Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইউপি নির্বাচন-২০১৬ : অনিয়ম সহিংসতা প্রথম ধাপেই

প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৮ এএম, ২৩ মার্চ, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় সারা দিনে সহিংসতায় বিভিন্ন স্থানে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পিরোজপুরের ধানিসাপায় পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মারা যায় ৬ জন। এছাড়া টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশ-বিজিবির ত্রিমুখি সংঘর্ষে আরো মারা যায় ২ জন। নেত্রকোনা জেলার খালিয়াঝুড়ি ইউনিয়নে আবু কাউসার নামে আরেকজন হয়েছেন। এছাড়া পটুয়াখালী এবং ঝালকাঠিতে মারা গেছেন আরো দুইজন। এসব সহিংসতায় আহতের সংখ্যা কয়েকশ’। সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, মূলত সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্র দখলের প্রবণতা এবং প্রতিপক্ষের প্রতিরোধের কারণে এত ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা ঘটেছে। নেতাকর্মীদের পরস্পরের উপর হামলা ছাড়াও ভোট গ্রহণে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মঠবাড়িয়ায় কেন্দ্র দখল নিয়ে গোলাগুলিতে ৬ জন নিহত
পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা : পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানিসাপা ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের প্রায় সবাই পুলিশ ও বিজিবর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। মঠবাড়িয়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান রাত সাড়ে নয়টায় জানিয়েছেন ৫/৬ জন নিহত হওয়ার সংবাদ শুনেছি। আমি এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
টেকনাফে আ’লীগের দু’গ্রুপের গোলাগুলি, নিহত ২
কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা : কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে আওয়ামী লীগের দু‘গ্রুপের গোলাগুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে। এ সময় আরও ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় পর এই গোলাগুলি শুরু হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সোনা আলী ও বিদ্রোহী প্রার্থী নূর হোসেনের সমর্থকদের সাথে বিজিবি ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। প্রাথমিক তথ্যে ২ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নূর হোসেন বিজয়ী হয়েছেন।


ব্যালট বই ছিনতাই কেন্দ্র দখল
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক কারচুপি, ব্যালট বই ছিনতাই, বিরোধী দল-মতের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের মহোৎসবের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও যোগীপোল ইউনিয়নে গুলি বর্ষণ করেছে পুলিশ। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরেই জাল ভোট, অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে ভোট বয়কট করেন বিএনপি মনোনীত কয়েকজন প্রার্থী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স কেন্দ্রের মহিলা ভোট কেন্দ্রের ৪নং মহিলা বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জয়দেব দাশের সামনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ ইসহাক সরদারের নৌকা প্রতীকে গণভোট (ব্যালট বই নম্বর ২২৭) দেয় কয়েকজন যুবক। এ দৃশ্য দাঁড়িয়েই দেখছিলেন এস আই আব্দুল আলীমসহ সঙ্গীয় ফোর্স। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদাউস সরদারের নেতৃত্বে এ কেন্দ্রে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শী ও ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের। বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে এই কেন্দ্রের ২য় তলার ৩নং বুথ থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ আক্তারুজ্জামানের সামনে থেকে দু’টি ব্যালট বই রিটার্নিং অফিসার রূপসা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলামের সামনে ছিনতাই করে নিয়ে যায় মোঃ কামরুল ইসলাম সরদারসহ কয়েকজন যুবক। পরে এ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাঞ্ছারামপুর ও আশুগঞ্জে আহত ৩০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুরে ইউপি নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধোর, প্রকাশ্যে ভোট প্রদান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাঞ্ছারামপুরে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নে সাতবিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সোয়া ১১টায় জাল ভোট দেয়া নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ব্যালট পেপার, ৪টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এসময় তাদের হামলায় পোলিং অফিসার হেলাল উদ্দিন আহাম্মদসহ ৫ জন আহত হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ ফজলুল হক কেন্দ্রে হামলার সত্যতা স্বীকার করেন। একই ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। গুরুতর আহত মহিউদ্দিন (২৩) কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তেজখালী ইউনিয়নের হাসননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন টেঁটাবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়। টেঁটাবিদ্ধ শাহ আলম (৫০), মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও রতন মিয়া (৪২) কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষে আহত ১০ : গুলি বর্ষণ
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান,
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে দু’মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ওই কেন্দ্রে ১৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পুলিশ ১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে গোপালপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গুয়াধানা বেনী মাধব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বহিরাগত আ’লীগ কর্মীদের কেন্দ্র দখল
নরসিংদী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান,
ব্যাপক কেন্দ্র দখল, অবাধ সীল-মারামারিসহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ভোটকর্মীদের একাধিপত্যের মাধ্যমে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ও গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ব্যাপক অনিয়ম ও সন্ত্রাসের মুখে ডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ ইকবাল সকাল সাড়ে ৯ টায় নির্বাচন বর্জন করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, সকাল ৮ টার পূর্বেই পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ, রূপগঞ্জ, আড়াই হাজার ও নরসিংদীর পাঁচদোনা, মাধবদী এলাকা থেকে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রবেশ করে সকল কেন্দ্রে ঢুকে ভোটার লাইনগুলো দখল করে নেয়। বহিরাগত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে অবস্থান নিয়ে সাধারণ ভোটারদেরকে কেন্দ্রে প্রবেশের বাধা প্রদান করে। প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই ঘটে এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। বিএনপির ভোটকর্মীরা জানায়, সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে খিলপাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করেন পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ ও পৌর মেয়র শরিফুল হক। তারা কেন্দ্রে প্রবেশের সাথে সাথেই খিলপাড়া কেন্দ্রে অবাধে সীল মারামারি শুরু হয়। প্রায় একই সময় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ, জুয়েল ও টিটুর নেতৃত্ব শান্তানপাড়া প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে সীল মারামারি হয়। বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হবার পর সকাল ১১ টার দিকে আ’লীগের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান, একজন পৌর চেয়ারম্যান এবং নরসিংদীর একজন ইউপি চেয়ারম্যান এবং খিলপাড়া ভোট কেন্দ্রের কাছে একটি বাড়ীতে গরু জবাই করে আমোদ-ফুর্তি করে খাওয়া-দাওয়া করে চলে যান। প্রায় একই সময় জনৈক আক্তার মিয়ার বাড়ীতে আরেকটি গরু জবাই করে ফুর্তি করে খাওয়া-দাওয়া করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান,
সদর উপজলার ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবর রহমান মৃধার কর্মীদের উপর নির্বাচনী প্রচারণাকালে গত সোমবার বিকেল ৬টায় সরদারকান্দি এলাকায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী মাহবুব হাওলাদারের নেতৃতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মীদের উপর হামলা হয়। এতে ২ জন আহত হলেও মোশারফ খালাশী (৪০) নামে ১ জনের অবস্থা আশংকাজনক। বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আক্রমণকারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি মটরসাইকেলও ভাঙচুর করে।
আ’লীগের প্রার্থীকে জরিমানা
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস জানায়,
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত স্থানীয় ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশেই নির্বিঘেœ ভোট দিয়েছেন। তবে নির্বাচন চলাকালে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলপুরের ৬ নং পয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এনামুল কবিরকে (৪০) ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নির্বাচনে বড় ধরনের কোন সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
ভোট বর্জন, ১৩ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান,
কারচুপি, নির্বাচনে অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ও কলারোয়া উপজেলার যুগেখালী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জেলার ৫টি উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ধুলিহর ইউপির বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক মোদাচ্ছেরুল হক হুদা ও সংবাদকর্মীদের কাছে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে কলারোয়া উপজেলার যুগেখালী ইউপি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রবিউল ইসলাম ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শেরপুরে সংঘর্ষে আহত ১৬
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান,
গতকাল মঙ্গলবার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ চলে। সকাল থেকে দুপুর বারটা পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা গেলেও বারটার পর থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কমে যায়। রাজনগর ইউনিয়নের মরিচপুরান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে দুই ঘন্টার মত ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এদিকে রাজনগর ইউনিয়নের দোহালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী সম্মিলিতভাবে জোর করে সিল মারতে গেলে অপর মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ বাধলে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে বিজিবি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
নোয়াখালী ব্যুরো জানান, হাতিয়া চরকিং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাবার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল আউয়াল ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সাহাদাত হোসেন আহত হয়। এখানে বিভিন্ন কেন্দ্র সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। সোনাদিয়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় আনারস মার্কার ৮ সমর্থক আহত হয়। জাহাজমারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা মার্কার সমর্থকরা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করলে পুলিশ ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে পুলিশ ব্যালট বাক্স উদ্বার করে। একই ইউনিয়নের সেন্টার বাজার ভোট কেন্দ্রের বাইরে নৌকা মার্কার দুই শতাধিক সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়। বুড়িরচর ও জাহাজমারা ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় আনারস মার্কার ৮ সমর্থক আহত হয়। চরকিং ইউনিয়নে নৌকা মার্কার সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্রে আসা ভোটারদের বাধা প্রদানসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে আনারস মার্কা প্রার্থী অভিযোগ করেন।
৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচন বয়কট
পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া প্রায় শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো পিরোজপুরের ৩৬৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ। তবে কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া ও ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন জেলার নেছারাবাদের আওয়ামী লীগ দলীয় ও স্বতন্ত্র ২ জনসহ বিএনপি দলীয় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
এদিকে, বেলা ১১টার দিকে মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানী সাফা ইউনিয়নের পাতাকাটা মুজাহার হাজী বাড়ি ইবতেদায়ী মাদরাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর কর্মীরা ভোট কেন্দ্র দখল করতে গেলে পুলিশ ৪ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, বেলা সাড়ে ১১টায় কাউখালীর সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের হোগলা বেতকা হাইস্কুল কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছিনতাইকারীদের হামলায় এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আহত হন। আর ছবি তুললে গেলে আরটিভি ও বিজয় টিভি সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনার বেড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্রে জোর করে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে সিল মারা, সংঘর্ষ-সংঘাতের মধ্যদিয়ে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মাসুমদিয়া ও রূপপুরসহ কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্ততঃ ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, মাসুমদিয়া ইউনিয়নের বিএনপির দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী শামসুর রহমান সমেজ আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে বিএনপির এজেন্টদের জোর করে বুথ থেকে বের করে দেয়া, মারপিট এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে জোর করে সিল দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন।
ভোট কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের হামলা,
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান,
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সিংজোড় চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালে বেলা এগারটার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের লাঠির আঘাতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ আহত হয়েছেন। হামলার পর ওই ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ১১ ইউনিয়নে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধাদান, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করা দেওয়া, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন, একজনের ভোট অন্যজন প্রদান, প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীকে ভোট প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যদিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাসদ ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্মীদের কঠোর ভূমিকার কারণে মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে আমবাড়িয়া ও পোড়াদহসহ ২/৩টি ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন প্রত্যক্ষ করা গেলেও বাকী ইউনিয়নগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের মধ্যদিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার আমলা ইউনিয়নে জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. রফিকুল ইসলামের কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধাদান করেন। এছাড়াও তার এজেন্টদের প্রায় সকল কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ায় তার কর্মীরা ভোট বর্জন করেন।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১০১টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যালট ছিনতাই সংঘর্ষ
বগুড়া অফিস জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় নির্বাচনে ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার জেলা সারিয়াকান্দিতে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টধাওয়া, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র দখল এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই ঘটনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় মারামারিতে কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইলিয়াস নামের সাবেক এক ইউপি মেম্বারের অবস্থা গুরুতর।
গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে উপজেলার হাট শেরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজবলাই উচ্চ বিদ্যালয় ও খোর্দ্দবেলাইল কেন্দ্রসহ আরো কমপক্ষে ২টি কেন্দ্রে সংঘর্ষের খবর জানা গেছে। নিজ বলাইল কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মদদে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের কঠোর অবস্থানে আবারো ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুপুরে খোর্দ বেলাইল এলাকায় সংঘর্ষে সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াসসহ কমপক্ষে ৪ জন আহত হবার ঘটনা ঘটে। তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে এ খোর্দবেলাইল কেন্দ্রের বাইরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে নীরব সন্ত্রাস এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে নিগৃহীত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, কতিপয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সীমাহীন নৈরাজ্য আর অনিয়মসহ ছোট-বড় গোলযোগ ও বিশৃংখলার মধ্য দিয়ে গতকাল বরিশাল বিভাগের ৩৫৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ২৭১টিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গোলযোগ, অনিয়ম ও দখলের অভিযোগে শতাধিক কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে গেছে। শতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রের বাইরে অনেকটাই ছিমছাম পরিবেশ দৃষ্টিগোচর হলেও প্রায় প্রতিটি বুথের মধ্যে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা সেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। অনেক ভোটকেন্দ্রেই ভোটারের কাছ থেকেই চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ব্যালট রেখে দিয়ে সদস্য ও সরক্ষিত সদস্য পদের ব্যালট তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। অথচ অনেক ভোটকেন্দ্রের বাইরের পরিস্থিতি দেখে কোনো কিছু বোঝার উপায় ছিল না। বরিশাল জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে গতকালের ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছেন।
বরিশাল জেলার দশ উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নে গতকালে ভোট গ্রহণ পর্বে গোলযোগ, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছে। এর সাথে ছিল ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়াসহ ভোট বর্জনের ঘটনাও। তবে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে চারজন গুলিবিদ্ধ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে গতকাল (মঙ্গলবার) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট গ্রহণের সময় বিক্ষিপ্ত সংঘাত-সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বেশিরভাগ কেন্দ্রে জালভোট, দখল ও প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। দুপুরের পর ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল আওয়ামী লীগের লোকজনের দখলে।
ভোট গ্রহণের শুরুর আগেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষ ভোটারের সমাগম ঘটতে থাকে। সহিংসতার ভয় উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রগুলোতে এসব ভোটারের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। সকাল ৮টায় শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয় ভোট গ্রহণের পালা। মোহনপুর ইউনিয়নের কুরইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুরুতেই ছিল ভোটারের দীর্ঘ সারি। ভোট এলেই ওই ইউনিয়নের কুরইন গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ভোট নিয়ে কখনো দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি এ কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে টানা প্রায় দুই ঘণ্টা ভোট গ্রহণের একপর্যায়ে সকাল ১০টায় জাকির হোসেন ও আলমগীর হোসেন নামে দুই মেম্বার প্রার্থী হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ তাদের সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একই গ্রামের দুই পাড়ার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্সও আসে। প্রায় আধাঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর পুনরায় তা শুরু হলেও কমে যায় ভোটারের উপস্থিতি।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে বরকামতা ইউনিয়নের প্রেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী আমীর হোসেন ও রুস্তম আলীর সমর্থকদের মধ্যে জালভোট দেয়া-নেয়া নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এসময় ভোটকেন্দ্রের পাশে নিজ বাড়ির উঠোনে বসে থাকা প্রেমু গ্রামের মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে নির্মাণ শ্রমিক জুয়েল সংঘর্ষের কবলে পড়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও ভোট গ্রহণ চলাকালে সকাল ১০টায় ফতেহবাদ বড়কান্দা ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেম্বার প্রার্থী কবির ও বিল্লালের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিজের অস্ত্রে দুই পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তারা হলেন- ঘোষঘরের ইসমাইল, সোহেল ও বড়কান্দার মনির।
যুবলীগ-ছাত্রলীগের তা-ব
সিলেট অফিস জানায়, গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৮টায় সারা দেশের ন্যায় সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ, হাটখোলা, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, টুলটিকর, টুকেরবাজার, মোগলগাঁও এবং কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে ৯৫ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল ভোট গ্রহণ। ভোটারের উপস্থিতিও ছিলে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একের পর কেন্দ্র দখল-ভাঙচুর, সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু করে তারা। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে জাল ভোটের আশ্রয় নেয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকেই সিলেটের ৮টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু দুপুর থেকে একের পর এক ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা চালায় ক্ষমতাসীনরা। পাল্টে যায় ভোট গ্রহণের দৃশ্যও। পরে ভয়ে ভোটাররা আর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যায়নি। আর যারাও ভোট দিয়েছেন তারা ভয় নিয়েই ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছেন। কিন্তু অনেকেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেছেন তাদের ভোট কাস্ট হয়ে গেছে। পরে ভোট না দিয়েই ফিরতে হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার ৬ নং টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করে আখালিয়ার যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদ ও কিলার সাহেদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন যুবক। এসময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই সময় ভোটকেন্দ্রে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো ছাড়াও বিএনপির পোলিং বুথও ভাঙচুর করে হামলাকারী।
ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টাহামলা
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় ব্যাপক সংঘাত, সহিংসতার মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, মনপুরা এবং লালমোহন উপজেলায় অন্তত ৩৫টি কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মেম্বার প্রার্থী, পুলিশসহ অন্তত ১৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪৬ জনকে ভোলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মনপুরার হাজির কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় জাকির হোসেন নামের এক কৃষককে পিটিয়ে আহত করেছে যুবলীগ কর্মীরা। এসব ঘটনায় পুলিশ এক মেম্বার প্রার্থীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। সংঘর্ষের অধিকাংশ ঘটনায়ই ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের মেম্বার প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে। সংঘর্ষের কারণে ৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম ছিল তজুমদ্দিন উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নির্বাচন। সেখানকার অধিকাংশ কেন্দ্রেই সংঘাত ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে ভোলা জেলা বিএনপি। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুরে কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষ
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্র দখল, এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে বের করে দেয়ার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীই ভোট বর্জন করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। কমলনগর ৪টি ও রামগতির ২টিসহ ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা সোমবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। কমলনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পাটোয়ারীর হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সকাল ৮টার পর ভোটকেন্দ্র তাদের দখলে নিয়ে নেয়। তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ও একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আমি আমার নিজের ভোটও দিতে পারিনি।
কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নির্বাচনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারদলীয় প্রার্থীদের লোকজন কর্তৃক ভোটকক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয় পরে অত্যন্ত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্ধ জানান, ভোটগ্রহনের পর থেকে সরকারদলীয় লোকজন প্রায় সববেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ করে কেন্দ্র দখল করে বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। তাদের হামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা নির্বাচন বর্জন করেছেন।
এদিকে কমলনগরে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে পাটারিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৪ নং-ওয়ার্ড) কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গ ভোট চলাকালীন সময়ে দুর্বৃত্তদের ১ হাজার ৩শ ব্যালট পেপার ছিনতাই করার পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জন
মুন্সিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১০ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যপক সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের ঘটনা ঘেেটছে। এর প্রতিবাদে বিএনপির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সিরাজদিখান উপজেলার সমবায় মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৪ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনিত ৪ প্রার্থী ছাড়াও অপর এক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ধীরন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন করেন।
খালিয়াজুরীতে আ’লীগ প্রার্থীর ছোট ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা : প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন নির্বাচনী সহিংসতায় নেত্রকোনা জেলার হাওর দ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী গোলাম আবু ইছহাক-এর ছোট ভাই যুবলীগ কর্মী গোলাম আবু কাউছার (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফার নির্বাচনের দিন নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষে আদাউড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গননাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে সৃষ্ট নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী গোলাম আবু ইছহাক-এর ছোট ভাই গোলাম আবু কাউছার (৩২) গুলিবিদ্ধ হন। কাউছারকে আশংকাজনক অবস্থায় খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুধীর চন্দ্র দাস তাকে মৃত ঘোষনা করেন। কে বা কারা গুলি করেছে তাৎক্ষনিক ভাবে তা জানা যায়নি। তবে তার অপর ভাই গোলাম আবু ছালেক জানায়, রাত ৭টার দিকে আদাউড়া ভোট কেন্দ্রে ভোট গননা ও ফলাফল নিয়ে পুলিশের সাথে তর্ক-বিতর্কের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করলেও মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক সহিংসতার আশংকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত টুকিটাকি ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়। যশোরের মনিরামপুর উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মামলা থাকার কারণে একটি ইউনিয়ন হরিহরনগরে নির্বাচন হয়নি। যার কারণে ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ ইউনিয়নে আ’লীগের ১৬ জন, বিএনপি ১৬ জন, আ’লীগ ও বিএনপি’র বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চেয়ারম্যান পদে।
মঙ্গলবার সকালে মনিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়নের পলাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে নারী ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পলাশী গ্রামের বাসিন্দা জলি ম-ল ও শিল্পী বিশ্বাস জানান, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে এসেছেন। কেউ হুমকি ধামকি দেয়নি। আরেকজন ভোটার রেখা বেগমও জানালেন কোন হুমকি ধামকি নেই। একই ধরনের দৃশ্য চন্ডিপুর, কুলটিয়া, রোহিতা, নেহালপুর ও রাজগঞ্জ কেন্দ্রে। মোট ১৫০টি কেন্দ্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
ঝালকাঠিতে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে নির্বাচনীয় সহিংসতায় এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর ভাই নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত আবুল কাশেম সিকদার (৫৫) ইউপি সদস্য প্রার্থী চুন্নু সিকাদারের ভাই। নিহতের ছেলে সোহাগ সিকদার এ অভিযোগ করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের কালিয়ান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ইউপি সদস্য প্রার্থী সজীব হোসেনের সমর্থকরা দলবল দিয়ে জাল ভোট দিচ্ছিল। এতে বাঁধা দেয় চুন্নু সিকদারের সমর্থকরা। এমন সময় সজীব হোসেনের সমর্থকরা লাঠিসোঁঠা দিয়ে হামলা চালায় চুন্নু সিকদারের সমর্থকদের উপরে। এতে আবুল কাশেম সিকদার গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত হয় কমপক্ষে পাঁচজন।
ফুলপুরে গুলিবিদ্ধ-১
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস :
ময়মনসিংহের ফুলপুরে ২ নং রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনার সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকার খরিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মো: জয়নুদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তিনি স্থানীয় দেওখালী গ্রামের বাসিন্দা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণার সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে জয়নুদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি নির্বাচন-২০১৬ : অনিয়ম সহিংসতা প্রথম ধাপেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ