Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইট তৈরিতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মো. গোলাম ফারুক : দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেঁটে ভাটায় নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ফলে ফসলি এই জমিগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাটি কেঁটে নেয়া এ জমিগুলোতে চলতি রবি মৌসুমে আলু সরিষার চাষ না করায় তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেই সাথে ভাটাগুলোতে গাছ ও কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরব রয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ বন্দর নগর তালোড়া ও চামরুল ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে মাঠের মধ্যে কয়েক বিঘা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সরকারি নিয়মানুসারে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়মও মানা হয়নি। এদিকে উপজেলার ভাটার মালিকরা ইট তৈরি করতে জমির মাটি ব্যাবহার করছে। বিভিন্ন গ্রামে মাঠের ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেঁটে ভাটায় নেয়া হচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল কৃষকদের প্রলোভিত করে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা হারে এই সব মাটি ক্রয় করে জমির দেড় থেকে দুই ফুট গভির করে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ফসলি জমির মাটি কাটার এই প্রবনতা বেড়েই চলছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তিও আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরি স্তর কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়াম সহ অর্গানিক বা জৈব্য উৎপাদনের জন্য অপূরনিয় ক্ষতি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সদরের খোলাশ সহ চামরুলের আটগ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমির উপরি ভাগ মাটি কেঁটে নেয়ায় জমিগুলোতে চলতি রবি মৌসুমের আলু সরিষার চাষ করা হয়নি। মাটি কাঁটা অবস্থায় জমিগুলো পড়ে আছে।
এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শস্য ভÐার হিসাবে পরিচিত এই উপজেলার ফসলি জমিগুলো ভবিষ্যতে বন্ধা জমিতে পরিণত হবে এবং বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এ দিকে গড়ে উঠা এই সব ইটভাটার মালিকরা সরকারের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে কয়লার পরিবর্তে ভাটাই অবাধে গাছ ও কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ইটভাটা চত্বরেই প্রকাশ্যে স্ত‚প করে রাখা হয়েছে শত শত মন গাছসহ বিভিন্ন গাছের ডাল ও বড় বড় কাঠের গুল। ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজ ও ফলজ গাছ। সরকারি বিধিবিধান না মেনেই ফসলি জমির উপরে ইট ভাটাগুলো গড়ে উঠেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর সহ চামরুল ও তালোড়া ইউনিয়নে মোট ১০ টি ভাটা রয়েছে। এ ছাড়াও দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা নাগর নদীর কোল ঘেঁষে কাহালু উপজেলার কাশিমালা জোগাড়পাড়া, বীরকেদার, ঘোন কালাই এলাকায় আরও আটটি ভাটা গড়ে উঠেছে। চারিদিকে কৃষি জমি আর মাঝখানে ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমির উপর এসব ভাটা। প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০ এর অধীনে জেলা প্রশাসক ১৯৯০ সালে একটি সার্কুলার ইস্যু করেন যাতে বলা আছে, কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। সেই সাথে জনবসতির তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন না করার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু উপজেলার ইট ভাটা গুলোর অধিকাংশই মালিক এই আইন অমান্য করে ভাটা স্থাপন করেছে।
এ ব্যাপারে গতকাল ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ এর সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি ‘দৈনিক ইনকিলাব’ কে জানান, ইটভাটাগুলোতে লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি তার কার্যালয়ের আওতাভুক্ত নয়। তবে ইটভাটায় লাইসেন্স দেয়ার আগে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। এলাকায় ইট ভাটাগুলো তার সময়ে স্থাপন না হওয়ায় এ সংক্রান্তে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে কিনা না তা তার জানা নেই বলে জানান। তিনি আরো জানান এলাকার ফসলি জমির উপর থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রয় করলে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন কিছু করার থাকে না। তবে জমির উপরের উর্বরাস্তর কেটে নেয়ার ক্ষতির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। একই সাথে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রæত ব্যবস্থা নিবেন। এ দিকে এলাকার পরিবেশ রক্ষাসহ ফসলি জমি রক্ষার্থে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রæত হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ