর্তমান ধারায় দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীন সড়ক সমূহের উন্নয়ন কাজ চললে সমুদয় সড়ক উন্নয়ন শেষ করতে আরো অর্ধ শাতাব্দী লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। তবে আগামীতে গ্রামীন সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্ধ বাড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব তা শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন এলজিইডি’র দায়িত্বশীল মহল।
এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীন এলাকার প্রায় আড়াই লাখ মিটার সেতু ও কালভার্ট-এর মধ্যে দু লক্ষাধিক মিটারের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখাতে ব্যায় রয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশী অর্থ। চলতি অর্থবছরেও ৩ হাজার ৮৬৬ মিটার পল্লী সেতু ও কালভার্ট উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তায়নাধীন রয়েছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরে ব্যায় হচ্ছে প্রায় ২২০ কোটি টাকা। গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে এলজিইডি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৬৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট গার্ডার’ টাইপ সেতু নির্মাণ করছে। নির্মানাধীন ৩টি সেতুর মধ্যে দুটি আগামী তিন মাসের মধ্যেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সানুহার-ধামুরা-সাতলা সড়কের পিসি গার্ডার সেতু ও হারতা বাজার সংলগ্ন কঁচা নদীর ওপর সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শতভাগ সমাপ্ত হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজও শেষ পর্যায়ে।
এছাড়া ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় মুলাদীনাজিরপুর-কুতুবপুর/মোল্লারহাট সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদ-এর ওপর ৪৩২ মিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যায়সাপেক্ষ এ সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বরিশালের হিজলা, মুলাদী ও মেহেদিগঞ্জের সাথে ভোলা জেলার সড়ক যোগাযোগও সহজতর হবে।
ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, গত তিন দশকে দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে নীরব বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তবে এখনো ‘গ্রামীন সড়ক’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাঙ্খিত সফলতা অসেনি। মূলত নদ-নদী ও খাল-বিল বহুল দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন যেমনি ব্যায়বহুল, তেমনি অনেকটাই দুরুহ। তাই এখাতে দেশের অন্য এলাকার তুলনায় দক্ষিণাঞ্চল কিছুটা পিছিয়ে আছে। উপরন্তু স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের এলাকার উন্নয়নে আন্তরিকতার ঘাটতিকেও অনেকে এজন্য দায়ী করছেন। বিশেষ করে রাজধানীতে বাস করা এমপি এবং জেলা সদরে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি য়োরম্যানগন এলাকার উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে অনেকটাই বেশী ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ অনেক এলাকাবাসীর। খোদ বরিশাল মহানগরীর অদূরে সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের ইউনিয়ন ও গ্রামীন সড়কের বেহাল অবস্থা এলাকাবাশীকে যথেষ্ঠ দুর্ভোগে ফেললেও স্থানীয় ইউপি চোরম্যানের কোন হেলদোল নেই। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাশী চরম ক্ষুদ্ধ হলেও ভোটের সময় একটি বিশেষ মহলের সমর্থনে তিনি বিজয়ী হন বলে অভিযোগ স্থানীয় জনগনের।
তবে এসব কিছুর পরেও গত তিন দশকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী যোগাযোগ অবকাঠামোর যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে, তা এক সময়ের চরম অনুন্নত ও ঘুমন্ত এ এলাকার আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। তবে এ কর্মকান্ডকে আরো এগিয়ে নিতে সংসদ সদস্য থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে আরো সক্রীয় ও আন্তরিক হবারও তাগিদ দিয়েছেন মহলটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এলজিইডি

২০ মার্চ, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ