Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্নপত্র ফাঁস কি বন্ধ হবে?

মোহাম্মদ আবু নোমান | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইতোপূর্বে সরকারি নার্স নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসসহ মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। যারা চান্স পেলো তাদের বেশির ভাগই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেখে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এরা কেমন ডাক্তার হবে, কি চিকিৎসা দেবে এবং এদের হাতে রুগিরা কতটা নিরাপদ থাকবে এমনতরো হাজারো প্রশ্ন রয়েছে।
এরাই নার্স কি ডাক্তার হয়ে অপারেশনের সময় ছুরি, কাঁচি, গজ, ব্যান্ডেজ এমনকি জলজ্যান্ত ২য় বাচ্চা পেটে রেখেই সেলাই করবেন, লিথাল ডোজ দিয়ে রোগীদের মারবেন, উৎকোচের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কোম্পানির ঔষধ সাজেস্ট করবেন, রোগীকে চেম্বারে কনসাল্ট করতে বলবেন, উপজেলায় মাসে কয়েকদিন হাজিরা দিয়ে পুরো মাসের বেতন নেবেন এবং এটাই স্বাভাবিক। এই খবরগুলো পড়া যেমন সহজ, মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। যে বা যারা এই কঠিন অবস্থায় পড়েন, শুধু তারাই বুঝতে পারেন, জীবন-যন্ত্রণা ও চিকিৎসা পাওয়া কত কঠিন। এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মানুষ ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, চিকিৎসকরা কি সত্যিই জীবনরক্ষাকারী নাকি জীবননাশকারী। আমরা পড়েছিলাম, ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রুগী মারা গেল’। আর এখন আমাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে- ‘ডাক্তার রুগী দেখার পরই রুগী মারা গেল’।
ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের রাতেই ২ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় হাতেনাতে প্রশ্নপত্র জালিয়াতের সঙ্গে জড়িত ও অভিযুক্ত ব্যক্তি, পরীক্ষার্থী ধরা পড়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতি রহস্যজনক। পড়াশোনা এখন মেধাবী ও গরীবদের জন্য নয়। মেধাবীরা এখন পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বিজি প্রেস, ফেসবুক বা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় বাইরে থেকে উত্তর বলে দেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারে। প্রশ্ন ফাঁসের এমন বহুমুখী চমৎকার ব্যবসাও যারা বুঝবে না তারা বাড়ি গিয়ে ডোমেস্টিক পশুর সু-পরিচর্যায় লেগে থাকুক।
দেশে সরকারি ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসহ সীমাহীন অনিয়ম এখন আর গোপন করার কিছু নেই। সেখানে মেধাভিত্তিতে নিয়োগ হবে এটা ভাবাটাই যেন বোকামি। ইতোপূর্বে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদেও নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পরীক্ষা গ্রহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ। প্রকৃত বাস্তবতায় স্পষ্ট দৃশ্যমান যে, নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর দায়িত্ব শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে না দিয়ে বিকল্প চিন্তা করা উচিত। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন ফাঁসে বরাবরই ভুমিকা রেখে আসছে, এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা অধ্যায়ন, গবেষণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজকে পথ দেখানোর কথা। কিন্তু দেশের সবচেয়ে দামী, ঐতিহ্যবাহী, শীর্ষতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অবস্থা হলে কিভাবে চলবে?
প্রশ্ন ফাঁস রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে ইমেইল মারফত প্রতি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র বিতরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষার্থীদের হলে আসা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যদিও প্রশ্নপত্র তৈরীর পূর্বের কাজগুলো আগেই সম্পাদন হবে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো তো আর লুকোনো থাকছে না। পদ্ধতি যতটাই বদলানো হোক কিংবা গ্রহণযোগ্য নির্ধারণ হোক, ভেতরেই তো ফাঁসকারী লোকদের বসবাস। এজন্য নির্ভার হয়ে থাকলে হবে না। দুর্বৃত্তরা এখান থেকেও সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে।
প্র্রশ্ন ফাঁস আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চরম কুঠারাঘাত। শত চেষ্টা করেও একে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না নানা কারণে। বরাবরই প্রশ্ন ফাঁসের বাণিজ্যের হোতা থাকে যখন যারা ক্ষমতায় থাকে সে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রতিষ্ঠিত নামিদামি কোচিং সেন্টারগুলো। অন্যদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একচোখা প্রশাসনিক দাপট টিকিয়ে রাখতে প্রশ্ন ফাঁসের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া সত্তে¡ও স্বীকার করছে না। ফলে প্রশ্ন ফাঁসকারীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ