Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হদিস নেই সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোন হদিস নেই সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের। কেন বা কারা সাবেক একজন রাষ্ট্রদূতকে ধরে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই তদন্তের সাথে সংশ্লিস্ট্রদের। পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। এখনও কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। অথচ সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানকে ফিরে ফেতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মারুফ জামানের মেয়ে সামিহা জামান বলেন, আমরা প্রতিটি মুহুর্ত বাবার অপেক্ষায় থাকি। কখন ফিরে আসবেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কী কারণে একজন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে তুলে নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কেও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আদৌ তিনি ফিরবেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ধানমন্ডি থানার ওসি বলেছেন, কে বা কারা তার বাসায় প্রবেশ করে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে তার অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরায় ওই লোকদের যে ছবি ধারণ করা আছে তা স্পষ্ট নয়। আমরা চেষ্টা করছি, অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কোন অগ্রগতি নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিডি করার পর থেকেই পুলিশ মারুফ জামানকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় ধানমন্ডির ৯-এ রোডের ৮৯ নম্বর বাড়ির ২-এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মারুফ জামান বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হন। তার মেয়ে সামিহা জামান বিদেশ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। যথাসময়ে বিমানবন্দরে সামিহা জামান পৌঁছলেও তার বাবা তাকে রিসিভ করার জন্য সেখানে যাননি। পরে সামিহা নিজেই বিমানবন্দর থেকে বাসায় চলে আসেন। বাসায় ফিরে তিনি জানতে পারেন তার বাবা তাকে রিসিভ করার জন্য বিমানবন্দর গিয়েছিলেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সব জায়গায় সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের খোঁজ করেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো অবস্থান নিশ্চিত না করতে পেরে পরদিন সকালে থানায় জিডি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। ওই দিন রাতে মারুফ জামান তার বাসায় ফোন করে তার রুমে থাকা ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেয়ার কথা বলেন। রাতে তিন ব্যক্তি তার বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। ওই লোকগুলো তাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলেনি মারুফ জামানের পরিবারের কাছে। কী ছিল ওই ল্যাপটপ ও হার্ডডিস্কে, সে সম্পর্কেও জানা নেই তার পরিবারের। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যে তিন ব্যক্তি ওই বাসায় গিয়েছিল, তারা কালো পোশাক এবং জিন্স পরিহিত ছিল। পায়ে ছিল জুতা। দেখতে তারা স্মার্ট ও সুদর্শন। অজ্ঞাত এই ব্যক্তিরা সুঠামদেহী বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই ফুটেজে তিন ব্যক্তিকে বাসায় প্রবেশ এবং বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেলেও তাদের মুখমন্ডল দেখা যায়নি। অজ্ঞাত ওই তিন ব্যক্তি সচেতনভাবেই সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে মুখ লুকিয়েছে যাতে পরবর্তী সময় তাদের শনাক্ত করা না যায়। তারা এ সব বিষয়ে আগে থেকেই অভিজ্ঞ ছিলেন এসব বিষয়ে। ওই ভবনের নিরাপত্তা কর্মী মফিজুল ইসলামন সাংবাদিকদের বলেন, ওই দিন রাত ৮টার পর প্রথমে ভবনের এক বাসিন্দার একটা গাড়ি ঢুকেছে। ওই গাড়ির পেছন দিয়ে তিনটি লোক ঢুকেছে। আমি তাদের ডাক দিয়ে বলেছি, ভাই দাঁড়ান, কোথায় যান? তারা থেমেছে। পরে বলে যে, মারুফ জামান স্যারের বাসায় যাবো। আমি বললাম, স্যার তো বাসায় নাই, বাইরে আছে। তারপর ওরা বলল, বাইরে গেছে সেটা আমরা জানি। স্যার আমাদের পাঠিয়ে তার কম্পিউটার নেয়ার জন্য বলছে। আমি বললাম, ঠিক আছে দাঁড়ান আমি ফোন দেই। আমি ওপরে ফোন দিছি। বুয়া ধরছে। বললাম, খালা, স্যারের কম্পিউটার নেয়ার জন্য লোক আসছে। স্যার কি কম্পিউটার নেয়ার জন্য কিছু বলে গেছে? বলল যে হ্যাঁ বলে গেছে। উল্লেখ গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসা থেকে বের হওয়ার পরে নিখোঁজ হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান (৭০)। এ ঘটনায় তার মেয়ে সামিহা জামান বাদি হয়ে ৫ ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেছেন। ৫ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মারুফ জামানের গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ