Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করলো যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩৯ এএম

ফিলিস্তিনি ভূখন্ড থেকে দখলকৃত জেরুজালেমকে ইসরইলের রাজধানী ঘোষণা করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল হোয়াইট হাউস থেকে ১০ মিনিটের এক বক্তব্যে একথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এসময় তার পাশে ছিলেন। একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেবার ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বহু প্রেসিডেন্ট তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেবার কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি। এখন সময় হয়েছে এটি সরিয়ে নেবার। কারণ, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর বাসা এখানে, বহু অ্যাম্বাসীর অবস্থান এখানে, রয়েছে অনেক সরকারী অফিসও। সেদিক বিবেচনায় অনেক আগেই যা করার প্রয়োজন ছিল, আমি আজ তা করলাম। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তিনি দু’রাষ্ট্র পদ্ধতিকে সমর্থন করেন যদি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা তার মেনে নেয়।
তিনি বলেন, আমি আমার ভাইস প্রেসিডেন্টকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাব শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইসরাইল ও আরব নেতাদের সাথে আলোচনা করে তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য। আমি জানি, মধ্যপ্রাচ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্বসহ বহু ইতিবাচক দিক রয়েছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে কঠিন দিন আসছে। তিনি ‘গড বেøস ইউ, গড বেøস ইসরায়েল, গড বেøস প্যালেস্টাইন এন্ড গড বেøস ইউনাইটেড স্টেটস’ বলে তার ১০ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ইসরাইল সন্তুষ্ট, কিন্তু ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও পুরো আরব বিশ্বের নেতারা সাবধান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকেই নস্যাৎ করবে। ফিলিস্তিনি নেতারা বলছেন, এ স্বীকৃতির অর্থ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দিয়ে দেওয়া। এমনকী আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সউদী আরব বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ‘পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম এক উস্কানি’।
ইসরাইল বলে এসেছে ‘অভিন্ন জেরুজালেম তাদের চিরদিনের রাজধানী’। আসলে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই ইসরাইল জেরুজালেমের পশ্চিমাংশে দেশের সংসদ ভবন স্থাপন করে। ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে যুদ্ধে জিতে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয় এবং পুরো জেরুজালেম শহরটিকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।
ফিলিস্তিনিরা কী বলে?
ফিলিস্তিনিরা কোনোদিনই পূর্ব জেরুজালেমের দখল মেনে নেয়নি। তারা সবসময় বলে আসছে পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
ফিলিস্তিনি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দিয়ে দেওয়া। তাদের কথা, জেরুজালেম তাদের না থাকলে কোনো টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কখনই সম্ভব হবে না। যদিও গত দশকগুলোতে পূর্ব জেরুজালেমের বহু জায়গায় ইহুদি বসতি বানিয়েছে, কিন্তু তারপরও এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দা ফিলিস্তিনি যারা শত শত বছর ধরেই এই শহরে বসবাস করছেন। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ও মেনে নিয়েছে, জেরুজালেম শহরের মর্যাদা, মালিকানা নির্ধারিত হবে ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চূড়ান্ত শান্তি রফার অংশ হিসাবে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে তা লিখিত আকারে রয়েছে।
ফলে এখন পর্যন্ত কোনো দেশই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। সমস্ত বিদেশি দূতাবাস তেল আবিবে, যদিও জেরুজালেমে অনেকে দেশের কনস্যুলেট রয়েছে। এতদিনের সেই নীতি এখন ভাঙছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ট্রাপ কেন এই ঝুঁকি তিনি নিলেন?
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নেহাতই একটি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন’। তাদের কথা, ইসরাইলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া তার উদ্দেশ্য নয়। তারা বলার চেষ্টা করছেন, জেরুজালেমের সীমানা নিয়ে ইসরাইলের অবস্থান এখনও আমেরিকা মেনে নিচ্ছে না, সেটা ঠিক হবে চূড়ান্ত শান্তি মীমাংসায়।
ফিলিস্তিনিরা কোনোভাবেই তাতে ভরসা পাচ্ছে না। তাদের কথা, মি. ট্রাম্প জেরুজালেমে ইসরাইলের তৈরি ডজন ডজন অবৈধ ইহুদি বসতিগুলোতে স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছেন।
ওয়াশিংটনে বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-উশেরও বলছেন, নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইহুদিদের সমর্থন পেতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জিতলে তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন এবং মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করবেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখছেন। সংবাদদাতা বলছেন, এই স্বীকৃতি দিয়ে মি. ট্রাম্প যে পরে প্রতিদান হিসাবে শান্তিচুক্তি ত্বরান্বিত করতে ইসরাইলের ওপর চাপ দেবেন, তার কোনো ইঙ্গিতই নেই। সূত্র : বিবিসি। (এ সঙ্ক্রান্ত আরো খবর পৃষ্ঠা-৬)



 

Show all comments
  • Bashir Ahmed ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৩ এএম says : 0
    হে আল্লাহ জেরুজালেমকে ও পবিত্র মসজিদ আলআকসা ইহুদী নাসারার হাত থেকে রখখা করুন আল্লাহ মুসলমান দেরকেএক হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Kalam ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৩ এএম says : 0
    আল্লাহ ভাল জানেন। অসহায় মুসলিম বিশ্বের অবিভাবক একমাত্র আল্লাহ। ইহুদি নাছরাদের তোপ কামানের গজ:ন আমাদের ইমানের চাইতে বেশী শক্তিশালী হয়ে গেল কি না, তা হয়তো পরিক্ষার সময় খুব নিকটবর্তী।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Rubel ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৪ এএম says : 0
    ট্রাম্প এটা কোনো দিনই করবে না। তিনি শুধু দেখতে চাচ্ছেন মুসলিম বিশ্বের ঐক্য কতটুকু। আর এখন যদি এ ঐক্য দেখানে ব্যর্থ হয় তাহলে অদূর ভবিষৎে পুরো মুসলিম বিশ্ব দখল করে নেবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zakir Hossain ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৪ এএম says : 0
    ফিলিস্তিন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেবেনা মুসলিম বিশ্ব
    Total Reply(0) Reply
  • Mobarak Ali ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৫ এএম says : 0
    Sob Muslim jahan ak hota hobay
    Total Reply(0) Reply
  • selina ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৯:৩২ এএম says : 0
    Muslim extinction start from Burma and now continue everywhere.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ