Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রসিক নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করেনি ইসি

সুজনের দাবি

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে চারজনের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। তাদের মধ্যে সরফুদ্দীন আহমেদের ৬৭৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বিএনপির কাওছার জামানের এক হাজার ৯৭২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, জাপার মোস্তাফিজার রহমানের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও আবদুল কুদ্দুছের সম্পদের পরিমাণ দুই হাজার ৯৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সব প্রার্থীর চেয়ে সরকারদলীয় প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদেরও স¤পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো: মোস্তাফিজার রহমান ও সরকার দলীয় প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা, ন্যাশনাল পিপলসের সেলিম আখতার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা নেই। এ ছাড়া সরফুদ্দীন আহমেদ, কাওছার জামান, মোস্তাফিজার রহমান ও হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের দায়-দেনা ও ঋণ রয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামা সুষ্ঠু যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংস্থাটি। রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্যের ওপর তৈরি করা গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাশা বলেন, আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের কাজ স¤পন্ন হয়েছে। মেয়র পদে মোট ১৩ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২২৬ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন, সর্বমোট ৩০৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চ‚ড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২১২ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন, মোট ২৮৪ জন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, তিনজনে স্নাতক এবং দুইজনের এইচএসসি। মোট ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮১ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৪৪ জনের এসএসসি এবং ৪১ জনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে- ৩২ ও ১০ জন। মোট ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৬৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির কম শিক্ষাগত যোগ্যতাস¤পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা ২৫ জন। ১৭ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং আটজনের এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে- আট ও ছয়জন। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সর্বমোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে একটি বড় অংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৬৭ জন এসএসসি বা তার নিচে। পক্ষান্তরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৬১ জন।
প্রার্থীদের পেশা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই রাজনীতি। সরফুদ্দীন আহম্মেদ পেশার ঘরে উল্লেখ করেছেন রাজনীতি। ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৭০.৭৫ শতাংশ (১৫০ জন) ভাগের পেশাই ব্যবসা। কৃষির সাথে স¤পৃক্ত আছেন ২০ জন। ৬৫ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর অধিকাংশই বা ৪০ জন গৃহিণী। ১৪ জনের পেশা ব্যবসা। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সর্বমোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫৯.৫০ শতাংশই (১৬৯ জন) ব্যবসায়ী। বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
প্রার্থীদের মামলা সম্পর্কে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ফৌজদারি মামলা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন চারজন। ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনের (২৪.৫২ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৭ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে। ৬৫ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীর মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে এবং তিনজনের বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সর্বমোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনের (২০.৪২ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪০ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১৮ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল।
প্রার্থীদের আয় সম্পর্কে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের আয় বছরে পাঁচ লাখ টাকার নিচে, তিনজনের আয় বছরে পাঁচ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে এবং একজনের আয় ২৫ লাখ টাকার অধিক। ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৮৬ জনেরই (৬৫.৪৯ শতাংশ) বছরে পাঁচ লাখ টাকার কম আয় করেন। বছরে পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন ২১ জন। সংরক্ষিত আসনের ৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যেও বেশির ভাগই (৪০ জন ৬১.৫৩ শতাংশ) কাউন্সিলর প্রার্থীর বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকার নিচে। তিনটি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে চার পঞ্চমাংশের (২২৮ জন বা ৮০.২৮ শতাংশ) বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকার কম।
প্রার্থীদের সম্পদ সম্পর্কে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের সম্পদ পাঁচ লাখ টাকার নিচে, একজনের পাঁচ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, একজনের ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে এবং অবশিষ্ট দুইজনের স¤পদ কোটি টাকার অধিক। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স¤পদ সরফুদ্দীন আহমেদের (১,৫৩,৬০,১১৮.০০ টাকা) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছেন মো: কাওছার জামান (১,৫২,০০,০০০.০০ টাকা)। ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই (১৭৫ জন অথবা ৮২.৫৪ শতাংশ) স্বল্প স¤পদের অর্থাৎ পাঁচ লাখ টাকার কম মূল্যমানের স¤পদের মালিক। ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার স¤পদ রয়েছে ২৩ জন (১০.৮৪ শতাংশ) কাউন্সিলর প্রার্থীর। ৬৫ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনের (৮০ শতাংশ) স¤পদ পাঁচ লাখ টাকার কম। ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার স¤পদ রয়েছে ১০ জন (১৫.৩৮ শতাংশ) সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৩০ জনই (৮০.৯৮ শতাংশ) পাঁচ লাখ টাকার কম স¤পদের মালিক।
প্রার্থীদের দায়-দেনা সম্পর্কে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজনের দায়-দেনা ও ঋণ রয়েছে। সাধারণ আসনের ২১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন (১২.২৬ শতাংশ) এবং সংরক্ষিত আসনের ৬৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র একজন (১.৫৩ শতাংশ) ঋণগ্রহীতা। সর্বমোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ৩১ জন (১০.৯১ শতাংশ)। মোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের (১.০৫ শতাংশ) কোটি টাকার উপরে ঋণ রয়েছে।
প্রার্থীদের আয়কর সম্পর্কে বলা হয়, সাতজন মেয়র প্রার্থীর সকলেরই আয়কর বিবরণী পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে করের আওতায় পড়েছেন চারজন। সর্বশেষ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১,২৭,৮৪৬.০০ টাকা কর প্রদান করেছেন সরফুদ্দীন আহমেদ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২,৮৭৫.০০ কর প্রদান করেছেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। ২১২ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৫ জন (৫৮.৯৬ শতাংশ) আয়কর প্রদানকারী। ৬৫ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে মধ্যে ৩৬ জনের (৫৫.৩৮ শতাংশ) আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তারা সকলেই কর প্রদান করেন পাঁচ হাজার টাকার কম। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, সর্বমোট ২৮৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬৫ জন (৫৮.০৯ শতাংশ) কর প্রদানকারী।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আজকে খবরের কাগজে দেখলাম, একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ থাকবে না। তার মানে কী, ইচ্ছে করলে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, দয়া করে করছেন না। এ ধরনের বক্তব্য অন্যায়, বেআইনি। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি বলেন, আমরা চাই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক, ভালো মানুষ নির্বাচিত হোক। তাই আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো, এই সেøাগান এখন বাদ। আমরা বলছি, আমার ভোট আমি দেবো, দেখে শুনে বুঝে দেবো। রংপুর সিটি নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, যাতে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং ভালো প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন, যারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং জনকল্যাণে কাজ করবেন।’
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে রাষ্ট্রে নাগরিকরা সক্রিয় থাকেন সেখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দেয়া দরকার, যাতে ভালো প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন। বর্তমানে প্রার্থীরা হলফনামায় যে তথ্যগুলো দেন নির্বাচন কমিশন থেকে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয় না। প্রার্থীদের দেয়া তথ্যগুলো ভোটারদের জানানো জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে উদ্যোগ নেয়া দরকার। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন রাখা জারুরি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ