Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বহিরাগত বলা চরম মিথ্যাচার ও ইতিহাস অস্বীকৃতির শামিল

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের ৯টি জাতীয় সংসদে নির্বাচিত এমপি ছিলেন ৩৪ জন রোহিঙ্গা
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাঙ্গালী বা বহিরাগত বলে প্রচারণা চালিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ণ চরাম মিথ্যাচার শুধু নয়। একটি জাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস অস্বীকার করারও শামিল। রোহিঙ্গারা যে শত শত বছর ধরে মিয়ানমারের নাগরিক তার অন্যতম বড় একটি প্রমাণ হল মিয়ানমারের পার্লামেন্ট এবং বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন গুলো।
রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের আদিবাসী সে দেশের পার্লামেন্টই হচ্ছে তার বড় প্রমাণ। ২০১৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৭৯ বছরের ইতহাসে ৯টি জাতীয় নির্বাচনে ৩৪জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে ও সংসদে ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব। এর মধ্যে ২টি নির্বাচন ব্রিটিশ শাসনামলে অনুষ্ঠিত হলেও, বাকি ৭টি ১৯৪৮ এরপর স্বাধীন বার্মাতেই অনুষ্ঠিত হয়। দেখা গেছে, শুধু রোহিঙ্গা পুরুষ নয়, নারীও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রোহিঙ্গা এমপিরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক যেসব কাজ করেছেন তার স্বীকৃতিও রয়েছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এমনকি বুড্ডিষ্ট এমপিরাও তা অকপটে স্বীকার করছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা অর্ধ-সামরিক সরকারের বৌদ্ধ তথ্যমন্ত্রী উঃ ইয়ে ট্ইু সম্প্রতি বলেছেন ‘সংসদে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বার্মার পার্লামেন্ট মুছে ফেলতে পারবেনা। রোহিঙ্গারা যুগে যুগে নির্বাচিত হয়ে আইনগতভাবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন’। গত ২৩ নভেম্বর ইয়াংগুনে এক আলোচনা সভায় তিনি আরো বলেন, ‘বার্মার নাগরিক প্রমাণে রোহিঙ্গাদের এর চেয়ে বড় ডকুমেন্ট আর লাগেনা। কিন্তু সরকার তাদের দাবি মেনে নিচ্ছেনা’। মিয়ানমারে অতীতের ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার প্রমাণ মিলে এভাবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৩৬), আব্দুল গণী মার্কিন-নির্বাচনী এলাকা মংডু। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৪৬), এ উফুখিং-নির্বাচনী এলাকা আকিয়াব, মোঃ সুলতান-নির্বাচনী এলাকা মংডু, আব্দুল গফ্ফার-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৫১), আব্দুল গফ্ফার-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, আবুল বশর-নির্বাচনী এলাকাবুথিদং, সুলতান আহমদ-নির্বাচনী এলাকা মংডু, জহুরা বেগম - নির্বাচনী এলাকা মংডু। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৫৬),এজাহার মিয়া-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, সুলতান মাহমুদ- নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, আবুল বশর-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং,সুলতান আহমদ-নির্বাচনী এলাকা মংডু, আবুল খায়ের-নির্বাচনী এলাকা মংডু, আব্দুল গাফ্ফার- নির্বাচনী এলাকা মংডু।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৬০), আবুল বশর-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, সুলতান আহমদ-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, আবুল খায়ের-নির্বাচনী এলাকা মংডু, রশিদ আহমদ-নির্বাচনী এলাকা মংডু, এম.এ সুলতান-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৪), আব্দুর রহিম-নির্বাচনী এলাকা মংডু, আবুল হোছাইন-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৮), আবুল খায়ের-নির্বাচনী এলাকা মংডু। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯০), ফজল আহমদ-নির্বাচনী এলাকা মংডু, মোঃ ইব্রাহীম-নির্বাচনী এলাকা মংডু, নুর আহমদ-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, আনোয়ারুল হক-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং, শুয়েয়া (কেএনএলডি)-নির্বাচনী এলাকা আকিয়াব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১০), জাকির আহমদ-নির্বাচনী এলাকা মংডু, জাহাঙ্গির আলম-নির্বাচনী এলাকা মংডু, জাহিদুর রহমান-নির্বাচন এলাকা মংডু, জাহিদুল্লাহ-নির্বাচন এলাকা বুথিদং, বশির আহমদ-নির্বাচন এলাকা বুথিদং, আব্দুর রাজ্জাক-নির্বাচন এলাকা বুথিদং, ডাঃ বশির আহমদ-নির্বাচনী এলাকা বুথিদং।
জানাগেছে, এসব রোহিঙ্গা এমপিদের মধ্যে অনেকেই মিয়ানমার সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তৎকালীন বার্মায় সচীব পদেও অনেক রোহিঙ্গা দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে নির্বাচিত রোহিঙ্গা এমপিদের যারা এখনো জীবিত আছেন, তাদেরকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। এভাবে ষড়যন্ত করে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোন রোহিঙ্গাকে প্রার্থী হতে দেয়নি সরকার।



 

Show all comments
  • selina ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৭:১৪ এএম says : 0
    Muslim extinct start from Burma .
    Total Reply(0) Reply
  • Emad Uddin ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১৬ পিএম says : 0
    Right
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ সুজন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১৬ পিএম says : 0
    ইয়েস
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ