Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্রাসেলসে হামলাকারী তিনজন নিহতএখনো পলাতক ২

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রাসেলসে ঠিক কতজন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল তা এখনো পরিস্কার নয়। আগের খবরগুলোতে বলা হয়েছিল যে তিনজন এসব হামলা চালিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে তাদের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচজন। হামলাকারীদের মধ্যে তিনজন বোমা বিস্ফোরণে নিজেরাও নিহত হয়েছে। কিন্তু দুইজন এখনো জীবিত ও পলাতক রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। তাদের ধরার জন্য জোর চেষ্টা চলছে। ব্রাসেলস হামলার সঙ্গে সালাহ আবদেসালামেরও সংশ্লিষ্টতা বয়েছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন যদিও হামলার সময় তিনি পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
প্যারিস হামলার মূল হোতা হিসেবে সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসালাম বেলজিয়াম পুলিশকে সহযোগিতা করছেন না। তিনি চাচ্ছেন যত শিগগির সম্ভব তাকে ফ্রান্সের কাছে প্রত্যার্পন করা হোক। তার আইনজীবি এসভেন ম্যারি বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। আবদেসালামের আইনজীবি বলছেন, তার মক্কেলের পরবর্তী শুনানি হবে ৭ এপ্রিল।
তদন্তকারীরা বলছেন, তারা আবদেসালামকে গত নভেম্বরে প্যারিসে হামলার মূল ব্যক্তি হিসেবেই কেবল বিবেচনা করছেন না তাকে মঙ্গলবারের ব্রামেলসে হামলাকারীদের সঙ্গেও কোন না কোন ভাবে জড়িত বলে মনে করছেন। প্যারিস হামলায় ১৩০ জন নিহত হয় ও অনেকে আহত হয়। আর ব্রাসেলস হামলায় অন্তত ৩১ জন প্রাণ হারায় ও আহতের সংখ্যা ২৭০।
বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ ব্রাসেলসে হামলার ঠিক চারদিন আগে রাজধানীর শহরতলী অনুন্নত এলাকা মোলেনবিকে গুলি বিনিময়ের পর আবদেসালামকে গ্রেফতার করে। বেলজিয়ামে জন্ম নেয়া ফ্রান্সের নাগরিক আবদেসালামকে আহত অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করে।
ফরাসী ও বেলজীয় কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরেই আবদেসালামকে খুঁজছিলেন। তাদের ধারণা নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার রাতে তিনি প্যারিসেই ছিলেন। বেলজিয়ামে হামলার ঠিক চারদিন আগে তাকে গ্রেফতার করা হলেও ব্রাসেলসে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে তার কোন না কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেই গোয়েন্দা মনে করছেন।
প্যারিস থেকে ব্রাসেলস
ফরাসী তদন্তকারীরা বলছেন, তারা মনে করেন, প্যারিসে আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী টিমের অংশ ছিলেন আবদেসালাম। তার ভাই ইব্রাহিম আবদেসালামও ওই গ্রæপের সঙ্গে ছিলেন। প্যারিসের একটি ক্যাফের বাইরে আত্মঘাতি বোমা হামলায় তিনি নিজেও প্রাণ হারান।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, সালেহ আবদেসালাম একটি কালো গাড়িতে করে তিনজন আত্মঘাতি বোমা হামলাকারীকে ফ্রান্সের স্টেডিয়ামের কাছে নামিয়ে দিয়েছিলেন। প্যারিসে হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলো স্টেডিয়ামও। তারা আরও মনে করছেন, তিনি আত্মঘাতি বেল্ট পরিহিত ছিলেন। হামলার পর প্যারিসের রাস্তায় ওই বেল্ট পাওয়া যায়। বেল্টের উপর ঘামের সঙ্গে আবদেসালামের ডিএনএ মিলে যায় বলে তদন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের ধারণা প্যারিস হামলার পর তিনি বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বেলজিয়াম নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন এবং এতদিন তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে বেলজিয়ামে অবস্থান করছিলেন। ব্রাসেলসে হামলার ঠিক চারদিক আগে তাকে ব্রাসেলসের অদূরে এক অনুন্নত এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করার জন্য এক পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাকে গ্রেফতারের প্রতিশোধ হিসেবে ব্রাসেলসে আত্মঘাতি হামলা চালানো হয় বলেও অনেকে মনে করছেন। মঙ্গলবার সন্ত্রাসীরা যখন ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও পাতাল রেল স্টেশনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় তখন আবদেসালাম পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পুলিশের ধারণা, ব্রাসেলস হামলাকারীদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং সম্ভবত গ্রেফতার না হলে এই হামলায় তিনিও অংশ নিতেন। তদন্তকারীরা মনে করেন, পুলিশ আবদেসালামের গোপন আস্তানায় হানা দেয়ার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসী সেল ব্রাসেলস হামলার পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করে।
ব্রাসেলস হামলার সন্দেহভাজন কারা
ব্রাসেলসে আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী খালিদ ও ইব্রাহিম ভ্রাতৃদ্বয়ের একজন রাজধানীর উপকন্ঠে ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন যেখানে আবদেসালাম লুকিয়ে ছিলেন। সেই ভাই নিশ্চিতভাবেই প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলাকারী সেলগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বেলজিয়ামের ফেডারেল প্রসিকিউটর বুধবার জানান, পুলিশ মঙ্গলবার শহরের স্কায়েরবিক এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে ইব্রাহিম আল বাকরাউই’র একটি ল্যাপটপ খুঁজে পায়। ল্যাপটপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। সেখানে বাকরাউই বলছেন,‘তাকে খুব দ্রæত করতে হবে এবং সে আর নিরাপদ বোধ করছেনা। এখানে বেশী কিছু সময় থাকলে তার স্থান হবে জেলখানা।’ এরমধ্য দিয়ে আবদেসালামের কথাই দৃশ্যতঃ উল্লেখ করা হয়েছে বলে বেলজিয়ান তদন্তকারীরা মনে করছেন।
পাঁচ সন্ত্রাসীর মধ্যে তিনজন নিহত এবং বাকি দুইজনের ভাগ্যে কি ঘটেছে জানা যায়নি। ব্রাসেলস হামলায় কতজন অংশ নিয়েছিল সে সম্পর্কে এখনো পরিস্কার কিছু জানা যায়নি। মায়েলবিক পাতাল রেলস্টেশনে কাছে একটি ট্রেনে বোমা হামলায় দুইজন জড়িত ছিল বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে। তার মধ্যে একজনকে ইব্রাহিম আল বাকরাউই বলে সনাক্ত করা হয়েছে যে এই আত্মঘাতি হামলায় নিজেও প্রাণ হারিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার একজন সিনিয়র বেলজীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, আরো একজন এই হামলায় জাড়িত ছিল বলে কর্তপক্ষ মনে করছে। অবশ্য তার পরিচয়, অবস্থান এবং বেচে আছেন না মারা গেছেন তাও জানা যায়নি।
বেলজীয় রাষ্ট্রীয় টিভির খবরে বলা হয়, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় স্টেশনে এই ব্যাক্তির কাছে একটি বড় ব্যাগ ছিল। এটা পরিস্কার নয় যে পাতালরেলে অন্যদের সঙ্গে তিনি নিহত হয়েছেন কি না।
ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলায় দৃশ্যত আরো তিনজন অংশ নেয়। এদের মধ্যে দুইজন খালিদের ভাই ইব্রাহিম আল বাকরাউই এবং আইএসের বোমা নির্মাতা নাজিম লাচরাউই নিহত হন। কর্তৃপক্ষের কাছে আরেক সন্দেহভাজনের ঝাপসা একটি ছবি রয়েছে। তাদের বিশ্বাস এই সন্দেহভাজন এখন পালিয়ে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে মঙ্গলবার ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত পাঁচজন সরাসরি জড়িত ছিল।
ফেডারেল প্রসিকিউটর ফ্রেডেরিক ভ্যান লিউ বলেন, ব্রাসেলসের উপকন্ঠে এক গোপন আস্তানা থেকে ১৫ কেজি বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ সস্পর্কে আবদেসালামের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সে এখন আর বেলজীয় পুলিশকে সহযোগিতা করছেনা বরং তার আইনজীবি বলছেন, আবদেসালাম চাচ্ছেন যে তাকে ফ্রান্সের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হস্তান্তর করা হোক।
তদন্তকারীরা বলছেন, যে কোন ক্লু, আভাস, বা প্রত্যক্ষদর্শী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের মাটিতে পরবর্তী সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানোর জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সিএনএন’র গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বব বায়ের মনে করেন, লোকজনের আতংকিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত যত যুদ্ধাস্ত্র উদ্ধার করেছে সম্ভবত তার চেয়ে আরও বেশী এখনো উদ্ধার হয়নি। তিনি বলেন, ব্রিটেন বা ফ্রান্স পরবর্তী হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বিস্ফোরকের পরিমান ও জিহাদীদের সংখ্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতংক রয়েছে এবং তাদের নেটওয়ার্ক কত বড় যা প্যারিসের সঙ্গে যুক্ত এবং এখন ব্রাসেলসকে যুক্ত করলো এসব নিয়ে মানুষের ভয়-আতংক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কের শিকড় উদঘাটন করতে বেশ সময় লাগতে পারে।
বায়ের বলেন, ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষসমুহ তাদের বিভিন্ন সমাজের ভেতরে কিভাবে এই নেটওয়ার্কের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটছে সে সম্পর্কে বিশদ জানতে বড্ড দেরী করে ফেলেছে। তিনি বলেন, উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভুত এসব সমাজ নিজেরা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। এই কারণে ইউরোপীয় সার্ভিসগুলোর তাদের ভেতরে প্রবেশ করা খুব কঠিন। অনেক বছর ধরে এসব সমাজ ইউরোপে অবহেলিত-বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
প্যারিস সিরিজ আত্মঘাতি হামলার হোতা ও একমাত্র জীবিত আবদেসালাম গোটা ইউরোপে চারমাস ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড হলেও সে দিব্যি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের খুব কাছের শহরতলীতে গোপনে অবস্থান করছিল। সেখানকার লোকজন তাকে কখনো বিপদজন মনে করনি। আরো যা উদ্বেগজনক হতে পারে তাহলে তারমতো সেখানে আরো তরুন-যুবক থাকতে পারে যারা ইউরোপীয়দের প্রতি সহানুভুতিশীল নয় বরং আইএসের প্রতি অনুগত। আইএস সিরিয়া ও ইরাকে ভ’খন্ড দখল করে তাদের রাজত্ব কায়েম করেছে এবং প্যারিস ও ব্রাসেলসসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর দায়িত্ব তারা স্বীকার করেছে। সূত্র : সিএনএন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রাসেলসে হামলাকারী তিনজন নিহতএখনো পলাতক ২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ