Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মেয়র নাছিরের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর

মাঝিহারা চট্টগ্রাম নগর আ’লীগ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


‘নৌকা আছে। নৌকার মাঝি মহিউদ্দিন চৌধুরী তো নেই। দলের হাল ধরবে কে? কী যে হবে দলের ভবিষ্যৎ অবস্থাটা? সামনে আসছে জাতীয় নির্বাচন’। গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড়ে মাঝ-বয়সী কয়েকজন লোক আলাপে-আড্ডায় এসব কথা বলছিলেন। স্পষ্টত বোঝাই গেল তারা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা ও কর্মী-সমর্থক। এছাড়া আফসোস করে বলছিলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিইসি এলাকায় অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জের ধরে নিরীহ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট, শো-রুম ভাঙচুর করা হলো। ওদেরকে এখন কে শায়েস্তা করবে! দল ও সরকারে ইমেজ নষ্ট হচ্ছে এসব কর্মকাÐে।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুবরণের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। গত কয়েক দিনে সমগ্র বন্দরনগরীর আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মী, সমর্থক সবার মাঝে এখানে-সেখানে যে প্রশ্নটি মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে- এখন কে ধরবেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের হাল? পরবর্তী উপযুক্ত কাÐারীর অভাব বোধ করছেন দলের অধিকাংশই কর্মী-সমর্থক। মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন। তার নেতৃত্বগুণ বা যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চট্টগ্রামে নেতা-কর্মীদের মাঝে কখনও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। বরং তিনি গণমানুষের কাছের রাজনীতিবিদ হিসেবে তার গড়া ব্যতিক্রমী ক্যারিয়ারে হয়ে উঠেন চট্টগ্রামের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং অভিভাবক হিসেবে। এ মুহূর্তে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে তার সমকক্ষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কাÐারী মিলবে কিনা তা নিয়ে শুধু দলের মধ্যেই নয়; চট্টগ্রামে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অপরাপর দল বা জোট মহাজোটের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে নানামুখী কৌতূহল দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল হিসেবে চট্টগ্রাম নগরে নেতৃত্বের শূণ্যতা হয়তো বেশিদিন থাকবে না। একসময় শূণ্যস্থান পূরণ হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে হয়তো সময় লাগবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী তো একদিনে সৃষ্টি হননি। অন্যকেউ যদি সুযোগ পান তাহলে যোগ্য হয়ে নেতৃত্বের শূণ্যতা পূরণ করতে সক্ষম হবেন। তবে মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতির মতো মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কে আসছেন সেটি নির্ভর করছে প্রধানত হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ডের উপর। যদিও এ নিয়ে মাঠে সরব আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আগামীদিনের কাÐারী হিসেবে যাদের নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে তাদের মধ্যে আছেনÑ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সহ-সভাপতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সহ-সভাপতি আফছারুল আমীন, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দীন এ মুহূর্তে সভাপতি পদে যেতে আগ্রহী হবেন না এমনটি দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
মহিউদ্দিনের ঘোরতর সমর্থক দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ তার পুত্র নওফেলকে নগরে নৌকার ‘মাঝি’ হিসেবে দেখতে আগ্রহী। তিনি উচ্চশিক্ষিতও বটে। তবে পিতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বগুণ তিনি কতটা ধারণ করতে পারছেন বা পারবেন এবং বয়সে অনেক তরুণ হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরে দলের হাল কিভাবে ধরবেন তা নিয়েও আলাপচারিতা রয়েছে। আবার অনেকে বলছেন মহিউদ্দিনের অবর্তমানে সিটি মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ গ্রহণে অনাগ্রহী হলেও এক্ষেত্রে তার ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে নিঃসন্দেহে। তিনি বর্তমানে সপরিবারে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যক্তিগত সফরে রয়েছেন।
তবে সভাপতির পদে সম্ভাব্য যারা আসতে পারেন তাদের পেছনে গ্রæপিং অর্থাৎ নিজ নিজ বলয় তৈরি হয়ে আছে আগে থেকেই। এই প্রেক্ষাপটে যাকেই সভাপতি পদে দায়িত্ব দেয়া হোক না কেন তাকে কেন্দ্র করে অপরাপর গ্রæপগুলো কম বা বেশি বিরোধিতায় নামতে পারে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার গ্রæপিংয়ের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এমনকি মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বের জোর থাকা সত্তে¡ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী তথা মহিউদ্দিন বিরোধী গ্রæপ দীর্ঘদিন ধরে মারামারি, হানাহানি চালিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক এই দলীয় কোন্দল ও বিরোধ সবচেয়ে প্রকট। বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে রক্তারক্তির ঘটনা। এখন মহিউদ্দিনের অবর্তমানে তার সমর্থিত গ্রæপটি কোন দিকে যাবে এ নিয়ে এখনই কথা উঠেছে চাটগাঁর রাজনীতির মাঠে। ভোটের রাজনীতির নানামুখী মেরুকরণে দলীয় গ্রæপিং সামাল দেয়া কেন্দ্রের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে এমনটি মনে করছেন চট্টগ্রামের ঝানু রাজনীতিকগণ।

 



 

Show all comments
  • লাবনী ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ এএম says : 0
    মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত নেতা একজনই হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়র নাছির

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ