Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ওআইসি’র ঘোষণা ও আহ্বান

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির এক সপ্তাহের মাথায় ইসলামি সম্মেলন সংস্থার ওআইসি এক জরুরী সম্মেলন ডেকে ট্রাম্পের ঘোষনা প্রত্যাখান করে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা একদিনের সম্মেলন শেষে এই স্বীকৃতির ঘোষনা দিয়েছেন। ওআইসির তরফে যে সব রাষ্ট্র এখনো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি তাদের প্রতি অধিকৃত জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইস্তাম্বুল সম্মেলনের ইশতেহারে আরো বলা হয়েছে, যে সব দেশ ট্রাম্পের ঘোষনাকে সমর্থন করবে সে সব দেশের বিরুদ্ধে ইসলামি দেশগুলো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং সম্পর্ক ছিন্ন করবে। ট্রাম্পের ঘোষনাকে বাতিল এবং আইনগতভাবে অকার্যকর মন্তব্য করে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত আরব-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়া ব্যহত করবে এবং সেখানে চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য ট্রাম্প প্রশাসন দায়ী হবে। সভাপতির ভাষনে ইসরাইলকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলী দখলদারিত্ব অবসানে জাতিসংঘকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এরদোগান।
ফিলিস্তিনের ভ‚মি জবরদখল করে ১৯৪৮ সালে গড়ে ওঠা ইসরাইল ১৯৬৭ সালে ৬দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় মুসলমানদের ঐতিহাসিক পবিত্র মসজিদ বায়তুল মোদ্দাসসহ পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। সেই থেকে ইসরাইল জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে দাবী করে আসলেও গত ৫০ বছরে বিশ্বের কোন দেশ তার স্বীকৃতি দেয়নি। জেরুজালেম নগরীকে একই সঙ্গে মুসলমান, খৃষ্টান ও ইহুদিদের পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর এক ঘোষনায় পূর্ব জেরুজালেমের উপর ইহুদিদের দাবী প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের উপর বৃটিশ ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের আগ পর্যন্ত শত শত বছর ধরে জেরুজালেমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সাথে খৃষ্টান ও ইহুদিরা শান্তিপূর্নভাবে সহাবস্থান করে আসছিল। ইঙ্গ-মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সেখানে অশান্তি ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সূচনা হয়। আরব-ইসরাইল সংঘাত বন্ধে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের নীতি অনুসরণ করে দুই দশকের বেশী সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতা করে আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শান্তি প্রক্রিয়ায় মার্কিন ভ‚মিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অবশেষে গত ৬ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়ায় কার্যত আনুষ্ঠানিক ইতি টেনেছেন। কারণ জেরুজালেমের অধিকার ছাড়া ফিলিস্তিনী ও মুসলমানদের কাছে আর কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়। ট্রাম্পের ঘোষনার পর থেকেই জেরুজালেম ও আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ফিলিস্তিনের প্রতিবাদি মানুষ। সারাবিশ্বের মুসলমানরা সাথে সাথেই ফিলিস্তিনের সাথে তাদের সংহতি পুর্নব্যক্ত করেছে।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক‚টনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে। একমাত্র ইসরাইল ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন পশ্চিমা মিত্র ট্রাম্পের ঘোষনাকে সমর্থন করেনি। রশিয়া, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্্রান্স, জার্মানীসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাৎক্ষনিকভাবেই ট্রাম্পের ঘোষনার বিরোধিতা করে ট্রাম্পের ঘোষনার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে ওআইসি, আরবলীগসহ বিশ্বের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের অবস্থান পরিস্কার হয়ে গেছে। বলা যেতে পারে, ট্রাম্পের অপরিনামদর্শি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম প্রশ্নে বিশ্বসম্প্রদায় এবং ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এক ধরনের মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের ঘোষনার পর থেকেই প্রতিবাদি ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলী বাহিনীর বিমান হামলা ও টার্গেটেড কিলিং শুরু হয়েছে। হামাস এবং হেজবুল্লাহসহ ফিলিস্তিনী ও লেবানিজ প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে নতুন গণজাগরণ বা ইন্তিফাদার ডাক দেয়া হয়েছে। হামাস ও হেজবুল্লাহ নেতাদের সাথে রাশিয়া, ইরাণ ও তুর্কি নেতাদের মধ্যে ফোনালাপ ও ক‚টনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এ থেকে বুঝা যায়, ট্রাম্পের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাত উস্কে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে একটি কার্যকর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে আরেকটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধযুদ্ধ পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী । গত একদশকে তারা একাধিকবার ইসরাইলী বাহিনীকে পর্যুদস্তু করতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়া, ইরাণ, তুরস্কের হস্তক্ষেপে সিরিয়া এবং ইরাকে পশ্চিমা মদদপুষ্ট দায়েশের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে মার্কিনীদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষনা করা বড় ধরনের বোকামি। তবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলেই এই প্রথমবারের মত ওআইসিভুক্ত রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন প্রশ্নে একটি দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হল। ইস্তাম্বুল ঘোষনা ফিলিস্তিন প্রশ্নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। শুধু ঘোষনা দিয়ে জেরুজালেম সমস্যার সমাধান সম্ভব হবেনা। এ জন্য ওআইসি, আরবলীগ, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বসম্প্রদায়কে ন্যায় ও শান্তির পক্ষে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন