Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদকে সর্বনাশ

মোহাম্মদ আবু নোমান | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সন্তান ধর্ষক, খুনি, বখাটে, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী হবে এটা কেউই চান না। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ খুনের সঙ্গে মাদকাসক্তরা কোনো না কোনোভাবে জড়িত। সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ এই মাদকাসক্তি। এমন কোনো দিন নেই, গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে না ধর্ষণ, গণধর্ষণের খবর। প্রতিদিন গড়ে ১০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা শুধু গণমাধ্যমে আসে। এর বাইরে বিভিন্ন কারণে অপ্রকাশিত থাকে অনেক ঘটনা।
যে মাদক সেবন করে, সে কিন্তু প্রথমেই মাদক হাতে নেয় না। প্রথমে সিগারেটেই হাতে খড়ি হয়। এছাড়াও অনেকের মধ্যে সিগারেট খাওয়া নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা থাকে। এরপর আফিম, গাঁজা, ড্যান্ডি, ভায়াগ্রা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে মাদকের মূল উৎস কিন্তু সেই সিগারেটই। এমন কোন মাদকাসক্ত নেই যে সিগারেট না খায়। সাধারণত বন্ধুদের সঙ্গ থেকেই মাদক নেওয়া শুরু হয়। প্রথমে শুধুমাত্র সখ বা দেখি কেমন(!) ও আনন্দের জন্য অনেকে এনার্জি ড্রিংকসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সেবন করলেও একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন এ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হয় না। মাদকের প্রভাব একসময় সেবনকারীর চেতনাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে মাদকাসক্তরা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। এমনকি এর চিকিৎসা নিতেও আগ্রহী হয় না।
ইতেপূর্বে অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই বেশি ইয়াবা সেবন করে’। রাজধানীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের প্রথম টার্গেট। অনেকে জড়িয়েও পড়ছে জীবনবিধ্বংসী মাদকের ব্যবসায়। পড়ালেখা ছেড়ে আবার অনেকে কাজ করে ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে।
একটি সুন্দর সাজানো সংসার ও পরিবার ধ্বংস করতে একজন মাদকসেবী সন্তানই যথেষ্ট। বিভিন্ন পারিবারে অশান্তি সৃষ্টির কারণও এই মাদক। তাই পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে আড্ডা দেয়। মাদকের কারণে যুবসমাজ দিশা হারাচ্ছে। তরুণরা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়। মাদকাসক্তির বড় শিকার তরুণ সমাজ। দেশের ভবিষ্যৎ কর্মশক্তি নেশায় বুঁদ হয়ে থাকলে উন্নয়নের চাকা খাদে পড়বে। মাদকের এই ভয়াবহ থাবা বিভিন্ন পরিবারে ও সমাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ। মরণ নেশা মাদকের করাল গ্রাসে চরিত্র নষ্টের সাথে এইচআইভি ও এইডসের মতো ঘাতক রোগের বিস্তার ও আক্রান্ত হয়ে তরুণরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালুর সাথে মূল্যবোধ, সুনৈতিকতা বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা, প্রবন্ধ, রচনা, দেয়াল লিখন, পত্রিকা বের করার সাথে এসব কর্মকান্ডে যারা ভালো করবে, তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সৃজনশীলতা বেড়ে যাবে। ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের সহশিক্ষার সুবাধে- অবাধ মেলা মেশার সাথে পর্যায়ক্রমে আবেগ, কৌতূহল, প্রেম, ভালোবাসায় জড়ানো এরপর ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, বিচ্ছেদ, বিরহ, প্রতিশোধের স্পৃহা, অবসাদ ও হতাশায় পড়ে মাদক ধরে পরবর্তী সময়ে আর ফিরে আসতে পারছে না।
মাদক ব্যবসার পেছনে প্রভাব ও প্রতাপশালীদের ভ‚মিকার অবসান ঘটাতে হবে। কোন মাদকাসক্ত, মাদকচক্র, বিক্রেতা, সিন্ডিকেটধারী ও মাদকসেবী নেতা-কর্মী দলে থাকবে না রাজনীতিবিদদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনীতির সংযোগ বন্ধ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন