Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে : দলীয় প্রার্থীকে কেন্দ্রে যেতে বাঁধা

ভোট চুরির অভিযোগ বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চুরির অভিযোগ করেছে বিএনপি। একইসাথে নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং দলীয় মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলাকে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে বাঁধা দেওয়ারও অভিযোগ করেছে দলটি। গতকাল (বৃহস্পতি) দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
রিজভী বলেন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার পর থেকেই আমরা বলেছি সরকার নানাভাবে সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি করছে। তারই প্রতিফলন ঘটলো নির্বাচনে ভোটারদের টার্ন আউটের মধ্য দিয়ে। ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার কারণেই ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির হার একেবারেই কম। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি ভোট চুরি দুইভাবে হতে পারে, একটি হলো ভোট সন্ত্রাসের মাধ্যমে অন্যটি ভোট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। রংপুর সিটি নির্বাচনে দুই পদ্ধতিই প্রয়োগ করেছে ভোটারবিহীন সরকার। বিএনপি নেতা সকালের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের ক্যাডার এবং প্রশাসনের দায়িত্বরত সরকারদলীয় লোকেরা বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদেরকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি ধানের শীষের প্রার্থী কাউসার জামান বাবলাকে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। আজ্ঞাবহ ইলেকশন কমিশনের ব্যর্থতার কারনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারেনি। নির্বাচন শুরুর পর থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম ও কেন্দ্র দখলে সেটিরই বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, ফতেপুর স্কুল এবং দেউডোবা ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। ভোট দিতে ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এছাড়া কেল্লাবন্দ ভোট কেন্দ্রও সন্ত্রাসী কায়দায় দখলে নিয়ে কিছু সময় ব্যালট পেপারে সীল মারে। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও বিএনপি সমর্থিত এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে সীল মারার খবর পাওয়া গেছে। মহাজোট সরকারের মন্ত্রী, মহাজোট সরকারের মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুত এরশাদ সাহেব সারাদিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তার করলেও নির্বাচন কমিশন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। যেহেতু ভোটার উপস্থিতি কম তাই এখন দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরকারের লোকেরা কারচুপির মাধ্যমে ব্যালট পেপারে সীল মেরে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার আয়োজন করছে কী না সেটি বৃহৎ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতে রংপুর সিটি করপোরেশনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে গভীর সংশয় সৃষ্টি হয়েছে; আমরাও সন্দিহান। বুধবার রাতে শহীদুল নামে স্থানীয় এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী মহাজোটের খুশী করারা কাজে বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।এছাড়া আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারাও প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন। কিন্তু তা সত্বেও নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি ভোট কেন্দ্র অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলছে কমিশিন। কিন্তু ঝুঁিকপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বেশী। অথচ এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা শুরু থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বললেও ইসি সেনা মোতায়েন করেনি। বরং সেখানে আনসার সদস্যের নামে আজ নিয়োগ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতাকর্মীদের। বলা হেেয়ছে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যত সদস্য নিযোগ করা হয়েছে বাস্তবে বেছে বেছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অনুসারী ক্যাডারদেরই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, ইভিএম নিয়ে সংশয় আছে; এটি জটিলতাপূর্ণ। তারপরও আপনারা সেখানে ইভিএম দিয়েছেন কয়েকটি কেন্দ্রে। পরীক্ষামূলক যদি একটা কেন্দ্রেও হয় সেখানে আড়াই হাজার ভোট থাকে। তাহলেও তো ফলাফলে ব্যাপকভাবে পাল্টে যেতে পারে। আমরা মনে করি, এটা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের খুশি করার জন্য করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘শুধুমাত্র প্রভুদের মনোবাঞ্ছনা’ পূরণ করতে এই যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। ভারতের গুজরাটে বিধান সভার নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলের আপত্তির কথা তুলে ধরেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে অতীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বারবার রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছি এবং ইলেকশন কমিশনকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবার আহবান জানিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকারের ইশারায় ঠুটো জগন্নাথের মতো নীরবতা পালন করেছে। বিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বিমাতাসূলভ আচরণ করেছে। সব মিলিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপক্ষে হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা আবারো গভীর সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করছি।
একপ্রশ্নের জবাবে রংপুর সিটি নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির আহŸায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভীষণভাবে আনপপুলার, নৌকাও আনপপুলার। আর লাঙ্গলের প্রতি রংপুরের মানুষের যে আকর্ষণ ছিল, তা চলে গেছে। এখন বিকল্পই বিএনপিধানের শীষ। এবারের নির্বাচন যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে তাহলে ভোটের বিপ্লব ঘটতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধানের শীষের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ