Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নরসিংদিতে গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা

যৌতুকের টাকা না দেয়ায়

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

৩ লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয়েছে অথরা আক্তার সুমী নামে এক গরীব অসহায় গৃহবধূ। পাষন্ড স্বামী ও তার আত্মীয়রা সুমীকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে তার মাথার চুল কেটে অর্ধন্যাড়া করে দিয়েছে, চোখের ব্রæ চেছে দিয়েছে, সিগারেটের আগুন দিয়ে সারা শরীর ঝলসে দিয়েছে, পিটিয়ে সারা শরীর তুলোধুনা করে দিয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর রায়পুরা উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে এই বর্বর কান্ডটি ঘটেছে। গত সোমবার রাতে গৃহবধূ সুমী এ ব্যাপারে রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
জানা গেছে, একই উপজেলার সাহারখোলা গ্রামের গরীব পান দোকানদার বাহার উদ্দিনের কন্যা অথরা আক্তার সুমীকে জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের আবুল হাশেমের পুত্র কবির হোসেনের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। কবির ও সুমীর দাম্পত্য জীবনে আবির (৪) ও সাব্বির (২) নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক লোভী স্বামী কবির, সুমীর নিকট যৌতুক দাবি করে আসছিল। দাম্পত্য সুখের কথা চিন্তা করে সুমী তার পিতার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা যৌতুক এনে স্বামীর হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এরপরও তার লোভ শেষ হয়নি। সে আরো টাকা এনে দেয়ার জন্য সুমীকে চাপ দিতে থাকে। সাম্প্রতি আরো ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সুমীকে চাপ দিলে সুমী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে পাষন্ড স্বামী কবির হোসেন তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অকথ্য গালাগাল ও মারধোর করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে স্বামী কবির তার নিকট পুনরায় যৌতুক দাবি করলে সুপি অপারগতা প্রকাশ করে। এ সময় কবির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধোর শুরু করে। সুমী এ অত্যাচারের প্রতিবাদ করলে স্বামী কবিরের আত্মীয়-স্বজনরা সুমীর ঘরে গিয়ে তাকে মারধোর করে। এক পর্যায়ে শ^াশুরী হালিমা বেগম ও ননদ পারভীন তাকে মাটিতে ফেলে ঘাড় চেপে ধরে। এ সময় স্বামী কবির হোসেন কেচি দিয়ে সুমীর মাথার সম্মুখভাগ থেকে চুল কেটে অর্ধন্যাড়া করে ফেলে। পরে পিছন দিক থেকেও চুল কেটে দেয়। এরপর দেবর হুমায়ুন বেøড দিয়ে সুমীর চোখের ব্রæ চেছে ফেলে। এরপর পর্যায়ক্রমে শ^শুর আবুল হাশেম জলন্ত সিগারেট দিয়ে তার ডান ও বাম হাতে ছ্যাঁকা দিয়ে হাত পা ঝলসে দেয়। এরপর শ^াশুরী হালিমা একটি কাঠের শক্ত লাঠি দিয়ে এলোপাতারি পিটিয়ে সুমীর সারা শরীর তুলোধুনা করে দেয়। এ সময় সুমীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে স্বামী কবির ও তার আত্মীয়স্বজনরা সুমীকে উলঙ্গ অবস্থায় উঠানে ফেলে রাখে। এই ঘটনা দেখে আশেপাশের লোকজন সুমীর পিতামাতাকে খবর দিলে তারা এসে নির্যাতনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, এই বাড়ীতে ঘর সংসার করতে হলে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে হবে। যৌতুক ছাড়া তাকে সংসার করতে দেয়া হবে না। দুই দিনের চিকিৎসায় সামান্য সুস্থ হলে গত সোমবার রাতে সুমী রায়পুরা থানায় গিয়ে স্বামী কবির হোসেন, শ^শুর-শ^াশুরী ও দেবর-ননদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে।তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যৌতুক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ