Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তিপণের জন্য অপহরণ কি-না ক্লিয়ার নয়

৪৪ দিন পর বাড়ি ফিরে ড. মোবাশ্বার হাসান সাংবাদিকদের যা বললেন-

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


নিখোঁজের ৪৪ দিন পর বাসায় ফিরে ড. মোবাশ্বার হাসান সিজার বলেছেন, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ কি-না বিষয়টি ক্লিয়ার নয়। আবার বলেছেন, আমার ধারণা, হয়তো মুক্তিপণের জন্যই অপহরণ করা হয়েছিল। তিনি আরো জানান, ওরা আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর যখন ঘুম ভাঙে, মনে হলো আমি অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। দেখি একটা অচেনা ঘর, ঘরের জানালা আছে, সেটাও বাইরে থেকে সিল করা ছিল। রুমের ভেতর একটা ময়লা তোশক ছিল। আর পাশের আরেকটা রুমে চার-পাঁচজন কথা বলছিল। তারপর থেকে সেখানেই ছিলাম। নিখোঁজের পর বাড়ি ফিরে গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান সিজার। মোবাশ্বার বলেন, ওরা আসলে মুক্তিপণ চায়।
একদিন পরিবারকে ফোনও করেছিল। তাদের আসল উদ্দেশ্য টাকা। শেষের দিকে এদের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে বাকবিতÐা হচ্ছিল, আমাকে ছাড়বে, না কি মেরে ফেলবে? আমার একটা ধারণা, ওদের কোনো একজন কোনোভাবে মিসিং হয়েছে। কবে হয়েছে জানি না। তারা অনেক ভীত ছিল। তিনি বলেন, মাঝখানে তারা বলেছিল, টাকা পয়সার বিষয়টা তোর পরিবার ও কোনো বন্ধু-বান্ধবীকে জানা। অথবা তোর কোনো টাকা পয়সাওয়ালা বন্ধু-বান্ধবী আছে কি না তারে ফোন দে। মোবাশ্বার বলেন, ‘এ সময়টা আমার সাইক্লোনের মতো গেছে। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার ফ্যামিলি নরমাল। যেন সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে একটি গাড়ির মধ্যে বসানো হয়। গাড়িতে বসা একজনের কোলের মধ্যে আমাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো শুইয়ে রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর এলাকায় আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলে, তুই যা। পেছনে ফিরে তাকালে মাইরা ফালামু। নামার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে সিএনজি (অটোরিকশা) নিয়ে বাসায় আসি। সিএনজি চালকের মোবাইল থেকে আব্বাকে ফোন দিয়েছি। ৫০০ টাকা নিয়ে আব্বাকে বাসার নিচে আসতে বলি। পরে টাকা দিয়ে বাসায় ঢুকেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়। হোটেলের ঠাÐা খাবার দেয়া হতো। আমি অপহৃত হওয়ার পর আসলে কী হয়েছিল তা জানি না। আমাকে মিডিয়া অনেক সাপোর্ট করেছে জেনেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মিডিয়াকে।
একমাত্র ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন মোবাশ্বারের বাবা মোতাহার হোসেন।
তিনি আরো বলেন, ‘কিডন্যাপ না, আসলে রিয়েলাইজ করা যাবে না বিষয়টি কতটুকু আনরিয়েল (অবিশ্বাস্য)’।
গত ৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান সিজার। নিখোঁজের পর তার পরিবারে পক্ষ থেকে খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর ‘জে’ বøকের ১২/৩ সড়কে অবস্থিত নিজের বাসায় ফিরে আসেন তিনি।
মোবাশ্বার হাসান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পেও কাজ করতেন।
মোবাশ্বার হাসান বলেন, ইউএনডিপি থেকে মিটিং শেষে বাসায় আসার জন্য উবার ডেকেছিলাম। আমার যতটুকু মনে আছে। রোকেয়া সরণীতে কয়েকজন গাড়িটা থামায়। বলে এটা চোরাই গাড়ি আপনি নামেন। আমি নেমে পড়লাম, অন্য গাড়ি নিতে চেষ্টা করছিলাম। তখন সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়, আর পেছন থেকে আমার চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। পরে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে ওঠায়।
‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আমাকে একটি গাড়িতে তোলে, একজনের কোলের মধ্যে আমাকে শোয়ানো হয়েছিল। ওই সময় তাদের মধ্যে বাকবিতÐা হয়েছিল। আনুমানিক দেড় ঘণ্টা পর এয়ারপোর্ট রোড এলাকায় আমাকে নামায় দিয়ে বলে, ‘তুই যা, দৌড় দে, পেছনে ফিরে তাকালে মাইরা ফালামু’। আমি গাড়ি থেকে নেমে পেছনে না তাকিয়ে সামনে এসে একটা সিএনজি থামালাম। এরপর সিএনজি চালকের মোবাইল নাম্বার থেকে আব্বাকে ফোন দিয়েছিলাম। আব্বাকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাসার সামনে থাকার জন্য বলেছিলাম।



 

Show all comments
  • রফিকুল ইসলাম ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৬ এএম says : 0
    দেশে যে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিপণ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ