Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দর্শনা রেলবন্দর ও আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন অরক্ষিত

অবৈধ স্থাপনা-মালামাল চুরি : রেহাই পাচ্ছেন না মৈত্রীর যাত্রীরাও

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, বন্দর এলাকায় মাদকদব্য বেচাকেনা ও সেবন, অবাধে সাধারন মানুষের চলাফেরাসহ নানা কারণে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর ও আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অব্যহতভাবে চুরি হচ্ছে ইয়ার্ডে রাখা রেলের বিভিন্ন মূল্যবান সরঞ্জামাদিসহ ওয়াগনে থাকা ভারত থেকে আমদানীকৃত ব্যাবসায়ীদের মালামাল।
একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন ও রেলবন্দর হারাতে বসেছে দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্য। নিরাপত্তাহীনতায় রেলবন্দর ও রেলস্টেশনের মালামাল সেইসাথে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। মাল চুরির কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। ফলে বিপুল অংকের রাজন্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। রেলের সরঞ্জামাদি ও বন্দরের মালামাল চুরি ঠেকাতে কয়েক বছর আগে রেল বিভাগ স্টেশনের উত্তর দিকের রেল ইয়ার্ডের উভয় পাশে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। সেইসাথে রেলের জায়গায় এখনও অনেক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যার কারনে এসব স্থানে সীমানাপ্রাচীর নির্মিত না হওয়ায় অবন্থা রয়েছে আগের মতই। এসব স্থাপনার আড়াল থেকে ফাঁকা স্থান দিয়ে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ওয়াগনের মালামাল লুট করে বাইরে পাচার করে। এছাড়া দক্ষিণ পাশের ইয়ার্ডটিও রয়েছে সম্পুর্ণ খোলা ও অরক্ষিত। এখানে রাতদিন ট্রাক-বাসসহ নানারকম যানবাহন পার্কিং ও সেইসাথে বন্দর এলাকায় সাধারন মানুষের অবাধ বিচরণ ও নিরাপত্তা কর্মীদের দুর্নীতিই চুরির অন্যতম কারন বলে জানিয়েছেন অনেকে।
রেলের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে চা-পান-বিড়িসহ বিভিন্ন দোকানপাট। পুরাতনবাজার রেলগেটের আশপাশ থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত রেল লাইনের দু’পাশে অবৈধভাবে রেলের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। রাতদিন এসব স্থানে চলে মাদকের আবাধ বিকিকিনি ও সেবন। আর এখানে বসেই ইয়ার্ডের নিরাপত্তারক্ষী ও চোরের মধ্যে চুক্তি ও টাকা-পয়সার লেনদেন হলে বলে জনশ্রæতি রয়েছে। ইতিপুর্বে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনার সাথে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ ও রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমানও মিলেছে। গত বছর রেলইয়ার্ড থেকে কাঠের ¯িøপার চুরি করে পাশের একটি স্ মিলে চেরাই করার সময় দর্শনা বিজিবি’র হাতে ¯িøপারসহ রেলের নিরাপত্তাবাহিনীর দু’সদস্য ধরা পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, এভাবে ইতোমধ্যেই লক্ষ লক্ষ টাকার ¯িøপার চুরি হয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে রেলবন্দরে বিজিবি আমদানি করা মালামাল লুটের ঘটনায় ষ্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র, ফেনসিডিল, লগ কাঠ, মোটর পা¤প, লুটকৃত সয়াবিন ভ‚ষি ও রেলপুলিশের ৪ সেট পোশাকসহ একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ৩ সদস্যকে আটক করে। এসময় বিশেষ তদবিরে মুচলেখা নিয়ে দু’জনকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র একজনকে মামলাসহ দামুড়হুদা থানায় সোপর্দ করা হয়।
কিছুদিন বিরতির পর থেকে চক্রটি রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর অসাধু কিছু সদস্যদের সহযোগীতায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত এ সব অপরাধমুলক কর্মকান্ডের খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে একাধিকবার ছাপা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চুরির ঘটনা অব্যহত রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় বন্দর এলাকায় অবাধে চলে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বেচাকেনা ও সেবন। সেইসাথে বসে জুয়াড়িদের অড্ডা। কয়েক মাস পুর্বে নিউজ করার উদ্দেশ্যে বন্দর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে দেখে ছবি তোলার সময় সংঘবদ্ধ মাদক ব্যাবসায়ীদের হামলায় জাতীয় দৈনিকে কর্মরত একজন সাংবাদিক রক্তাক্ত জখম হন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ ও স্টেশন সুপারকে অবহিত করলে তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাতে রেলের ওয়াগন ভেঙে চুরি হওয়া ৭ বস্তা চাউলসহ বন্দর এলাকা থেকে দর্শনা শান্তিপাড়ার মৃত পিরুর ছেলে মামুনকে আটক করে। পরে আটককৃত পিরুর পরিবারের লোকজনের সাথে দেন-দরবার ও স্থানীয় এক সাংবাদিকের সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের ইনচার্জ এস আই আলতাফ হোসেনের কাছে মোবাইলফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চোর সন্দেহে শান্তিপাড়ার পিরুকে আটক করা হয়। তবে তার কাছ থেকে কোন মালামাল উদ্ধার করা হয়নি। পরে তার গার্জিয়ান পক্ষ ও স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিকের সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি আরোও বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ ইয়ার্ডে তাফালিং হচ্ছে ও চোরের উৎপাত বেড়েছে। তাই ইয়ার্ডে নিয়মিত টহল অব্যহত রয়েছে। তবে এখন অবস্থা ভাল।
এ ব্যাপারে জানতে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে ষ্টেশন সুপার মীর লিয়াকত আলির সাথে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী তো আমাকে কিছু বলেনি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জেনে ভালই হলো। ব্যাপারটা আমি তদন্ত করে দেখব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ