Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিরে দেখা বিজয়ের মাস

হোসেন মাহমুদ : | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজ ৪ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিমান ঘাঁটিগুলোতে পাকিস্তানী জঙ্গি বিমানের হামলা এবং এ দিন রাতে নয়াদিল্লীর যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনায় ভারত যতটা সুবিধাজনক স্থানে ছিল, পাকিস্তান সে তুলনায় অনেক বেশি অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজন মাফিক সৈন্য ও রসদ প্রেরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এদিন পাকিস্তান বড় রকমের সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ভারত বিশাখাপত্তম নৌঘাঁটির কাছে পাকিস্তানের গর্ব সাবমেরিন গাজীকে ধ্বংস করে দেয়। এদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণে ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় ও মুক্তি বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে তুমুল লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়। কুমিরা এলাকায় এদিন দুপুরের মধ্যে বিমান বন্দরটি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। রংপুরে ভারতখালির পাশে পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদিন তুমুল উত্তেজনা চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়ায় প্রস্তাবটি পাস হয়নি। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এ প্রস্তাব সম্পর্কে ভোটদানে বিরত থাকে। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পাকিস্তানকে সমর্থনের প্রশ্নে এ দু’টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একমত নয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের অবস্থান ভারত ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে। এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সে স্বীকৃতি আসেনি। এদিন কলকাতায় রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ভাষণদানকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সক্রিয় সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের এদিনে ফুলবাড়ী, ল²ীপুর, মতলব, দেবীদ্বার, ঝিনাইগাতি, কামালপুর, জীবননগর হানাদার মুক্ত হয়। এ সব স্থানে উত্তোলিত হয় বাংলাদেশের পতাকা।
আজ খোকসা মুক্ত দিবস
একাত্তরের এ দিনে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা মুক্ত দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের বেশ কয়েক দিন আগেই ৪ ডিসেম্বর পাক মিলিশিয়া ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে খোকসা থানাকে মুক্ত করতে সমর্থ হয় মুক্তিযোদ্ধারা।
’৭১ সালের এপ্রিল-জুন মাসে লুট, অগ্নিসংযোগসহ নারকীয় অত্যাচারে খোকসা থানার সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এলাকার খাগড়াবাড়ীয়া, ঈশ্বরদী, একতারপুর, বেতবাড়ীয়া, দশকাহনিয়া, মানিকাটসহ প্রায় ১০টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। খোকসা থানায় বড়মাপের ক্যাম্প ছিল তিনটি। শোমসপুর, মোড়াগাছা ও গনেশপুর। এগুলোর মধ্যে খোকসা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে শোমসপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পটি ছিল সর্ববৃহৎ। এখানে সার্বক্ষণিকভাবে ৭০/৮০ জন পাক মিলিশিয়া মোতায়েন রাখা হতো। এই ক্যাম্প থেকেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করা হত।
মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় বেশ কিছুসংখ্যক সড়ক ও রেলসেতু উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কয়েক দফায় আক্রমণ চালায় পাক মিলিশিয়াদের ক্যাম্পে। ২০ শ্রাবণ শুক্রবার ১৩৭৮ বাংলা তারিখে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে খোকসা ও কুমারখালী থানার সীমান্তবর্তী বসিগ্রাম রাজাকার কমান্ডার খেলাফত চেয়ারম্যানের বাড়িতে ২০/২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অপারেশন চালায়। কিন্তু রাজাকারদের কাছে পরাস্ত হয়ে শহীদ হয় ৫ জন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় ৮ জন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন ইকবাল, আনসার, গোপাল, লুৎফর, কুদ্দুস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজয়ের মাস

১ ডিসেম্বর, ২০২২
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭
৪ ডিসেম্বর, ২০১৭
১ ডিসেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ