Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুযোগ না শঙ্কা, চীনের সিল্ক রোড নিয়ে ইউরোপে প্রশ্ন

এএফপি | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রাচীন সিল্ক রোডের পুনরীজ্জীবনের লক্ষ্য নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে যুক্ত করার চীনের বিশাল অবকাঠামো মহাপরিকল্পনা এক সুযোগ না শংকা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইউরাপে। সোমবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর চীন সফরের সময় তিনি এ উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হতে চান কিনা সেদিকে চীন দৃষ্টি রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এশিয়া ও ইউরোপকে সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে যুক্ত করতে চীন ২০১৩ সালে নয়া সিল্ক রোড পরিকল্পনা নামে এক বিশাল উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যেই তা ইউরোপে বিপুল আগ্রহ ও ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ফরাসি থিংকট্যাংক আইরিস-এর চীন বিশেষজ্ঞ বার্থেলিমি কোরমন্ট বলেন, আগামী বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপ‚র্ণ একটি ইস্যু। এমনকি ম্যাক্রোঁর সফরেও আলোচনার প্রধান ইস্যু হবে সিল্ক রোড।
প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এ প্রকল্প হচ্ছে প্রাচীন সিল্ক রোডের আধুনিক পুনরুজ্জীবন। এক সময় এ সিল্ক রোডে দিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সুতা, মশলা ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর বাণিজ্য হত।
চীনে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবোর) নামে পরিচিত এ মহাপরিকল্পনার আওতায় মধ্য এশিয়া ও তার বাইরের অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ঝকঝকে সড়ক ও রেল নেটওয়ার্ক এবং ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত নয়া সমুদ্র পথ চালু হবে। এ উদ্যোগের আওতায় বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ লোকের বসবাস ও বিশে^র এক তৃতীয়াংশ অর্থনীতির ৬৫টি দেশের রাস্তাঘাট, বন্দর ও রেলপথ উন্নয়ন করবে চীন। এএফপি জানায়, ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে সোমবার চীন যাচ্ছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এশিয়ার অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস খ্যাত চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী প্রায় অর্ধ শতাধিক শিল্প কোম্পানির প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চীনের সিল্ক রোড মহাপরিকল্পনা নিয়ে এখন পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। তবে কোরমন্ট বলেন, চীনের নেতারা ম্যাক্রোঁর কাছ থেকে ফ্রান্সের সুস্পষ্ট অবস্থান সম্পর্কে অবগত হতে চান। আর তা এমন এক সময়ে যখন তরুণ এ নেতাকে ইউরোপের উন্নয়নে ‘চালিকাশক্তি’ হিসেবে দেখতে চান তারা। তিনি আরও বলেন, ম্যাক্রোঁ যদি চীনের এ মহাপ্রকল্পকে কিভাবে সামলাবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে ইউরোপের অন্য দেশগুলোও তাকে অনুসরণ করবে।
তবে কোরমন্ট স্বীকার করেন চীনের উচ্চাকাক্সক্ষা বিষয়ে করণীয় নিয়ে ইউরোপ বিভক্ত।
আসন্ন দশকগুলোতে বাণিজ্য বৃদ্ধি থেকে ইউরোপ মহাদেশ ব্যাপক ভাবে লাভবান হতে পারে, কিন্তু কোনো কোনো মহলে সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে যে তা বেইজিংয়ের প্রভাব বিস্তারের ছদ্মবেশ হতে পারে।
ফ্রেঞ্চ ইসস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের চীন বিষয়ক প্রধান অ্যালিস একম্যান বলেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে এ প্রকল্পের ভ‚রাজনৈতিক ফলাফলের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালাচ্ছে।
ইউরোপ মহাদেশের দরিদ্রতম অংশে চীন যে বিশাল অবকাঠামো বিনিয়োগ করতে পারে তার প্রেক্ষিতে এ কর্মসূচি মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে বিপুল ঔৎসুক্য সৃষ্টি করেছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান নভেম্বরে বুদাপেস্টে এক শীর্ষ সম্মেলনে বলেন, কেউ কেউ চীন ও এশিয়ার জাগরণকে হুমকি বলে মনে করেন। এ সম্মেলনে চীন এবয় মধ্য ও পূর্ব ইউরোপর ১৬টি দেশ অংশ নেয়। তিনি বলেন, আমাদের জন্য এ এক বিরাট সুযোগ। বেইজিং এ সম্মেলনে বেলগ্রেড-বুদাপেস্ট রেল পথ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৩ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করে।
ওয়ারশ বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইউরোপের পরিচালক বোগদান গোরালজিক বলেন, এ ব্যাপারে ইউরোপের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। ডানপন্থী সরকারের জোর কম্যুনিস্ট বিরোধী অবস্থানের জন্য পোলান্ড দ্বিধাগ্রস্ত।
পাশ্চাত্যের অন্যরা তাদের উদ্বেগ লুকানোর কম চেষ্টাই করেছে।
সাবেক ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পগ রাসমুসেন জার্মানির জেই সংবাদপত্র এক কলামে বলেন, ইউরোপ যখন জেগে উঠবে তখন খুব দেরি হয়ে যাবে। সে সময় মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের অবকাঠামোর অংশ চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
ন্যাটোর সাবেক প্রধান উল্লেখ করেন যে চীনা সাহায্যের এক বড় গ্রহীতা গ্রীস গত জুনে চীনে মানবাধিকারের নিন্দা করে ইইউ-র এক ঘোষণাকে আটকে দেয়।
বিশে^র অন্যতম বৃহৎ এথেন্সের পিরিয়াস বন্দরটি চীনের নিয়ন্ত্রণে হস্তান্তরের কয়েকমাস পর এ ঘটনা ঘটে।
ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি চীনা বিনিয়োগের পক্ষে, তবে তাদের কিছু রক্ষণশীলতা রয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল আগস্টে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চীনের সামনে আমরা যদি কেনো কৌশল উদ্ভাবন না করি তাহলে সে ইউরোপকে বিভক্ত করে ফেলতে সক্ষম হবে।
ম্যাক্রোঁর অফিসের মতে, তার সফরের সময় ফ্রান্স চীনের সাথে তার সম্পর্কে পুনরায় ভারসাম্য আনতে চায়। ফ্রান্সের লক্ষ্য ৩০ বিলিয়ন ইউরো বাণিজ্য ঘাটতির দিকে যা অন্য কোনো অংশীদারের চেয়ে বেশি।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-ইভস লা ড্রিয়ান বৃহস্পতিবার বলেন, আমাদের চীনা অংশীদাররা ‘উইন উইন’ পরিস্থিতি পছন্দ করবে। কেন নয়? এটা এ শর্তে যে একই পক্ষ দু’বার জিতবে না। তিনি বলেন, ফ্রান্স চীনকে আটকাতে চায় না। কিন্তু যখন বাজার উন্মুক্তকরণের বিষয় তখন পারস্পরিক সুবিধাদানের ভিত্তিতেই আমাদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত।



 

Show all comments
  • মোঃ আনোয়ার আলী ৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১০:৫২ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে এটা ইউরোপের জন্য শঙ্কার কারণ হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীনের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ