Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকার রাস্তায় ঝাড়– হাতে নেপালের দুই নাগরিক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:১৬ পিএম, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭

পাহাড় ঘেরা অপার সৌন্দর্যের দেশ নেপাল, যেখানে টুকরো টুকরো প্রশান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে অবিরত। সবুজের মাঝে মানুষগুলো যেন এক টুকরো বিশুদ্ধ জীবনে বাস করে। সেদেশের মানুষ নিজেদের প্রকৃতিকে সবসময় আগলে রাখে। বিশুদ্ধতা আর প্রশান্তির ছোয়া তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তেমনি দু’জন নেপালির নাম রাজমান ও শিলা। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি গ্রামে বসবাস তাদের। একই মহল্লায় থাকেন বলে পরিচয়। শিলা কাজ করতেন একটি রেস্টুরেন্টে, আর রাজমানের পেশা ছিল চাকরি। দু’জনের মন-মানসিকতা এবং চিন্তা একই বলে পরস্পর হয়েছেন ভালো কাজের সঙ্গী। দীর্ঘ আট বছর ধরে তারা নেপালে পরিষ্কার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। হাতে ঝাড়– আর কাঁধে ব্যাকপ্যাক। এক জায়গা পরিষ্কার করেই ছুটে চলেন অন্য জায়গায়। এভাবে স্বেচ্ছায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মিশন চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। চার বছর আগে বাংলাদেশের কোনও একজন সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। সেই সাংবাদিকের কাছেই বাংলাদেশের গল্প শোনেন, জানতে পারেন ঢাকার অবস্থা। এরপর তারা মনস্থির করে ফেলেন ঢাকায় আসবেন।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাবে যাওয়ার পথে দেখা গেলো- ঝাড়– হাতে একজন বয়স্ক পুরুষ আর একজন মহিলা রাস্তা ঝাড়– দিচ্ছেন। তাদের বাঙালি বলে মনে হলো না। কৌতূহলে কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে আধো ভাঙা ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় নিজেদের নাম বলেন-রাজমান ও শিলা। ঢাকার রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করতে তারা এসেছেন গত ৩০ নভেম্বর। কিভাবে আসলেন জানতে চাইলে বললেন, প্লনে করে। প্লেনের ভাড়া কিভাবে যোগাড় করলেন জানতে চাওয়া হলে শিলা জানান, পরিবারের মানুষ, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারপর এসেছি। ভালো কাজের জন্য তারা (আত্মীয়-স্বজন) নিজে থেকেই আমাদের টাকা দিয়েছে। এই টাকা ফেরতও দিতে হবে না।
ঢাকায় আসার পর থেকেই রাজমান ও শিলা রাস্তা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিষ্কার অভিযান চালাতে ঢাকাকে বেছে নিলেন কেন, জানতে চাইলে রাজমান বলেন, মানুষের কাছে শুনেছি ঢাকা অনেক নোংরা। এই শহরের দেখভাল ঠিক মতো হয় না। তাই আমরা নিজেরাই এসেছি। এর দুইটি কারণ- আমাদের দেখে মানুষ নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানবে এবং নিজেই নিজের শহর পরিষ্কার রাখবে। ঢাকায় এসে থাকার ও খাবারের কোনও চিন্তা নেই তাদের। যেখানে কাজ করতে করতে রাত হয়, সেখানেই তাঁবু করে থাকছেন তারা। আর খাচ্ছেন কখনও ফুটপাতে বসে, কখনও নতুন করে পাতানো কোনও বন্ধুর বাসায়। কয়েকদিন একটি মসজিদেও থেকেছেন। পথে কাজ করতে দেখে একবন্ধু তাদের খাবারের বন্দোবস্ত করেন। পরে তিন দিন পল্টন এলাকার একটি মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানান রাজমান ও শিলা।
বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে শিলা বলেন, খাবার খুবই চমৎকার। কয়েকদিন খুব মজা করে খেয়েছি। তারা দু’জনই আগামী তিন মাস বাংলাদেশে থাকার কথা ব্যক্ত করেন। এই কয়েক মাসে রাস্তা যতটুকু পরিষ্কার করা যায়, তারা করবেন। প্রয়োজনে তারা ঢাকার বাইরেও যাবেন বলে জানান। এই মহৎ কাজের ব্যাপ্তি এখানেই শেষ নয়। তারা জানান, নেপাল থেকে প্রথমেই এসেছেন বাংলাদেশে। এখান থেকে তারা যাবেন শ্রীলঙ্কায়। বাকিটা জীবন দেশ থেকে দেশ শুধু পরিষ্কার করে যেতে চান এই দুই নেপালি। তাদের নিজেদের একটি সংগঠন আছে- নাম আই। আই মানে আমি। আর আমি নিজেই পারি নিজের দেশ পরিষ্কার করতে এই লক্ষ্য নিয়ে তাদের পথচলা, জানালেন রাজমান ও শিলা।



 

Show all comments
  • খোরশেদ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৭:১৮ এএম says : 0
    কবে যে আমরা নিজেরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবো
    Total Reply(0) Reply
  • Rumel Rahman ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 1
    দেশের মানুষের এবং সবচাইতে বেশি সরকারের লজ্জিত হওয়া উচিৎ, আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ কারন আমরা সচেতন না তাই বারবার বিদেশিরা এই লজ্জা দেয়ে আমাদের, আর সবচাইতে বেশি লজ্জিত হওয়া উচিৎ সরকারের কারন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করা ও এই সব সুযুগ সুবিধা নিশ্চিত করা ও জনগনকে বাধ্য করা সরকারের দ্বায়ীত্ব,,, ওহ আমাদের ও আমাদের সরকারের লজ্জা থাক্লেত বিদেশীরা এই লজ্জা দিত না,,,, ছি ছি আমরা...
    Total Reply(0) Reply
  • Sadman ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০৫ পিএম says : 0
    কি করবো আমরা জনগণ বাওতাবাজির রাজনীতির কারণে আমরা জনগণ আজ ডাষ্টবিনে কারণ মাসের পর মাস আমরা টেক্স বিল,সন কিছুই পরিশোধ করি তারপরও আমরা জনগণ রাজনীতি আর দূর্নীতির কারণে অবহেলিত।নেতারা নির্বাচন এলে মিডিয়াতে বড় বড় ভাষণ মারে তারপর পকেট ভারী করেন।এটাই এটাই এখন দেশের ধাররাবাহিক অবস্হা।
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Faruque ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০৬ পিএম says : 0
    জাতির কাছে প্রশ্ন হল। নেপালের রাজধানী কি আমাদের দেশের চেয়ে উন্নত এবং পরিস্কার???
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Kabir ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০৬ পিএম says : 0
    তারপরও যদি লজ্জা হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Rony Mahbub ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০৬ পিএম says : 0
    এসব দেখলে লজ্জা লাগে
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfikar Mahmood ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১১ পিএম says : 0
    শিক্ষা হওয়া উচিত... আমাদের
    Total Reply(0) Reply
  • Ziaul Hossain Chowdhury Rocky ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১২ পিএম says : 0
    আমাদের মেয়রের লজ্জা হওয়া উচিৎ,এটা দেখে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rokybul Anwar ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১২ পিএম says : 0
    জাতীয় লজ্জা!
    Total Reply(0) Reply
  • fayaz ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৬:১৯ এএম says : 0
    ওদের কাছ থেকে সরকার ও বাংলার জনগনের শিক্ষা নেওয়া উচিত 1
    Total Reply(0) Reply
  • Jc ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৮:৩৩ এএম says : 0
    Kathmandu is much cleaner city then dhaka.
    Total Reply(0) Reply
  • H M Anwar ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫২ পিএম says : 0
    Most welcome to teach our City Authority - Shame on their Face. I wonder what they are doing with the collected garbage. Are they dumping those garbage into our Mayor's offices? I think, that's the best place to dump those garbage.
    Total Reply(0) Reply
  • kawsar ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:৫৪ পিএম says : 0
    18 th crore market!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ