Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সেকায়েপ প্রকল্পে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ : ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে জাগিয়ে তোলার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ণে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টে (সেকায়েপ) নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের ভাল করার উদ্যোগ চরম ভাবে ব্যাহত হতে চলেছে। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার প্রায় ৪৮টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প চালু থাকলেও নিয়োগকৃত শিক্ষকরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যাচ্ছেন না। এমনকি তারা চুক্তি ভঙ্গ করে হোম ভিজিট, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ফরমেট অনুযায়ী তালিকা না করা, পাঠটীকা প্রস্তুত ও ধারাবাহিক মূল্যায়ণসহ বাধ্যতামুলক শর্তগুলো পুরণ করছেন না। এই প্রকল্পে স্কুল সভাপতি হচ্ছে প্রথম পক্ষ ও শিক্ষকরা হচ্ছেন দ্বিতীয় পক্ষ। দ্বিতীয় পক্ষ যদি ১৩টি শর্তের যে কোন একটি অমান্য করেন তবে প্রথম পক্ষ ৩০ দিনের লিখিত নোটিশ দিয়ে চুক্তি বাতিল করার অধিকার সংরক্ষন করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্কুল সভাপতিরা এ বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। ফলে সেকায়েপ প্রকল্পের শিক্ষকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ক্লাস নিচ্ছেন ও প্রতি মাসে তারা বিশ্বব্যাংকের দেওয়া বেতন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে বিসিএস প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বিদেশে ঘোরা আর ঢাকায় ভাল পদায়নের একটা মাধ্যম হিসেবে সেকায়েপ প্রকল্পটি ব্যবহার করে থাকেন। তারা বছরের পর বছর এই প্রকল্পে চাকরিও করছেন। এই প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্ট হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক বা আইসিটি শিক্ষক। যে সব স্কুলে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দুর্বল শিক্ষার্থী আছে, সে সব স্কুল এই প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত। ঝিনাইদহের মহেশপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় সেকায়েপ প্রকল্পটি চালু থাকলেও এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষার্থীদের দূর্বলতা দূর করে পাবলিক পরীক্ষায় ভাল ফল করার দাবি জানিয়ে আসলেও বাস্তবে এই প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসের সুফল পাওয়ার গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। মুখে মুখে দাবি করা হয় সফলতা। জানা গেছে, রেজাল্ট অনুযায়ী তাদের বেতন দেয়া হয় ১৮ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে অতিরিক্ত ১৬ টি ক্লাস (স্কুল সময়ের আগে বা পরে) নিলে আরো অতিরিক্ত ৮ হাজারসহ সর্বমোট ২৫/২৬ হাজার টাকা বেতন পান যা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের চেয়ে বেশী। স্কুল সময়ের আগে বা পরে প্রতি মাসে ১৬টি ক্লাস নিতে হয়, যার একটি ক্লাস না নিলেই বরাদ্দকৃত ৮ হাজার টাকা পাবেন না। কিন্তু তারা ক্লাস না নিয়েই উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে জোগসাজস করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনুপস্থিতিতে একজন অপরজনের ক্লাস নিতে চান না। সরাসরি না করে দেন। তাদেরকে কিছু বলা যায় না, বললেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ফোনে জানান এবং শিক্ষা অফিসার ঘটনা না জেনেই শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। নিয়োগকৃত মনোয়ার হোসেন, শিহাব উদ্দীন ও জেসমিন নাহারও স্বীকার করেন তারা কোন শিক্ষার্থীর বাড়ি যান না। স্কুল সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, তিনি সেকায়েপ প্রকল্পের শর্ত সম্পর্কে অবগত নয়। হরিণাকুন্ডুর শাখারীদহ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, তার স্কুলে নিয়োগকৃত শিক্ষকরা ভাল তবে শর্ত মোতাবেক হোম ভিজিট বা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ফরমেট অনুযায়ী তালিকা, পাঠটীকা প্রস্তুত ও ধারাবাহিক মূল্যায়ণসহ বাধ্যতামুলক শর্তগুলো পুরণ করেন না। স্কুলের সভাপতি শেফালী খাতুন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অভিযোগ উঠেছে হরিণাকুন্ডুর যে স্কুলগুলোতে সেকায়েপ প্রকল্পের শিক্ষক নিয়োগ আছে তারা পুরোপুরি ভাবে শর্ত পুরণ করছেন না। এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুল হক জানান, তিনি এ উপজেলায় নতুন এসেছেন। তাই না জেনে কিছুই বলতে পারবেন না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ